চট্টগ্রামে শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে ইসলামী সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন শহিদুল করিম ও নুরুল ইসলাম। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিশ্চিত করে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, জেএমসেন হলে পূজামণ্ডপে সংঘঠিত ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত আজ বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনসে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।
এর আগে এ ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই জড়িতদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে জেএম সেন হলের শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন দুটি গান পরিবেশন করে। এর একটি শাহ আবদুল করিমের ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’। অন্যটি ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’। এটির গীতিকার চৌধুরী আবদুল হালিম। দুটি গানেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা রয়েছে।
গান দুটির ভিডিও ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ছয়জন যুবক মঞ্চে এ দুটি গান গেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টির জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
চট্টগ্রামভিত্তিক একটি নিউজ পোর্টালের লাইভে দেখা যায়, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনা শেষে তাদের একজন মঞ্চে মাইক্রোফোন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এ সুন্দর আয়োজনে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সব সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারক।
এরপর পূজা উদযাপন পরিষদের ঘোষককে বলতে শোনা যায়, ‘অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীবৃন্দকে। অসাম্প্রদায়িক একটি বাংলাদেশ গড়ার যে সংগীত উনারা পরিবেশন করলেন, সে জন্য বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ।’
জানা গেছে, পূজা আয়োজক কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত ওই সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানান। তবে আয়োজক কমিটির বাকি সদস্যরা এ সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণের বিষয়ে জানতেন না।
এ বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য সমকালকে বলেন, ‘যারা ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেছেন, তাদের আমরা চিনি না। সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক কেউই তাদের আমন্ত্রণ জানাইনি। আমাদের পরিষদের একজন সদস্যকে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের কথা বলে তারা মঞ্চে উঠে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
সজল দত্তের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য দায়ী ব্যক্তিকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে। সে যদি অপরাধ করে থাকে, আইন তার নিজ গতিতে ব্যবস্থা নেবে। আমরা সংগঠনের পক্ষ নেব না। এ ঘটনাটি আইনের আওতায় আসুক। আইন আইনের গতিতে চলবে। যে দায়ী হোক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে লেখা আছে, ‘একটি অরাজনৈতিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন। সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে বদ্ধপরিকর।’
এ প্রসঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের কোনো সংগঠনের সঙ্গে শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী সংগীত পরিবেশন দূরে থাক, জেএম সেন হলেও যায়নি। আমাদের সেখানে গিয়ে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করার প্রশ্নই ওঠে না।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী সমকালকে বলেন, ‘যারা সংগীত পরিবেশন করেছেন, তারাও পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে এসেছিলেন। পূজা উদযাপন পরিষদের অনুমতি নিয়ে তারা সেখানে সংগীত পরিবেশন করেছেন। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই হচ্ছে। কিন্তু এখানে কোনো সমস্যা নেই। তবুও আমরা এ বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করছি। তারা অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট