গতকাল চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। এই ফলাফলে কেউ হাসছে কেউ কাঁদছে। আজ পত্রিকার পাতার কয়েকটা খবরে চোখ আটকে গেলো। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত জানা গেছে প্রায় ৮ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। প্রত্যেক আত্মহত্যার কারণে জানা গেছে অভিভাবকদের রাগারাগি ও ভৎসনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। অভিভাবক তার সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন কিভাবে। আর আজ যা করেছে এটা পরীক্ষার আগে করলে তো ফলাফল উল্টা হতেও পারতো।
বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীর কোন ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য নেই। এই সময়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ইচ্ছা অনিচ্ছায় শিক্ষার্থীকে পড়ালেখা করতে হয়। অভিভাবকগনের ইচ্ছা তাদের সন্তানদের উপর চায়িয়ে দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কে ডাক্তার হবে কে ইঞ্জিনিয়ার হবে এটা নির্ভর করে অভিভাবকের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০-১১ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর কাঁধে এক বস্তা বই বহন করে অভিভাবকগন স্বস্থির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন না। পারলে তারা বই খাতা কলম ব্লান্ডারে ব্ল্যান্ডে করে জুস বানিয়ে শিক্ষার্থীদের খাইয়ে দেন।
আপনি কি একবারও খোঁজ নিয়েছেন যে আপনার কোমলমতি সন্তানের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু। সে কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। কি তার পছন্দ আর অপছন্দ। আপনি কি তার মেধা বিকাশে সাংস্কৃতিক কোন কর্মকান্ডে জড়িত করেছেন। শারিরিক গঠনের জন্য তাকে কোনদিন খেলার মাঠে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সবুজ প্রকৃতি, আর প্রাকৃতিক পরিবেশে গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে মিশতে দিয়েছিলেন? কখনই দেন নি! উল্টা আরো সে যেতে চাইলে আপনি নেতিবাচক কথা শুনিয়েছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং খেলাধুলা করলে লেখাপড়া নষ্ট হবে। আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে না এই জুজুর ভয় দেখিয়ে তাকে বাড়িতে আটকিয়ে রেখেছেন।
চার দেয়ালে বন্দি থাকতে থাকতে এখন সে একটা ব্রয়লার মুরগীতে পরিনত হয়েছে। মানুষের সাথে সে আর মিশতে পারে না। একা থাকতে পছন্দ করে। অন্য মানুষ বাদ দিলাম আপনার বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথেও সে ভালো করে কথা বলে না। সারাদিন ক্লাসের বই নিয়ে পড়ে আছে। এই বই ছাড়া যেন পৃথিবীতে যেন আর কোন কিছু নেই।
লেখাপড়া এখন শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা না হয়ে হয়ে গেছে অভিভাবকদের প্রতিযোগিতা। একজনের সন্তান প্রথম হয়েছে অন্যজনের সন্তানকেও প্রথম হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটের আশে পাশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, সবার সন্তানই প্রথমহবে। এসব করতে গিয়ে অনেক অভিভাবক অন্যায় পথও বেছে নিচ্ছেন। শিক্ষককে গিফট দেয়া কোন কোন ক্ষেত্রে সুযোগ পেলে অর্থ প্রদান করে প্রশ্নপত্র নিতেও তারা প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। পরীক্ষার হলে শিক্ষক ভাড়া করে খাতায় লেখানোর ব্যবস্থাও করা হয় বলেও জানা গেছে।
এইভাবে যদি আপনার সন্তুনি জিপিএ ৫ পায় অথবা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে, তবে এই সন্তানের কাছে আপনি বা জাতি কি আশা করবে বলে আপনি মনে করেন?
আসুন আমরা আমাদের সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর আগে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলি আগে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে যদি গড়ে তুলতে পারি আমাদের সন্তানদের তবে আপনার সন্তান আপনার ইচ্ছার চেয়েও অধিক সম্মান আপনার জন্য বয়ে আনতে পারবে।
সন্তানকে নিয়মিত আপনার গ্রামে ঘুরে আনুন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উদ্বুধ করুন। প্রতিদিন খেলার মাঠে পাঠিয়ে দিন। লেখা-পড়ার বাইরেও তারা মেধার বিকাশে সহযোগিতা করুন। সন্তানের ইতিবাচক ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন। পরিবারে তার মতামত গ্রহণ করুন। দেখবেন আপনার সন্তান মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে, আপনার মুখ উজ্জ্বল করবে।
নিজের সন্তানের মেধার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ দিতে, সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আপনি সিদ্ধান্ত না দিয়ে সন্তানের ইচ্ছার প্রতিফলণ ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করুন। সন্তানকে তারা মেধার পরিপূর্ণ বিকাশে সাহস দিন, উৎসাহ দিন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট