1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন

‘কাগজ জালিয়াতি’ করে পারিবারিক মন্দিরে সরকারি বরাদ্দ এনে দখলের চেষ্টা

নরসিংদী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রায়পুরা পৌরসভার তাত্তাকান্দা এলাকায় পারিবারিক জমিতে স্থাপিত শ্রী শ্রী পাগলনাথ বাবা আশ্রম মন্দিরে গোপনে কমিটি করে এবং কাগজপত্র জালিয়াতি করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ এনে মন্দিরের জায়গা জবরদখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরন শংকর পাল চৌধুরী, উৎপল পাল চৌধুরী, সুমন পাল চৌধুরী এবং সজল পাল চৌধুরীর পারিবারিক শ্মশানের জায়গায় পাগলনাথ নামীয় একজন মহাপুরুষ সমাধিস্থ হওয়ায় সেখানে তাদের পূর্বপুরুষ রাজকুমার পাল চৌধুরী পাগলনাথ বাবার নামে স্বল্প পরিসরে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন যা শ্ৰী শ্ৰী পাগলনাথ বাবার মন্দির হিসেবে পরিচিত। প্রায় শতাব্দীকাল ধরে মন্দিরে হিন্দুধর্ম রীতিনীতি অনুযায়ী পূজা-অর্চনা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান তাদের পরিবারের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি একই এলাকার সঞ্জয় পাল গোপনে শ্ৰী শ্ৰী পাগলনাথ বাবার মন্দিরের নিজেকে সভাপতি করে অতি গোপনে একটি কমিটি করেন যা মন্দিরের জায়গায় মালিকরা কোন কিছুই জানেন না। আর এই কমিটির বৈধতা দেন রায়পুরা পৌরসভার মেয়র। কমিটি করেই সেই কমিটির মূলে এবং মন্দিরের জমি জাল জালিয়াতি করে গত ৮ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ৯ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৬৫ টাকার অনুদান এনে পারিবারিক মন্দিরকে সরকারি দাবি করে কাজ শুরু করে মন্দিরের জমি জবরদখল করার চেষ্টা করেন।

জানা গেছে, তফসিলভুক্ত সম্পত্তির দাগ ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ দাগের মাঝখানে ০৫ শতাংশ ভূমির উপর এই  পারিবারিক শ্মশান রয়েছে যার মাঝে শ্রী শ্রী পাগলনাথ বাবা আশ্রম মন্দিরটি অবস্থিত। আর এই জমির কাগজপত্র ঘেটে দেখা গেছে, ৩৪৫ শতাংশ পারিপারিক জমির মাঝে যে মন্দির রয়েছে তা রমনী মহোন পাল চৌধুরী এবং রাজ কুমার পাল চৌধুরীর নামে এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই নামেই জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা হয়েছে।  রমনী মহোন পাল চৌধুরী এবং রাজ কুমার পাল চৌধুরীর ওয়ারিশ সনদ পত্রেও কিরন পাল চৌধুরী, উৎপল পাল চৌধুরী, সুমন পাল চৌধুরী এবং সজল পাল চৌধুরী সহ নয় জনের নাম পাওয়া গেছে।

পারিবারিক মন্দির জবরদখলের চেষ্টার খবর পেয়ে মন্দিরের ওয়ারিশগণ ১০ আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগের পর বিষয়টি প্রতিকার না পেলে এবং গত ৮ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ৯ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৬৫ টাকার অনুদান বরাদ্দ হলে বাধ্য হয়ে বিজ্ঞ  অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নরসিংদী’তে মন্দির কমিটির সভাপতি সঞ্জয় পাল এবং সাধারণ অরুন দাসের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার কপি সংযুক্ত করে এরপর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং একই সাথে দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দায়ের করেন।

বিজ্ঞ  অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নরসিংদী’তে মামলা দায়ের করার পর আদালত চলমান কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং অবৈধভাবে প্রবেশ করে জোরপূর্বক দখল করতে পারবে না মর্মে বিবাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর আদেশ প্রদান করেন। একই সঙ্গে রায়পুরা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আদেশ দেন। সেই সাতজে উপজেলা ভূমি অফিসকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষয়টি তদন্ত করেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো: মনিরুল ইসলাম। ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে তিনি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে এস.এ.রেকর্ড পর্যালোচনায় তিনি উল্লেখ করেন, উপজেলা ভূমি অফিসে রক্ষিত এস.এ রেকর্ড দৃষ্টে দেখা যায় যে, নালিশী ভূমি এস.এ.২৭২ নং খতিয়ানে এস.এ ৫৭৯ নং দাগে ১.০৬০০ একর ভূমি  রমনী মোহন পাল চৌধুরী পাল পিং- রাজ কুমার পাল, সাং নিজ নামে রেকর্ড ভুক্ত প্রকাশিত হয়েছে ।আর.এস রেকর্ডপর্যালোচনায় তিনি উল্লেখ করেন, উপজেলা ভূমি অফিসে রক্ষিত আর.এস রেকর্ড দৃষ্টে দেখা যায় যে, নালিশী ভূমি আর.এস. ১৩৬৪ নং খতিয়ানে আর.এস ২০২৩ ও ২০২৪ নং দাগে ০.০৫০০ একর ভূমি রমনী মোহন পাল চৌধুরী পিং- রাজ কুমরার পাল চৌধুরী ও অন্যান্য নামে রেকর্ড ভুক্ত প্রকাশিত হয়েছে।

সার্ভেয়ার বাদীর পৈত্রিক সম্পত্তি রেকর্ড রয়েছে উল্লেখ করলেও বাদী পক্ষের কাগজ পত্রে “বাদী পক্ষ নালিশী ভূমি পৈত্রিক সূত্রে দাবী করেন” উল্লেখ করেন এবং  বিবাদী পক্ষের কাগজপত্রে বিবাদী পক্ষ নালিশী ভূমি পাগল নাথ আশ্রম হিসাবে কমিটির সভায় তাদেরকে দিয়েছে বলে দাবী করেন” উল্লেখ করেন। তবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করতে পারেননি। রেক

জমির ওয়ারিশগণ জানান, সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলেও সার্ভেয়ার অর্থ নিয়ে আমরা পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করেছি উল্লেখ করেন। অথচ এটা দাবি করার বিষয় না এটা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্ত্বি যা সার্ভেয়ারের প্রতিবেদনের শুরুতেই উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে বিবাদী পক্ষ নালিশী ভূমি পাগল নাথ আশ্রম হিসাবে কমিটির সভায় তাদেরকে দিয়েছে বলে দাবী করেন” উল্লেখ করেন। বাস্তবে মৌখিক ভাবে কোন সম্পত্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। আর এই কমিটি যে করেছে তা আমাদেরকে জানানো হয়নি।

জানতে চাইলে সার্ভেয়ার মো: মনিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, চলমান কাজে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না বিবাদী পক্ষ। পুলিশ আসলে মন্দিরের কাজ বন্ধ থাকে পুলিশ চলে গেলে আবার মন্দিরের কাজ শুরু হয়। এভাবেই চোর পুলিশ খেলা চলছে মন্দিরের কাজ নিয়ে।

ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক মন্দিরে কিভাবে কমিটি করেন এবং মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ আনেন জানতে চেয়ে মন্দির কমিটির সভাপতি ও মামলার বিবাদী সঞ্জয় পালের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি সব শুনে ব্যস্ত আছেন বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক মন্দিরে  মালিকপক্ষের অগোচরে করা  কমিটির অনুমোদন কিভাবে দেন জানতে চেয়ে রায়পুরা পৌরসভার মেয়র মোঃ জামাল মোল্লা এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রায়পুরা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (তদন্ত) মুঠোফোনেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে চায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, মন্দিরের যে কোন অনুদান পেতে হলে কমিটির কাগজপত্র তো লাগবেই জমির কাগজপত্র প্রয়োজন। জমির কাগজপত্র ছাড়া কোন অনুদান বরাদ্দ হয়না। এক্ষেত্রে কি কাগজপত্র সাব মিট করেছেন তা বলতে পারব না।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন)  মো. সাখাওয়াৎ হোসেন জানান, সঠিক কাগজপত্র যাচাই বাছাই করেই অনুদান বরাদ্দ দেওয়ার কথা। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় হয়ে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews