প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র ও তারকামণ্ডলী নিয়ে খুবই উদ্ভট কথাবার্তা লেখা রয়েছে। ৪৩০০টি ধর্মের আরো অধিক সংখ্যক গ্রন্থর অধিকাংশই আমার পড়া হয়নি। তবুও যতগুলো পড়েছি বা যতটুকু জেনেছি তাতে এটা বলতে পারি, গ্রন্থগুলোতে সূর্য নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু নেই। একসময় মানুষ যা কল্পনা করতে পারতো ততটুকুই আছে। মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট পড়েও আমরা দেখেছি স্বর্গ, নরক, স্রষ্টা, আদম, ইভ ও শয়তানকে নিয়ে কি প্রাণবন্ত আলোচনা। পার্থক্য হল, প্যারাডাইস লস্ট আমরা পড়ি একে কাল্পনিক গল্প ধরেই। কিন্তু ধর্মগ্রন্থ হল স্রষ্টার বক্তব্য। এখানে কোনরূপ ভুল থাকার কথা নয়। ৫ হাজারের বেশি ধর্মগ্রন্থে সূর্য ও পৃথিবী নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা রয়েছে। তাতে আমরা বুঝতে পারি, বিষয়গুলো আজকের বিজ্ঞানের আলোকে সত্য নয়। অবশ্য প্রত্যেক ধর্মবিশ্বাসীরাই কেবল নিজের ধর্মটিকে সত্য বলে মানেন, এবং অন্য ধর্মকে তারা ভুল বলে জানেন। আমরা দেখি, কোন গ্রন্থে রয়েছে— মাটির নিচে পাতাল রয়েছে, যেখানে আছে নরক! নরকে দানব রয়েছে। কোন গ্রন্থে আছে, পৃথিবী ভাসমান রয়েছে জলে। কোনটিতে পৃথিবী রয়েছে গরুর শিং এর উপর। এক্ষেত্রে সূর্য খুবই ভাগ্যবান। অনেক প্রাচীন গ্রন্থেই সূর্যকে দেবতা হিসেবেই দেখা হয়েছে। সুদীর্ঘকাল ওইসব ধর্মের মানুষ সূর্যকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা-আরাধনা করেছে। ভারত জুড়েই একসময় ছিল সূর্যদেবের মন্দির! হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাগুলোতেও দেখি সূর্য দেবতার প্রতিরূপ। একসময় মানুষ বুঝতে পারে সূর্য দেবতা নয়, তার নিজের কোন ক্ষমতা নেই। খ্রিষ্টপরবর্তী কালের ধর্মে আমরা সূর্যকে অগ্নিগোলক হিসেবেই দেখি। কিন্তু সূর্য পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরে প্রান্তে পরিভ্রমণ করে এমনটাই লেখা রয়েছে। কোথাও লেখা রয়েছে, দেবতারা একে টেনে আকাশের এক প্রান্ত থেকে আরে প্রান্তে নিয়ে যায়। সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে রাহু ও কেতুর গল্প আমরা জানি। সূর্যাস্ত ও সূর্যদয় নিয়েও বিস্তর বর্ণনা আছে। পবিত্র কোরআনের একটি সুরায় এ নিয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে।
এ সূরার নাম সূরা আল-কাহাফা। এমন নামকরণের কারণ, সূরার মধ্যে কাহাফ বা গুহাবাসীদের আলোচনা স্থান পেয়েছে। আয়াত সংখ্যা ১১০টি ৷ এরমধ্যে আমরা ৮৩ থেকে ৯৮ পর্যন্ত ১৬টি আয়াতের বাংলা অনুবাদ আমরা দেখতে পারি যেখানে সূর্য ও যুল-কারনাইনকে নিয়ে বলা হয়েছে—
৮৩- আর তারা আপনাকে যুল-কারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। বলুন, ‘অচিরেই আমি তোমাদের কাছে তার বিষয় বর্ণনা করব।
৮৪- আমরা তো তাকে যমীনে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম।
৮৫- অতঃপর সে এক পথ অবলম্বন করল।
৮৬- চলতে চলতে সে যখন সূর্যের অস্ত গমন স্থানে পৌছল তখন সে সূর্যকে এক পংকিল জলাশয়ে অস্তগমন করতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল। আমরা বললাম, ‘হে যুল-কারনাইন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা এদের ব্যাপার সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার।
৮৭- সে বলল, ‘যে কেউ যুলুম করবে অচিরেই আমরা তাকে শাস্তি দেব, অতঃপর তাকে তার রবের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে তখন তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।
৮৮- তবে যে ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তার জন্য প্রতিদানস্বরূপ আছে কল্যাণ এবং তার প্রতি ব্যবহারে আমরা নরম কথা বলবো।
৮৯-তারপর সে এক উপায় অবলম্বন করল,
৯০- চলতে চলতে যখন সে সূর্যদয়ের স্থলে পৌছল তখন সে দেখল সেটা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হচ্ছে যাদের জন্য সূর্যতাপ হতে কোনো অন্তরাল আমরা সৃষ্টি করিনি;
৯১- প্রকৃত ঘটনা এটাই, আর তার কাছে যে বৃত্তান্ত ছিল তা আমরা সম্যক অবহিত আছি।
৯২- তারপর সে আরেক মাধ্যম অবলম্বন করল,
৯৩- চলতে চলতে সে যখন দুই পর্বত-প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল, যারা তার কথা তেমন বুঝতে পারছিল না।
৯৪- তারা বলল, ‘হে যুল-কারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ তো যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করছে। তাই আমরা কি আপনাকে খরচ দেব যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবেন?
৯৫- সে বলল, ‘আমার রব আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তা-ই উৎকৃষ্ট। কাজেই তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব।
৯৬- ‘তোমরা আমার কাছে লোহার পাতসমূহ নিয়ে আস, ‘অবশেষে মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্তূপ দুই পর্বতের সমান হল তখন সে বলল, ‘তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক।’ অতঃপর যখন সেটা আগুনে পরিণত হল, তখন সে বলল, ‘তোমরা আমার কাছে গলিত তামা নিয়ে আস, আমি তা ঢেলে দেই এর উপর।
৯৭- অতঃপর তারা সেটা অতিক্রম করলে পারল না এবং সেটা ভেদও করতে পারল না।
৯৮- সে বলল, ‘এটা আমার রবের অনুগ্রহ। অতঃপর যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতি সময় আসবে তখন তিনি সেটা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন। আর আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য।