1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

আনার হত্যাকান্ড; শাহীন-মিন্টু ফোনালাপ; খুনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪
মাস্টার মাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার ও জেলা সেক্রেটারি সাইদুল করিম মিন্টু।

ঝিনাইদহ ০৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডের তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে।  ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে থাকা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর বিষয়েও আসছে নতুন তথ্য। পুলিশের তদন্তকারীদের তথ্যমতে, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের অভিজাত একটি ফ্ল্যাটে গত ১৩ মে খুন করা হয় এমপি আনারকে। এর আগে এই হত্যাকান্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন ওই ফ্ল্যাট থেকে ফোন করেন মিন্টুকে। সেই ফোনালাপেই আনার হত্যাকান্ডের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কথা জানানো হয় তাকে। অন্যদিকে শাহিনের সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাসবাবুর কথা হয় যে তিনটি মোবাইল ফোনে, সেই ফোনগুলো নিজ হেফাজতে নিয়ে নেন মিন্টু। এর পর ফোনগুলো হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডি করেন গ্যাসবাবু। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে আটক করা হয় মিন্টুকে। আজ বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ ০৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডের মামলার রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।

ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে এই রিমান্ড শুনানি হয়। শুনানি শেষে তাকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এদিকে তদন্ত কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তিগত প্রমাণের ভিত্তিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেট মিলে এমপি আনারকে হত্যা করেছে বলে বলছেন । অন্যদিকে এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেছেন, আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে বড় বড় জায়গা থেকে তদবির হচ্ছে। বিষয়টি দেখার জন্য তিনি গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনুরোধ করেছেন। অদেখা বিশ্ব নিউজ পোর্টালের কাছে আসা আনারকে হত্যার সময়কার একটি ছবিতে দেখা যায়, বিবস্ত্র অবস্থায় চেয়ারে বসানো আনারের গলায় একটি লাল গামছা পেঁচিয়ে সেটি চেয়ারের সঙ্গে শক্ত করে বাধা। মুখের মধ্যে সাদা কাপড় গুঁজে দেওয়া, যার অন্য অংশটি বাধা চেয়ারের সঙ্গে। এ ছাড়া কপালে কালো ফিতা দিয়ে চেয়ারের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে। দুই হাতের কব্জি ও কনুই শক্ত করে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ছবিতে আনারের চেহারায় মৃত্যু আতঙ্ক ফুটে উঠেছে।

এমপি আনার হত্যার চাঞ্চল্যকর ছবি ও তথ্য ফাস

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা থেকে আনার খুনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মাস্টারমাইন্ড শাহিন আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে ফোন করেছিলেন। ফোনে ২ কোটি টাকা রাখতে বলেন। ফোনের এ প্রান্ত থেকে মিন্টু তাকে জানান যেন দেশে এসে গ্যাসবাবুর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। শাহিন ও আমানুল্লাহ দেশে আসামাত্র ২০ লাখ টাকা গ্যাসবাবুর কাছ থেকে নেওয়ার কথাও বলেন। আর খুনের বিষয়াদি নিয়ে সব সময় গ্যাসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন। অন্যদিকে যে তিনটি ফোনে গ্যাসবাবু নিয়মিত কিলার আমানুল্লাহ ও মাস্টারমাইন্ড শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তা কী করা হবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। পরে মিন্টু তিনটি ফোন তার কাছে জমা দিয়ে হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী গ্যাসবাবু থানায় জিডি করেন। ওই ফোনগুলোর বিষয়ে মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাসবাবুর  কাছে পাওয়া তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণের পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইদুল করিম মিন্টুকে ডাকা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সাইদুল করিম মিন্টুকে আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, ডিবির ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। শুনানি শেষে তাকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল সাংবাদিকদের আরও বলেন, আমরা যখন কাউকে নিয়ে আসি তখন অবশ্যই কিছু তথ্য উপাত্ত থাকে। প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই আমরা বাবুকে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে বাবু অকপটে স্বীকার করেন যে, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন। শিমুল ভূঁইয়া গ্যাসবাবুকে এমপি আনার হত্যার পর ছবি দেখিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকান্ডের পর ১৬ মে সাইদুল করিম মিন্টু ও গ্যাসবাবু জেনেছিলেন। তাদের মোবাইলে হত্যাকান্ডের ছবিও এসেছিল। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করলে কেন সেই সময় বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি? হত্যাকান্ডের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানানোও অপরাধ। রিমান্ডে থাকা বাবু ও আটক মিন্টুকে এসব বিষয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না মন্তব্য করে হারুন অর রশীদ বলেন, অনেকের সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এমপি আনার হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর সঙ্গে যে বা যারাই যে কোনোভাবে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে কারও প্ররোচনায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।

আনারকন্যা ডরিন বলেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু চাচাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে। অবশ্যই তাদের কাছে সত্যিকারের কোনো তথ্য প্রমাণ আছে, সেই সাপেক্ষেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি বলতে চাই গ্যাসবাবু নামে যাকে আটক করা হয়েছে, তিনি আমার বাবার প্রতিপক্ষ নন। আমাদের সঙ্গে তার কোনো শত্রুতাও নেই। তবে তাকে আটকের আগে থানায় তিনি জিডি করেছেন যে, তার তিনটি ফোন হারিয়ে গেছে। একই দিন একজন মানুষের তিনটি ফোন কীভাবে হারিয়ে যায়, সেটিও আমার প্রশ্ন। আনার হত্যাকান্ডে ঢাকায় মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)র হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকান্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া। তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। মিন্টুকে আটকের পর আজ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার। এ ছাড়া নেপালের কাঠমান্ডুতে আটক সিয়াম হোসেনকেও তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এমপি আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটকের পর পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দলের ভেতর বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মিন্টুর সমর্থকরা গত মঙ্গলবার রাতে ঝিনাইদহ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলোত্তর সমাবেশে বক্তারা মিন্টুর বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। গতকালও ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরে মানববন্ধন করে মিন্টু-সমর্থিত আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ। এতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মিন্টুর মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

সাইদুল করিম মিন্টুকে মুক্তির জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম

অন্যদিকে মিন্টুকে আটকের পরপরই কালীগঞ্জে আনন্দ মিছিল হয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী ও কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে। এ সময় মিন্টুর ফাঁসির দাবি তোলা হয়। এ সংবাদে মিন্টুর সমর্থকরা মানববন্ধন করে শিবলী নোমানী ও আশরাফুল ইসলামকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ছাড়া আনার হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গতকাল দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে টিকারীবাজারে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবকের কাছে যদি কর্মীরা নিরাপদ না হন, তা হলে সেই অভিভাবককে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের জেরে মিন্টুর আগে আটক করা হয় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু ওরফে গ্যাসবাবুকে।

আনার হত্যাকাণ্ড: জেলা আওয়ামীলীগের সা.সম্পাদক মিন্টু আটক, কি বলছেন নেতাকর্মীরা?

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, জেলার আরও কয়েকজন নেতা বর্তমানে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যান ঝিনাইদহ ০৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি সেখানে বরাহনগর থানার মলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পর দিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন।

২২ মে প্রকাশ্যে আসে, আনারকে ১৩ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে খুন করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews