এক যুগের বেশি সময় ধরে অন্তত ১০ বার মেডিক্যালের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে একটি চক্র। কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্ন ফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠত সংঘবদ্ধ এ চক্র। এভাবে গত ১২ বছরে চক্রের বেশির ভাগ সদস্য কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এর সদস্যরা। ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চক্রটি এ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এদিকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্ন ফাঁস চক্রের আরো ১৪ জনকে খুঁজছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মাস্টারমাইন্ড রয়েছেন।
ব্যাংকের মাধ্যমেও তাঁদের অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রে রয়েছেন শতাধিক সদস্য।গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন গতকাল মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য ১১ জন জবানবন্দি দেননি। পরে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এদিকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া পিএসসির পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সিআইডির ভাষ্য, গত ১২ বছরে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিকভাবে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করেন, কারা তাঁদের সহযোগিতা করে, কিভাবে তাঁরা অর্থ লেনদেন করেন, সেসব টাকা কিভাবে তাঁরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন, তার অনেক তথ্য এরই মধ্যে তারা জানতে পেরেছে। সেসব তথ্য যাচাই করছে তারা।
গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্র বলছে, প্রশ্ন ফাঁস করে এঁদের বেশির ভাগ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।সবচেয়ে বেশি টাকার মালিক হয়েছেন আবেদ আলী। তাঁর ঢাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট, নগদ টাকাসহ অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়া এই টাকায় অন্যদেরও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট রয়েছে।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনেক ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
গত সোমবার রাতে পল্টন থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে সিআইডির উপপরিদর্শক নিপ্পন চন্দ্র বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে ১৭ জনের বাইরে আরো ১৪ জন হলেন পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বনিক, মো. খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এ টি এম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ। এঁরাও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পেয়ে যাচাই চলছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট