ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় অনলাইনে শিক্ষক বদলী জালিয়াতির তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ বুধবার (৪ সেপ্টম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দপ্তরের ১৫৮৮ নং স্মারকের চিঠির প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মহাঃ ফজলে রহমান এই তদন্ত শুরু করেন।
তদন্তের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু হুরাইরা ও রত্না খাতুন দূর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেন। এর আগে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মাওলানাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পারভীন নাহার নীলাসহ ৫জন শিক্ষক এ বছরের এপ্রিল মাসে অনলাইনে বদলী জালিয়াতির অভিযোগ করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। এই অভিযোগের প্রতিকার না করে তাদের ঢালাও ভাবে শোকজ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকী দেয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার খালেকুজ্জামান।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সিনিয়র শিক্ষক হয়েও অনেক শিক্ষকের অনলাইনে বদলীর আবেদন ত্রুটিপুর্ণ দেখিয়ে বাতিল করে দুইজন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের স্ত্রীসহ একাধিক জুনিয়র শিক্ষককে ঝিনাইদহ শহরের মধ্যে বদলী করিয়ে আনা হয়। এই বদলী বানিজ্য করতে লাখ লাখ টাকার হাত বদল হয়। এ নিয়ে জেলাব্যাপী শিক্ষকদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি ও ক্ষোভের ঢেও আছড়ে পড়ে। অভিযোগ পাওয়া যায়, সুরাইয়া পারভীন পারভীন নামে এক সহকারি শিক্ষক অনলাইনে বদলির আবেদনে তিনি মাওলানাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম যোগদানের তারিখ দেখান ২০০৯ সালের ২৫ মে। কিন্তু তিনি ২০০৯ সালের ২৫ মে তিনি প্রথম যোগদান করেন সদরের বাকড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি ২০১১ সালের ১৩ জুন মাওলানাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন সুরাইয়া। সুরাইয়া পারভিনের স্বামী শাহজাহান রহমান রিজু সদরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হওয়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই জালিয়াতি করে পার পেয়ে যান। এছাড়া সুরাইয়া পারভিন অনলাইনে তার স্থায়ী ঠিকানা আরাপপুর থেকে মাওনালাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব দেখিয়েছেন ২৭ কিলোমিটার।
প্রকৃতপক্ষে আরাপপুর থেকে মাওলানাবাদের দূরত্ব হবে ১৩ কিলোমিটার। স্কোর বৃদ্ধির জন্য এখানেও তিনি মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিয়েছেন। একই সময়ে ইয়াসমিন আক্তার মিতা নামে এক শিক্ষক অনলাইনে বদলির আবেদনে ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টম্বর প্রথম যোগদান দেখিয়েছেন কলামবখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অথচ তিনি ওই তারিখে প্রথম যোগদান করেন চট্টগ্রাম বিভাগের ফটিকছড়ি উপজেলায়। ফটিকছড়ি থেকে তিনি বদলি হয়ে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। ২০১৪ সালের ১৭ জুন তিনি আবারো বদলী হন সদরের কলামনখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনিও অনলাইন আবেদনে মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। এছাড়া মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষক মোছা: নাজমা পারভীন, মোছা: ফাতিমা সিদ্দিকা, স্মৃতি বিশ্বাস ও নাসরিন সুলতানাকে বদলী করানো হয়। অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ খালেকুজ্জামান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিনিয়ার শিক্ষকদের অনলাইন আবেদন বাতিল করে জুনিয়ার শিক্ষকদেরকে বদলি করেন। এদিকে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহাজান রহমান রিজু ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঠিকানায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরী নেয়। তিনি প্রথম যোগদান করেন সদরের পানামী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তিনি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে শৈলকুপা উপজেলার যুগনী গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করলেও বিভাগীয় কোটা হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ সদরের প্রত্যায় ব্যবহার করেন। যা নিয়োগ পক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ ব্যপারে তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মহাঃ ফজলে রহমান বুধবার দুপুরে জানান, তদন্তে অনেক কিছুই প্রমানিত হয়েছে। আমি দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশসহ জালিয়াতির ঘটনায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করার উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, দুর্নীতি করে এখন কেউ পার পাবে না।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট