1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

শিক্ষিত হওয়া কি অপরাধ?

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৪
একটি লিটল ম্যাগে আমার একটি উপন্যাস প্রকাশিত হলে আমাদের উপজেলার মৌলবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। একজন জানালেন, বিষয়টি নিয়ে মসজিদে আলোচনা করে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। আমি সাক্ষাৎ করলাম একজন ধর্মীগোষ্ঠীর নেতার সাথে। তাকে বললাম, পড়েছেন আমার উপন্যাসটি? তিনি পড়েননি! তাকে কপি দিয়ে উপন্যাসের বিষয়বস্তু তুলে ধরলাম। বিষয়বস্তু হল, মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে আমার এক বন্ধুর বলাৎকার হওয়া, সিফিলিসে আক্রান্ত হওয়া এবং তার পরিণতিতে তার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা। ওনি পড়ে পরে আমাকে বললেন, এটাতো ধর্মবিরোধী না! ঠিকাছে আপনি নিশ্চিত থাকুন কিছু হবে না। আমি দেখবো।’ আমরা দেখেছি হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিৎ রায়ের বই তার খুনিরা পড়েনি। তারা না পড়েই অন্যের নির্দেশে খুন করতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
গত শুক্রবার একজন জানালেন, তাদের মসজিদে খুৎবার আগের বয়ানে ইমাম সাহেব নাস্তিক ও শিক্ষিত সমাজের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। কোথায় যেনো ওয়াজ করতে গিয়ে, কোন শিক্ষিত ব্যক্তির প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তারই ঝাল ঝাড়লেন এবং মুছুল্লিদের বিভ্রান্ত করলেন। তার বক্তব্যের মূল কথা হল, ‘কথিত সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এরা নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে এবং আলেমদের হেয়-প্রতিপন্ন করছে। ইহুদী-নাসারাদের তৈরি সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে দ্বীনি শিক্ষার দিকে আসতে হবে। এটাই মুসলিমদের মুক্তি দিবে।’
এটা সত্য যে, যারা উচ্চ শিক্ষিত হয় তারা সত্যটা সহজেই ধরতে পারে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি কথাবার্তা তারা ধরে ফেলে। ধর্মগ্রন্থে থাকা ভুল-ভাল নিয়ে তারা প্রশ্ন করে আলেম সমাজকে বিভ্রান্ত করে দেয়। এটা যে কেবল উচ্চ শিক্ষিতরাই করে তা নয়। আমরা সচেতন মানুষকেই এমন প্রশ্ন করতে দেখি। রাজনীতিবিদ জসীমউদ্দিন মন্ডল অল্প শিক্ষিত মানুষ ছিলেন। তিনি একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজ শুনছিলেন। সাঈদী বলছিলেন, আকাশের মালিক আল্লাহ, বাতাসের মালিক আল্লাহ… । জসীমউদ্দিন মন্ডল একটি চিরকুট পাঠালেন সাঈদীর কাছে, ‘হুজুর জমিনের মালিক কে?’ চিরকুট হাতে নিয়েই সাঈদী বললেন, ‘মাহফিলে শয়তান ঢুকেছে, আসতাগফিরুল্লাহ পড়েন।’ বহু শিক্ষিত মানুষই রয়েছেন, আমাদের মানহীন শিক্ষা তাদের বিকশিত করতে পারেনি। কিন্তু জসীমউদ্দিন মন্ডল জীবনভর এতো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন যে, তা তাঁকে বিস্তরই বিকশিত করেছিল। মানুষ সচেতন হলে তাঁকে শিকল দিয়েও অন্ধত্বে আটকে রাখতে কেউ পারবে না।
তাহলে শিক্ষিত মানুষের সমস্যা কোথায়? কেন শিক্ষিত মানুষের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে? কারণ একটাই যে, শিক্ষিত মানুষ অধিকতর সচেতন এবং তাদের সচেতন হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এ কারণেই ধর্মব্যবসায়ীরা চায় মানুষ যাতে অশিক্ষিত থাকে একই সাথে অসচেতন থাকে। তারা চায় মানুষ কেবল মাত্র এমন শিক্ষাই শিখুক যাতে তারা সচেতন হতে না পারে এবং তাদের যেন মেধার বিকাশ না ঘটে। এ কারণেই তারা চায় না কওমি মাদ্রাসায় সরকার খবরদারি করুক। সারা দেশে এমন দাবি উঠুক— কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সরকারি করণের জন্য আন্দোলন করছে। কিন্তু তারা এটা করছে না কেন? ওই যে, তাতে সরকার কারিকুলাম বদলে দিবে, তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়া চলে আসবে এবং তাতে মানুষ সচেতন হবে ও মেধার বিকাশ হবে। ফলে মোটের উপর শিক্ষিত মানুষই সমস্যা হয়ে উঠছে তাদের কাছে। মুসলিমরা শিক্ষিত হোক, সচেতন হোক, জ্ঞানের রাজত্বে উজ্জ্বল হোক সেটা তারা চায় না। চায় না বলেই মুসলিম স্বর্ণযুগের জ্ঞানিদের দাবড়িয়ে বেড়িয়েছে। আজ ইবনে সিনার নাম নিয়ে তারা গৌরব বোধ করে, তার নামে প্রতিষ্ঠান বানায়। অথচ তারা ইবনে সিনাকে হত্যার
জন্য কম চেষ্টা করেনি। নজরুলও ছিলেন বিকশিত মেধার মানুষ। তাঁকেও কম নাজেহাল করা হয়নি। আজ কাজী নজরুল ইসলামের জন্য গর্ববোধ করে কিন্তু কোন মেধাবী মানুষকে সহ্য করতে চায় না। শিক্ষিত মুসলিমদের দিকে তারা আঙুল তুলে, মেধার বিকাশ বন্ধ করে দিতে চায়। আমরা সবই বুঝি, এটাও বুঝি যে, এসব ধান্ধবাজদের
ব্যবসাও থাকবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews