সিজারিয়ান অপারেশনের পর মৃত প্রসূতিকে জীবিত দেখিয়ে কৌশলে লাশ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহের এক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রসূতির স্বজনরা ফুঁসে উঠেছে। বেগতিক দেখে ওই ক্লিনিকে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শৈলকুপা শহরের কবিরপুর খন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
পুলিশ ও ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মালিথিয়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে খন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারের জন্য ভর্তি করা হয়।
ক্লিনিকে সিজার করেন কথিত ডাক্তার কাশমিম সুজন। আর রোগীর এনেসথেসিয়া করেন আরেক চিকিৎসক মুনতাসির রহমান। সিজারের পরপরই মারা যান প্রসূতি ফাতেমা খাতুন। তবে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
স্বজনদের অভিযোগ, সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যু হলেও জীবিত থাকার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে লাশ এ্যাম্বুলেন্স যোগে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সেখান ডাক্তাররা রোগীর স্বজনদের জানান প্রসূতি অনেক আগেই মারা গেছেন। এদিকে মৃত্যুর বিষয় জানাজানি হয়ে পড়লে রোববার রাতে খন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালায়। অভিযানে শৈলকুপা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বনি আমিন অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল সিলগালা করে দেন। একই সাথে অভিযুক্ত ডাক্তার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন।
শৈলকুপার সহকারী কমিশনার(ভূমি) বনি আমিন সোমবার বিকালে জানান, অভিযুক্ত প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধসহ ডাক্তার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্লিনিক বন্ধ থাকবে।
প্রসূতির স্বামী জাহিদুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে সিজারের নামে হত্যা করা হয়েছে। সিজারের আগে সে সুস্থ ছিল। তিনি ন্যায় বিচার চেয়ে বলেন, মৃত্যুর পরেও কেন তার স্ত্রীকে কুষ্টিয়া পাঠানো হলো?
অভিযুক্ত খোন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মোঃ রেজা সাংবাদিকদের জানান, “আমরা রোগীর স্বজনদের সাথে বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলেছি, তারপরও কেন বন্ধ করা হলো তা বোধগম্য নয়।” প্রসূতির মৃত্যু প্রসঙ্গে চিকিৎসক কাশমিম সুজন জানান, “আমি তো আপনাদের ভাই, নিউজ করার দরকার নেই, একটু দেখবেন”
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আহসানুল মিজান রুমি জানান, অপারেশনের চিকিৎসক কাশমিম সুজনকে গত মার্চ মাসে চিঠি ( স্মারক নং-উপ:স্বা:কম:/শৈল/ঝি/২৪/২৯৩) দিয়ে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ব্যাতিরিকে কোন অপারেশন না করতে বলা হলেও তিনি আইনের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশ করে যাচ্ছেন, যা সরকারী আদেশের পরিপন্থি। তিনি আরো জানান, এর আগেও ওই চিকিৎসকের হাতে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট