1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
ঢাকায় আইএলও কনভেনশন অনুস্বাক্ষর বাস্তবায়ন সম্পর্কিত মতবিনিময় সভা বগুড়ায় গ্রাম আদালত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় বিষয়ক অর্ধ-বার্ষিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত রানীরপাড়া স্কুলে আলোর প্রদীপ সংগঠনের পুষ্টিকর খাবার ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ময়মনসিংহে ‘আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা নেত্রকোণায় নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা বিষয়ক মতবিনিময় সভা সোনাতলায় মাদকের ব্যপকতা প্রতিরোধে বিক্ষোভ সমাবেশ সোনাতলায় মাদক নির্মূলের দাবিতে নাগরিক কমিটির স্মারকলিপি প্রদান বৈশ্বিক অর্থায়ন সংকটের প্রেক্ষিতে এনজিওদের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভা প্রবীন নাট্যকর্মী বাবলু খানের মৃত্যুঃ বিভিন্ন মহলের শোক পশ্চিম বঙ্গের কবি মনিকা রায়ের কবিতার ডায়েরি থেকে

হিন্দুদের উপর হামলা ও রাজনীতি

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪
১৯৩১ সালে বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডে হিন্দু ছিল ২৯.০৪%, ১৯৪১ সালে ছিল ২৮%। ভারত ভাগের ধাক্কায় বিপুল সংখ্যক হিন্দু ভারতে চলে যায়। বিপরীতে কিছু মুসলিমও বাংলাদেশে আসে। তাতে ১৯৫১ সালের গণনায় হিন্দুর নেমে আসে ২২.০৪% এ। পুরো পাকিস্তান আমলেই হিন্দু বিদ্বেষী মারাত্মক মনোভাব ছিল এবং ধর্মীয় বিদ্বেষে সাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশে হিন্দুরা দেশ ছাড়ে। ১৯৬১ সালে হিন্দু কমে হয় ১৮.৫০%। ভারত ভাগের আগে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ভারতের রাজধানী এবং ১৯৪৭ পর্যন্ত বাংলার রাজধানী ছিল কলকাতা। অগ্রসর হিন্দুদের অনেকেরই বাড়ি বা জমিদারী ছিল পূর্ববঙ্গে কিন্তু তারা ব্যবসা বা চাকরি করতেন কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে। ভারত ভাগের পরে তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষা ছাড়াও অর্থনৈতিক কারণেও পশ্চিমবঙ্গে চলে যেতে হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দুদের উপর নির্যাতন বেড়ে যায়। এছাড়া অনেকে এসময় ভারতে আশ্রয় নিয়ে আর ফিরে আসেননি। তাদের বাড়িঘরও বেদখল হয়ে যায়। এসব কারণে আবারো বিপুল সংখ্যক হিন্দু কমে যায় এসময়ে। ১৯৭৪ সালের গণনায় দেখা যায় দেশে হিন্দু রয়েছে মাত্র ১৩.৫০%। এরপর ধারাবাহিকভাবেই কমেছে হিন্দুর সংখ্যা। হিন্দুদের সম্পত্তি দখলে নেয়ার জন্যও কিছু মুসলিম বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছেন হিন্দুদের তাড়াতে। ওয়াজের বক্তারা যখন হিন্দু বিদ্বেষী বয়ান তৈরি করেন তখনও উগ্র-মৌলবাদী মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকেও হিন্দুদের উপর হামলা করেন। ভারতের বাবড়ি মসজিদ ভাঙ্গা বা বাংলাদেশে সাঈদীকে ফাঁসি দেয়ার রায়ের প্রেক্ষিতেও হিন্দুদের উপর হামলা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে হিন্দু রয়েছে মাত্র ৭.৯৫% (২০২২ সালের সংশোধিত তথ্য)। বাংলাদেশে বনেদী হিন্দুরা শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অনেক এগিয়ে ছিলেন। তারা চলে যাওয়াতে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই হিন্দুরা ভারত গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তারা এদেশে নিরাপদে থাকতে পারলে এদেশ গড়তেও ভূমিকা রাখতেন। কিন্তু ধর্ম ও ধর্মীয় বিদ্বেষ এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে উঠে।
আমাদের ধর্মীয় বিদ্বেষটা যতটা না ধর্মগত তার চেয়ে অনেকটাই বেশি রাজনৈতিক। এবারের রাজনৈতিক সংকট ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়। দীর্ঘ ১৫ বছরের রাজনৈতিক প্রতিহিংষায় আবারো কি হিন্দুদের উপর হামলা হবে? হ্যা কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে অবশ্যই। তবে কিছু চিত্র আমাকে বিস্মিত করেছে। সকালে তিনটি ভিডিও দেখলাম। নোয়াখালীতে একজন এমএসসি পর্যায়ের হিন্দু ছাত্র নিজেই নিজেদের মন্দিরে কেরোসিন কিনে আগুন দিয়েছেন। রংপুরে একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, তাদের মন্দির জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার পিতা ক্ষমা চাচ্ছেন যে, তার পুত্র মিথ্যা প্রচার দিচ্ছেন। তাদের মন্দিরে কেউ আগুন দেয়নি। সুনামগঞ্জেও দেখলাম স্থানীয় হিন্দুরা মন্দিরে আগুন দেয়ার মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আমাদের শ্রীনগরের একজন লেখক প্রচার দিয়েছিলেন, মাইজপাড়া মন্দির জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন আমাকে জানালে আমি দ্রুতই শ্রীনগর প্রেসক্লাবে আসি। মাইজপাড়ার একজন সাংবাদিক বন্ধু নিশ্চিত করেন সংবাদটি ভুয়া। পরে ওই লেখকও প্রত্যাহার করে নেন পোস্টটি। ওই লেখকের বিরুদ্ধে অন্যের বই নিজের নামে ছাপানোর বহু অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিজেপির এজেন্ট হিসেবেই এদেশে হিন্দু নির্যাতনের ভুয়া সংবাদ ভারতে প্রচার করে দুপয়সা রুজি করেন। আমাদের মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগরে একটি মন্দিরে গভীর রাতে হামলা করতে এসে ধরা পড়ে একজন। পরে অন্যদেরও ধরা হয়। তাতে দেখা যায় তারা মালখানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ খানের চ্যালা ও তার নির্দেশেই এমন কাণ্ড ঘটাতে এসেছিলেন। ভুয়া হামলার এসব বিষয় নিয়ে ভারতের পত্রিকা, বিবিসি ও বাংলাদেশের মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করেছে। এগুলো করার মারাত্মক ক্ষতিকর দিক হল, এতে যখন প্রকৃতপ্রস্তাবেই হিন্দুদের মন্দিরে হামলা হবে তখনও মানুষ সন্দেহ করবে। তাহলে কেন এমনটা প্রচার দেয়া হচ্ছে? একটি রাজনৈতিক দলের অনেকেই আশায় ছিলেন, এবার হিন্দুদের উপর ব্যাপক হামলা হবে আর সেই সংবাদ ভারতে পাচার করে একটি ঝামেলা লাগাবেন। দেশে পাঁচদিন কোন পুলিশ থানায় ছিলেন না। ফলে ঝুঁকিটা আরো বেশিই ছিল। কিন্তু মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন। অনেক স্থানেই মুসলিমরা হিন্দু মন্দিরে পাহাড়া দিয়েছেন। ফলে দাঙ্গা লাগানোর আশায় থাকারা হতাশ হয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের মহড়া দেখেও দুষ্কৃতকারীরা ভয় পেয়েছেন। এসব কারণেই এবার আমাদের শ্রীনগরের কোথাও কোন মন্দিরে হামলা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব ও ঝগড়াতো রয়েছেই।
আমাদের গ্রামের একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক একটি প্রভাবশালী মুসলিম পরিবারের ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিলেন। তিনি আমার বন্ধুর বড় ভাই। দৌড়ে গেলাম তাদের বাড়িতে। ওই ২২ জনের কেউই তার নিকট চাঁদা চায়নি। তাহলে কেন মিথ্যা মামলা করলেন? তখন আমাদের এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। স্থানীয় গাজী সম্প্রদায় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক অবদান রাখে এবং তারা মূলত আওয়ামী লীগেরই রাজনীতি করেন। কিন্তু তারা অধিকাংশই সুকুমার ঘোষের অনুগত নন। নব্য আওয়ামী লীগ ও একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্রের সাথে বিরোধ রয়েছে ওই পরিবারের সুদীর্ঘকাল ধরেই। এর রেশ ধরেই গাজী পরিবারকে শায়েস্তা করতেই ওই মামলা দেয়া হয়। আমি তাঁকে বিনীতভাবে অনুরোধ করি মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করতে। এমপি একজন মুসলিমকে দিয়ে মামলাটি করাক। ওদের দ্বন্দ্বে আপনি জড়াবেন কেন? তিনি কিছুতেই মামলা প্রত্যাহার করবেন না। আমার বন্ধুকে অনুরোধ করে দেশে এনেও মামলা প্রত্যাহার করাতে পারিনি। পরে আদালতেই প্রমাণ হয় মামলাটি মিথ্যা। গাজী পরিবারের অনেকে জেল খাটলেও পরে শুনেছি তারা ক্ষমা করে দিয়েছেন। দাদা কেবলমাত্র হিন্দু হওয়াতেই তাকে ব্যবহার করেছেন আরেকজন হিন্দু নেতা এবং বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। এমন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতেই পারতো। এ প্রজন্ম এসব বিষয় ভালভাবেই জানে।
জেনজি প্রজন্মকে নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। এই প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অনেক বেশি। তারা আমাদের চেয়ে অধিকতর যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক। এই প্রজন্মের মুক্তচিন্তা করার সামর্থ্য যেকোন সময়ের চেয়েই অনেক বেশি। তারা দ্রুতই সত্যটা বুঝে নিতে পারেন। তারা বুঝে নেয়, কারা ও কিভাবে ধর্মকে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে নারীর প্রতি সম্মান করাটাও বিপুলভাবেই বেড়েছে। এই আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্রীও সমান তালে সড়কে ছিলেন। তারা সক্রিয় ছিলেন বলেই, আন্দোলনে বিজয়ী হওয়াটা সহজ হয়েছে। এই মেয়েরা কেউই ধর্মান্ধ নন। পোশাকেও তারা আধুনিক। তাদের কাউকেই চেহারা ঢেকে রাখতে হয়নি। আঙুল উচিয়ে ধরেছে পুলিশ ও দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে। কণ্ঠেও তারা যে শব্দমালা উচ্চারণ করেছেন তাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুড়েছেন প্রতিপক্ষরা। এমনটা আমরা নব্বইর গণ আন্দোলনেও দেখিনি। এবার যে দেয়াল লিখনগুলো আপনাদের মুগ্ধ করছে, সেখানেও তাকিয়ে দেখুন তাতে মেয়েদের ভূমিকাই বেশি। এই প্রজন্মের কাছে কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে পুরুষ, কে নারী, কে বেটে, কে লম্বা সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারা বিবেচনা করে মেধা। তাই খুবই আশাবাদী যে, এই জেনজি প্রজন্ম এক নতুন বাংলাদেশই গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। তাদের সাপোর্ট দিতে তৈরি হচ্ছে আলফা প্রজন্ম। ধর্মান্ধতা দিয়ে এসব প্রজন্মকে রোখা যাবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews