প্রতিষ্ঠান। দখল করা বনভূমি উদ্ধার অভিযানেও তেমন সফলতা আসেনি। তবে অবৈধ দখলমুক্ত করার পাশাপাশি বন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
এই অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বন দিবস।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে বন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট পরিচালিত প্ল্যাটফরম গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে ৫৩ হাজার একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে। ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় চার লাখ ৯৪ হাজার ২১১ একর।
সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। শিল্পপতি থেকে শুরু করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বনভূমি দখলবাজিতে যুক্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের সুন্দরবনের মতোই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় রক্ষাকবচ কক্সবাজারের প্যারাবন। কক্সবাজার জেলার উপকূলজুড়ে একসময় সুন্দর বন থাকলেও চিংড়ি চাষের দৌরাত্ম্যে তা অনেক আগেই ধ্বংস হয়েছে। একইভাবে চলছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন উজাড়ের নানা আয়োজন। অবাধে গাছ কাটা, চিংড়ির ঘের দেওয়া এবং চারপাশে অসংখ্য শিল্প-কারখানা নির্মাণ এই বনকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নির্বিচার বৃক্ষনিধনের ফলে সুন্দরবনের আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার থেকে এখন চার হাজার বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে।
পরিবেশের হুমকি জেনেও এক লাখ ৬০ হাজার একর বনভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গাজীপুর ও কক্সবাজারে দুটি সাফারি পার্ক থাকা সত্ত্বেও মৌলভীবাজারের জুড়ীতে সংরক্ষিত বন লাঠিটিলায় আরেকটি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমন পদক্ষেপ বনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে পরিবেশবাদীরা মনে করছেন।
দেশের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত বৃহৎ বনভূমি এলাকা টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনের তিন হাজার একর কোর এলাকাকে ২০০০ সালে ৬১ হাজার রানিং ফুট দেয়াল দিয়ে ঘিরে বিতর্কিত ‘ইকোট্যুরিজম প্রকল্প’ শুরু হয়। এ ছাড়া মধুপুরের ৪৫ হাজার একর ও গাজীপুরে ভাওয়ালের প্রায় ১২ হাজার একর বনভূমি দখলে রেখেছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীরা।
এই অবস্থায় বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র সদস্যসচিব শরীফ জামিল। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের বন ও পরিবেশ হুমকিতে রয়েছে। তাই অবৈধ দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধারের পাশাপাশি নতুন নতুন বনভূমি সৃজন করতে হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধু সংরক্ষণ নয়, বনের এলাকা কিভাবে বাড়ানো যায় সেটাও আমাদের চিন্তায় আছে। দখল হওয়া আড়াই লাখ একর বনভূমির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিটাও উদ্ধার করা হবে। পরিবেশ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। উন্নয়নের কারণে যেন পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’