রোমান সম্রাটের দরকার ছিল দাস বিদ্রোহ দমনের৷ সভাসদগণ প্রস্তাব করলেন প্লেটোর মত প্রয়োগের৷ যদি দাসদের পরকালের লোভ দেখানো যায় আর সে জন্য আরাধনা করানো যায় তবেই দাসরা শাসকদের বিত্তবৈভবের দিকে না তাকিয়ে তাকাবে স্বর্গের দিকে৷ প্রথমে প্রচলিত প্যাগান কয়েকজন দেবদেবি দিয়েই পরীক্ষা করা হল৷ কিন্তু অনেকেরই ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবী ছিল৷ তাতে লাভ হল না৷ তখন মৃতপ্রায় অলৌকিক খ্রিস্টধর্মকেই সামনে আনা হল৷ চার্চ তৈরি করে, পুরোহিত নিয়োগ দেয়া হল৷ আইন করা হল যারা এ ধর্ম পালন করবে তাদের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে আর এ ধর্ম গ্রহণ না করলে শাস্তি দেয়া হবে৷ হাজার হাজার দাসকে চাপকিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যেত না অথচ তাদের খ্রিস্টধর্ম দিয়ে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা গেল৷ পৃথিবী থেকে জ্ঞানচর্চা বিলুপ্ত হল, খৃষ্টধর্ম বিরোধী সব চিন্তা থামিয়ে দেয়া হল! বিজ্ঞান-দর্শন স্থবির হয়ে গেল৷ চারদিকে শুধু খ্রিস্টধর্মের উন্মাদনা৷ শুরু হল হাজার বছরের অন্ধকার যুগ৷ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মানুষ রেনেসাঁর ছোঁয়ায় সভ্য হতে থাকলো৷ তাদের দাস-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ মুক্ত হতে শুরু করল৷ পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ এখনো বুঁদ হয়ে আছে অন্ধ বিশ্বাসে৷ লোভ দেখিয়ে এখনো শৃঙ্খল ভাঙ্গতে দিচ্ছে না৷ আমরা বলছি, অলৌকিক লোভ হল অসহায় মানুষের বাঁচার সম্বল৷ তবে আমি বুঝি আপনি সেই সম্রাট কনস্টানটাইনের মতোই আমাকে বিদ্রোহ করতে দিতে চাচ্ছেন না৷ আমার প্রতিবাদ করার কণ্ঠ লোভ দেখিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন৷ এমন সম্বল আমার কি কাজে লাগে? আমি যদি প্রতিবাদ করতে পারতাম তবে মামুনুল-আনভীররা প্রতারণা করার সাহস পেত না৷ আমি আঙুল তুলতে পারলে এসআলম গ্রুপ শ্রমিকদের গুলি করার সাহস পেত না৷ ফারাও রাজারা বলতো কঠোর পরিশ্রম করো তাতে পরকালে আরামে থাকবা, পোলাও-পায়েস খাইবা! ইহকালের সব আরাম আয়েস মালিকের-ক্ষমতাশালীর আর শ্রমিকের জন্য সব থাকবে পরকালে! তবুও বলা হবে, লোভের সম্বল নিয়াতো মিয়া বাইচ্চা আছো! বাইচ্চা থাকাই বড় কথা! স্রষ্টা তোমাকে যতটুকু দিয়েছে তা নিয়েই খুশি থাক৷ সম্পদ কম থাকলে পরকালে হিসাবও কম!
বসুন্ধরার মালিক এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে৷ সাপোর্ট দিতে থাকবে নঈম নিজাম ও ইমদাদুল হক মিলনরা৷ আপন জুয়েলার্সের মালিক, পুত্র কর্তৃক ধর্ষণ করার পর বলবে, বড়লোকের পোলারা আকাম-কুকাম একটু করবেই৷ আবার তারাই শ্রমিকদের অলৌকিক লোভ দেখার ব্যবস্থা করতে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করবে— পরকালে হুরীর জন্য৷ আমরা তা বোঝতেও পারি না৷ এস আলম গ্রুপ পাচার করার জন্য এক লক্ষ কোটি টাকা পায় কোথায়? সামিট গ্রুপ দেশের মানুষকে কতটা ঠকালে— বাংলাদেশে ব্যবসা করে সিংগাপুরের সেরা ধনী হতে পারে৷ কিংবা একজন ছাত্রনেতা কিভাবে দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করতে পারে?
এই টাকা রাজনীতিবিদ ও পুঁজিপতিরা লুটেছে মূলত দরিদ্র শ্রমিকদের ঠকিয়ে৷ প্রথমত শ্রমশক্তির তুলনায় মজুরী কম দিয়ে এবং দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রের টাকা লুণ্ঠন করে যা দেশের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় হতো৷ এবং শ্রমিকরাই দেশের সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণি৷ রাষ্ট্র পুঁজিপতিদের লুটপাট থামাবে না৷ এর অংশীদার শাসকদের অনেকেই৷ ওই ছাত্রনেতা বা এস আলম গ্রুপ যে অন্যের টাকাও পাচার করেছে, সেটাও বোঝা যায়৷ সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ যদি শোষক-লুটেরাদের হাত ধরে ফেলতে না পারে তবে শ্রমিকদের মুক্তি মিলবে না৷ শ্রমিকের পক্ষের কোন সরকারও আসবে না৷