হবিগঞ্জে ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলার ৫৫টি হাটে ক্রেতারা ছুটছেন পছন্দের পশু ক্রয় করতে। বিক্রেতারাও চেষ্টা করছেন তাদের পশু দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে। এর মাঝে দৃষ্টি কেড়েছে জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিশাপট গ্রামের সুজন মিয়ার খামারের ২৫ মণ ওজনের শাহীওয়াল জাতের একটি ষাঁড়।এই ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘জায়েদ খান’।
এ ছাড়া চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাঁও গ্রামের মহসিন মিয়ার ৩০ মণ ওজনের একটি কালো রঙের ষাঁড় সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় ওজনের বলে দাবি করা হচ্ছে। তিনি তার ষাঁড়টি ১০ লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা করছেন।
‘জাহেদ খান’র মালিক সুজন মিয়া জানান, ভুসি, খইল, সবুজ ঘাস, খড়সহ পুষ্টিকর দেশীয় দানাদার খাবার দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে লাল রঙের ২৫ মণ ওজনের ‘জায়েদ খান’।লম্বায় ১০ ফুট ও উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট ছাড়িয়েছে। এবারের কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত করা ‘জায়েদ খান’র দাম হাঁকা হচ্ছে সাত লাখ টাকা। জায়েদ খান ছাড়াও তার খামারে বিক্রিযোগ্য ছয়টি শাহীওয়াল ও দেশি জাতের গরু রয়েছে।
নামের বিষয়ে খামারি সুজন মিয়া বলেন, আমরা আদর করে গরুটির নাম জায়েদ খান রেখেছি, কারণ গরুটির গঠন অনেকটা নায়ক জায়েদ খানের মতো।এ ছাড়া জায়েদ খান বলে ডাক দিলে গরুটি সাড়া দেয়।
মহসিন মিয়া বলেন, তার গরুটি তিন বছর যাবৎ লালন-পালন করেছেন। খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে ব্যয় বেড়েছে। তার গরুটি দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক বাড়িতে এসে ভিড় জমায়। তিনি দাবি করেন, সিলেট বিভাগের মধ্যে তার গরুটিই সবচেয়ে বড়।
এদিকে হবিগঞ্জে এবার চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু বেশি। তবে দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। কোরবানিকে কেন্দ্র করে জেলায় অনেকগুলো ক্ষুদ্র খামার গড়ে উঠেছে। এর বাইরে কৃষকদের উৎপাদিত গরুতেই জেলার চাহিদা পূরণ করতে পেরেছে। তবে জেলার বাইরে থেকে আসা অনেক আকর্ষণীয় গরুর জন্য চাহিদার তুলনায় গরুর সংখ্য বেড়েছে। তবে জেলার খামাড়িরা আতঙ্কে আছেন চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে আসা অবৈধ গরু নিয়ে। সীমান্তে অবাধে গরু এলে লোকসানে পড়বেন বলে আশঙ্কা খামারিদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদের জানান, এ বছর জেলায় কোরবানির চাহিদা ৯০ হাজার ৬৩৮টি পশু। এর মধ্যে জেলার ছয় হাজার ৫১৯ জন খামারি এবং কৃষকরা কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ৪৮ হাজার ২০০টি গরু, ৬৫১টি মহিষ, ৩২ হাজার ৬০৮টি ছাগল, ২১ হাজার ৫১৫টি ভেড়া এবং ২টি অন্যান্য পশু। উদ্বৃত্ত ১২ হাজার ৬৩৮টি পশু। এ ছাড়া বাইরে থেকে আসছে অনেক গরু। এবার বোরো ধানের আবাদ ভালো হওয়ায় এবং বন্যা না হওয়ায় খামারিরা লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করছেন। ভারতীয় গরু ছাড়া বড় কোনো হুমকি নেই এখনো।
মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া গ্রামের ফিউর অ্যান্ড অর্গানিক ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মোত্তাকিন চৌধুরী জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও তার খামারে ৮০টি ষাঁড় গরু পালন করা হয়েছে। গোখাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গরু পালনে খরচ বেশি হয়েছে। তারপরও লাভজনক ব্যবসা হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বিপুলসংখ্যক পশু পালন করা হয়েছে ঈদে বিক্রি করার জন্য। তবে তিনি উদ্বিগ্ন যদি ভারত থেকে চোরাই পথে গরু আসে। এ জন্য অবৈধপথে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।
বানিয়াচং উপজেলার কাটাখাল গ্রামের লুৎফুর রহমানের খামারে এবার ১২টি ষাঁড় বিক্রি হবে ঈদের বাজারে। তিনি জানান, তার খামারের সবগুলোই দেশি জাতের ষাঁড়। ঘাস ও প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে এগুলো লালন-পালন করা হয়েছে। ভালো দামের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট