আমার স্কুল জীবনের একজন শিক্ষক ক্লাসে বলেছিলেন, পৃথিবী গোলাকার এর হাজারটা প্রমাণ থাকলেও এখনো বহু নির্বোধ মনে করে, পৃথিবী চ্যাপ্টা! কিছু করার নেই৷ ওদের বিশ্বাস থেকে বের করা যাবে না৷ তবে ওরা দ্রুতই কমে যাচ্ছে৷ আমাদের কথা বলতে হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই৷
এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও জানে পৃথিবী গোলাকার। পৃথিবীর ব্যাস প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যদি একটি ছিদ্র করা হয় তবে তা আমেরিকার কাছাকাছি দিয়ে উঠাতে পারলে সেই পথের দূরত্ব হবে এটা। তাহলে পৃথিবীর পরিধি কতো? এসব হিসাবও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা করে। তারা জানে ব্যাসকে পাই দিয়ে গুণ করলেই পাওয়া যাবে চল্লিশ হাজার কিলোমিটার।
শিক্ষকতা করার সময় একদিন মাদ্রাসার ছাত্রদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পৃথিবীর আকার কেমন?
কেউ জবাব না দেয়াতে বললাম, পৃথিবীতো গোলাকার?
এক ছাত্র বলল, স্যার পৃথিবীতো গোলাকার না, চ্যাপ্টা, কমলালেবুর মতো।
জানতে চাইলাম, কমলালেবু কি গোলাকার না চ্যাপ্টা?
ছাত্র বলল, দুই দিক তো চ্যাপ্টা।
আমার ওই ছাত্র তবুও চ্যাপ্টার মধ্যেই থাকতে পছন্দ করছে। বহুবছর মানীষের ধারণা ছিল, পৃথিবী চ্যাপ্টা। বাইবেল বলছে, পৃথিবীর চার কোণায় চারটি খুঁটি গেড়ে আকাশকে ঠেক দিয়ে রাখা হয়েছে যাতে, মানুষের মাথায় ভেঙে না পড়ে। অনেক গ্রন্থে অদৃশ্য খুঁটির কথা বলা হয়েছে৷
একবার বার্ট্রাড রাসেল, পৃথিবীর গোলাকার নিয়ে কথা বলছিলেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হলে এক বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি যাই বলো বাপু, তোমার কথা বিশ্বাস করি না। পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে একটি কচ্ছপের পীঠে।
রাসেল জব্বর কাউন্টার দিলেন, তাহলে ওই কচ্ছপটা দাঁড়িয়ে আছে কার উপর?
বাউন্ডারি মারলেন ওই বৃদ্ধা, সেটা দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা কচ্ছপের পীঠে, সেটা আরেকটা কচ্ছপের পীঠে …….. এর কোন শেষ নেই। রাসেল ওই বৃদ্ধার বিশ্বাস বদলাতে পারেননি তবে কোটি কোটি মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন এনেছেন৷
এখনতো মহাকাশ থেকেই দেখা যায় পৃথিবীটা গোলাকার। আরো বহু প্রমাণ পৃথিবী থেকেই দেয়া যায়। এটাও বিজ্ঞানীরা প্রথম বুঝতে পারে, আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের চলাচল দেখে। পৃথিবী গোলাকার এবং ঘূর্ণায়মান না হলে হিসাবে মিলে না। এখন রয়েছে আরো অসংখ্য প্রমাণ। গ্রীক দার্শনিকরা সমুদ্রে জাহাজের আগে মাস্তুল দেখেই বুঝেছিলেন, পৃথিবীর পৃষ্ঠ গোলাকার৷ ধর্মগ্রন্থে থাকা ভুল আজো বহু মানুষকে সত্য দেখতে দেয় না৷ তবুও কিছু মানুষ মানতে চান না, পৃথিবীর গোলাকার। পৃথিবী গোলাকার হলে তা ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় যে! ভুল হয়ে যায় যে ধর্মগ্রন্থই৷ তাতে বহু মানুষ হারাবে ব্যবসা ও রুজি-রোজগার! তাই ওদের পৃথিবী চ্যাপ্টা হয়েই থাকে৷