ত্রিপুরার ভৌগলিক অবস্থান বাংলাদেশের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে গাঁথা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৫টি রাজ্যের সীমানা রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের যেখানে এক দিক থেকে সীমানা রয়েছে, সেখানে তিন দিকেরও বেশি দিক থেকে ত্রিপুরাকে আলিঙ্গন করে রয়েছে বাংলাদেশ। ত্রিপুরা রাজ্যের ৯১৭ কিলোমিটার সীমান্তের ৮৩৯ কিলোমিটারেই বাংলাদেশ রয়েছে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মানুষ রাজনৈতিক কারণে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন, বিদেশি বলে চিহ্নিত। কিন্ত নদীর জল মাঝখানে কাটলে যেমন আলাদা হয়না, তেমনি উভয় প্রান্তের মানুষকে কাঁটাতার দিয়ে আলাদা করা সম্ভব নয়।’
আলোচনা সভায় আগরতলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রমাকান্ত দে বলেন, ‘ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মার সম্পর্ক।
আমরা এক ভাষায় কথা বলি, আমাদের হাসি, কথা, দুঃখ, বেদনা, চালচলন, আচার ব্যবহার, জীবনধারা সবই এক। বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের কোনো গড়মিল নেই, ন্যুনতম ভিন্নতা নেই।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, ‘ত্রিপুরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীর্থস্থান। এই রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অবদান রেখেছেন।আজকের দিনে তাদের সকলকে গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে ত্রিপুরার সর্বস্তরের মানুষ পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। তাদের সকলকে আজকের দিনে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে ভারতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ত্রিপুরার অবদানও ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরার সর্বস্তরের মানুষ এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃজন যে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন তার গভীরতা এখনও আমাদের জানা হয়ে ওঠেনি। এই জানার প্রয়াস মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিকতা মেলে ধরে আমাদের সামনে। ত্রিপুরার সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়।’
আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘রামগড়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণের ব্যাপারে যারা উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা। অম্পিনগরে ২ মাস গেরিলা প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ৪০ জনের একটি বাহিনীর অধিনায়ক করে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি অসংখ্য পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে গেরিলা আক্রমণ করেন।’
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শিল্পী হাশেম খান, জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক লিয়াঁজো উপ-কমিটি আহ্বায়ক জুলহাস আলম এবং আগরতলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদ আলী প্রমুখ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট