1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

আমার ছোট দিদি

অরুপ গোস্বামী
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৪
দ্বিতীয় পর্ব:
(আজকে ওর পরপারে চলে যাওয়ার ১১ দিন।আজ সন্তানেরা ওর আত্মার শান্তি কামনায় শ্রাদ্ধ করছেএ,আমি এ লেখার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি)
আসলেই ভাইবোনের সম্পর্ক একটু আলাদা ধরনের। স্বামী স্ত্রী, বাবা মা,কিংবা সন্তান সন্ততি তাদের সম্পর্ক এক ধরনের, আর ভাইবোনের সম্পর্কটা আলাদা। আমাদেরটা আরও আলাদা। আমরা অনেক ছোট কাল থেকেই ভিন্ন স্থানে থাকি।কিন্তু ভৌগোলিক দূরত্ব কোনো বাধা নয়,হতে পারে না,এ যুগে তো নয়ই।
কিন্তু আমি আজ যে সময়ের কথা লিখছি তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এতো আধুনিক ও কার্যকরী ছিল না।
সেই ১৯৮৬ সালে দিদিকে ওর সংসারে প্রথম দেখে এলাম। তখন আমার ওকালতির লাইসেন্স হয়ে গেছে, কিন্তু ওকালতি করতে ইচ্ছে করে না।তখন দিদি চিঠি লিখে আমাকে ডাকতো। বলতো,বাবা মা তো আসতে পারবে না,দাদারও চাকরি সংসার, তুই আয়।ওর ডাকে সাড়া দিতেই ১৯৮৭ সালের অক্টোবর মাসের (কালিপূজার দিন) রাজশাহী থেকে রওয়ানা দিয়ে পরদিন বেনাপোল বর্ডার পার হয়ে কোলকাতায় না থেমে সরাসরি অন্ডাল চলে যাই।অন্ডাল গিয়ে যখন পৌছাই তখন রাত আট ন’টা হয়ে গেছে। সবাই কালি প্রতিমা দেখতে বেরিয়ে গেছে।কেবল আমার দিদি দরজা খুলে বসে আছে। যেন আমার অপেক্ষায়, কিন্তু আমি তো কাউকে জানিয়ে যাইনি। ভিসা পেয়েই রাজশাহী থেকে সরাসরি ভারত চলে যাই বাড়িতে একটা চিঠি লিখে।তারপরও দিদির মন ঠিকই টের পেয়েছে, ও অন্যদের সাথে বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে আছে। আমাকে পেয়েই জড়িয়ে ধরে কান্না।পরদিন ভাইফোঁটা। বিয়ের পর থেকে নিজের ভাইকে ফোঁটা দিতে না পারার যে আফসোস ওর ছিল সেটা মেটাতেই আমার আসা।তখন আমার বেকার জীবন, কোনো কাজ নেই। মনে হয় দুমাস মতো ছিলাম। তখন ওকে আরও ভালো করে চিনেছি। দেখেছি কিভাবে সকলের সাথে এক হয়ে থাকতে হয়।শুধু আত্মীয় পরিজন নয়,প্রতিবেশীরাও ওর প্রতি অনুরক্ত। ঠিক যেন ৬১ গড়পার লেন সিনেমার বরুণাদি।আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সকলের নয়নের মনি ছিল আমার দিদি স্বপ্না ভট্টাচার্য।
সেবার যতদিন ছিলাম ওর কাছেই ছিলাম। দু’একদিনের জন্য কোথাও গেলেও ওর জন্যই দ্রুত ফিরে আসতে হতো। কতো যে স্মৃতি আছে, সব লিখে শেষ করা যাবে না।ফেরার সময় হতো বিরাট সমস্যা। আগের দিন থেকে সে কথা বলতে পারতো না।আসলে বাবা মা ছেড়ে এতটা দূরে ও থাকতো, আবার কবে দেখা হবে, আদৌ হবে কীনা এসব চিন্তা করেই মনে হয় ও চুপ হয়ে যেতো।
সেবার ফিরে এসে ওকালতি শুরু করতে হয়,এরপর চাকরি। আর তো মন চাইলেই যাওয়া যায় না,অনুমতি লাগে।১৯৮৯ সালে চাকরিতে যোগ দিয়ে ১৯৯১ সালে স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম যাবার চেষ্টা করি। কিন্তু দেরিতে অনুমতি আসায় যেতে পারিনি। তবে পরের বছর ডিসেম্বরের ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম দিদির বাড়ি যাই।মনে আছে সেদিন ছিল ডিসেম্বরের ৬ তারিখ। সেদিন অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনা ঘটে। আমরা সেই যে গিয়ে দিদির ঘরে ঢুকলাম, সেখান থেকেই ফিরে আসা।ভারত বন্ধের কারণে ঘর থেকে বেরুতেই পারিনি। এতে ওর সান্নিধ্যে কয়েকটি দিন অনেক আনন্দে কেটে যায়।কতরকমের খাবার রান্না করতে পারতো। দইমাছ,ফুলকপির পোলাও এমন অনেক নতুন নতুন পদ রান্না করতো। আর ছুটির দিনের স্পেশাল খাবার তো ছিলই।
এরপরের বছর দিদিই বাংলাদেশ এসেছিলো জামাইবাবু সহ।এর পরের বছরও এসেছিল। ১৯৯৫ সালের ১ লা জানুয়ারি ও ভারত ফিরে যায়।সে বছরের শেষে বাবার মৃত্যু হয়,১৯৯৮ সালে মায়ের মৃত্যু হয়।বাবা মায়ের অবর্তমানে ও আসতে চাইতো না।আমাদেরও যাওয়া হয়নি। এরপর দীর্ঘ বিরতি।এগারো বছর পরে ২০০৬ সালে আমরা ভারত যাই।এর মাঝে ২০০১ সালের শেষ দিকে দিদি প্রাণঘাতী এক দূর্ঘটনায় পড়েও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়।সেবার এতো বড়ো দূর্ঘটনার পরে বেঁচে গেলেও এবার অকারণে ছেলে মেয়ে সহ সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো।( চলবে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews