পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আগামী ২৪ জুন আবার তলব করেছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে এদিন তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিনের সময় চেয়ে দুদকে আবেদন করলে কমিশনের অনুসন্ধানদল তাঁদের সময় চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ জুন দিন ধার্য করেন। দুদক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।এর আগে গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জাসহ তাঁদের দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দেয় দুদক। চিঠিতে ৬ জুন বেনজীর আহমেদ এবং ৯ জুন তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। আরেক মেয়ে জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীর নাবালিকা হওয়ায় তাকে তলব করা হয়নি। তবে প্রথম দফায় দুদকের ডাকে হাজির হননি বেনজীর আহমেদ।
হাজির না হয়ে তিনি ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেন। কমিশন তা মঞ্জুর করে আগামী ২৩ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের তাঁকে তলব করে চিঠি দেয়।
এরও আগে গত ৬ জুন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে ক্রোক হওয়া সব স্থাবর সম্পদের রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগের আদেশ দেন আদালত। আদেশ অনুসারে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কক্সবাজারে থাকা সম্পদ দেখভালে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, সাভারের সম্পদ সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং গোপালগঞ্জের মত্স্য খামার দেখভালের জন্য জেলা মত্স্য কর্মকর্তাকে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়।
আর গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটের দেখভালে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব সম্পদের ওপর বেনজীর ও তাঁর পরিবারের আর কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বেনজীর পরিবারের ক্রোক ও ফ্রিজ হওয়া সম্পদ
গত ২৪ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ২৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট), চারটি ক্রেডিট কার্ড ও ছয়টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৬ মে একই আদালত বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেন।
একই দিন বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সাভারের কিছু জমিও রয়েছে একই আদেশের মধ্যে। এ ছাড়া বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে গুলশানে যে চারটি ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালের ৫ মার্চ গুলশান সবরেজিস্ট্রি অফিসে চারটি দলিলে ৯ হাজার ১৯২.৭৮ স্কয়ার ফিট (বর্গফুট) ওই ফ্ল্যাট ক্রয় করে বেনজীর আহমেদের পরিবার। এর মধ্যে দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে দুই কোটি ১৯ লাখ টাকা।
বেনজীর পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু যেভাবে
সর্বপ্রথম কালের কণ্ঠে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল পৃথক দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশের পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে। মূলত এর পরই দুদক বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট