ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে। শহরের বেশির ভাগ সড়কে হাঁটু পানি। বাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন অনেকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শহরের অনেক ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে দুপুরে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, শহীদ আবুল হোসেন রোড, আরপিননগর, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, ডিএস রোড, ষোলঘর, সবজিবাজার, শান্তিবাগসহ বিভিন্ন সড়কে পানি উঠেছে। অনেকের দোকানের জিনিসপত্র ভিজে গেছে। ভোর থেকেই দোকানের মালামাল সরানোর কাজ করছেন দোকানিরা। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও আবাসিক এলাকার উপর দিয়ে পানি গিয়ে পড়ছে ঝাওয়ার হাওরে।
শহরের শান্তিবাগের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান বললেন, উঠানে ও সড়কে পানি উঠেছে। শহরের বেশিরভাগ সড়কেই পানি। বৃষ্টিতে ভিজে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। এর আগে কোনো ঈদে এভাবে বৃষ্টি হতে দেখিনি। এবারে ঈদে কোনো আনন্দ নেই। ২০২২ সালের জুনের মতো বন্যা আতঙ্কে আছে মানুষ।
নতুন পাড়ার মুদি দোকানি অমল দাস বললেন, এভাবে পানি বাড়বে বুঝতে পারিনি। আমার দোকানের বেশিরভাগ মালামাল পানিতে ভিজে গেছে। ভোরে দোকানে এসে মালামাল উপরে তুলছি। মাঝে বৃষ্টি থামায় পানি কিছুটা কমেছিল, বৃষ্টিতে এখন আবার পানি বাড়ছে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালীকৃষ্ণ পাল বললেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রথমে ক্লিনিং করতে হবে। ড্রেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। কামারখাল ড্রেন সুনামগঞ্জ শহরের মূল ড্রেন, এটা সচল রাখতে হবে। আমরা সচল রাখার ব্যবস্থা করছি। অনেক জায়গা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। আজ ঈদের দিনও আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছে। শহরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সে সব এলাকার জলাবদ্বতা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অচিরেই ড্রেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কিছু কিছু জায়গায় পানি বৃদ্ধি পেলেও খুব বেশি বাড়বে না। বর্তমানে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে পানির লেভেল ৮ মিটার, অর্থাৎ বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমার পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণেই মূলত নদ-নদীর পানি বেড়েছে। রোববার ৩০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুনামগঞ্জের বন্যা হয় চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিপাতের উপর। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু বৃষ্টি ২০০ মিলিমিটারের নিচে সেহেতু আমাদের জন্য ঝুঁকির নয়। আমাদের এখানে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এজন্য মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে, সেজন্য পানি বিপৎসীমার উপরে থাকতে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, জেলায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল। আজ সুনামগঞ্জ সদর ও পৌরসভার কিছু নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে ভোরের দিকে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি কমছে। আগামী তিনদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রীর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট