পেটের দায়ে পায় হেঁটে জাতীয় সংসদের পার্শ্বের প্রশস্ত ফুটপাথ দিয়ে খামার বাড়ী থেকে খেজুর বাগান হয়ে বিজয় স্মরণী যেতে হয়। কিন্তু, মাস খানেক আগে থেকে দেখছি, প্রশস্ত ফুটপাথের আজ একটি ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, পরের সপ্তাহে দেখি অন্য একটির ঢাকনা নেই, এমনকি দেখছি ম্যানহোলের ঢাকনা লাগানোর ফ্রেম পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ল। অথচ, জাতীয় সংসদ পাহাড়া দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে গত সরকারের শেষের দিকে ট্যাঙ্ক, জলকামান সহ সুসজ্জিত প্রহরীদল সয়ংক্রিয় বন্দুক, রিবলভর সহ বীরদর্পে পাহাড়া দিত, দেখে গা শিউরে উঠার উপক্রম হত। সরকার পতনের পর ট্যাঙ্ক, জলকামান না থাকলেও আনছার, পুলিশ সহ জাতীয় সংসদের নিজস্ব কর্মী বাহিনীতো আছেই, তার পরও একের পর এক ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় বড় বড় গভীর গর্তে যে কোন সময় পথচারী দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে। অন্যদিকে পাহাড়াদার থাকার পরও হারিয়ে যাওয়া ঢাকনা নতুন করে প্রতিস্থাপনের ব্যয় যদি জনগণকেই বহণ করতে হবে, তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে জাতীয় সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিরাপত্তা বাহিনীর দরকার কি শুধু খোশ-গল্প করে আয়েশী সময় কাটানো আর মাস শেষে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ করা। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ ধার মে মাল ও ধার মে ঢাল।
শীতের আগমণ নতুন সবজী বাজারে আসা শুরু করেছে, তার পরও সবজী সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য মানুষের নাগালের বাহিরে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাস্তব অবস্থা ও পত্র-পত্রিকার সংবাদে দেখা যাচ্ছে শেয়ার বাজারের অবস্থা খুব লাজুক। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে, নতুন দরবেশ বাবার আর্বিভাব হয়েছে। সেটি গবেষণার ব্যাপার বইকি? বাস্তবে শেয়ার বাজারের দর আশংকাজনক হারে কমেছে। যদি দাম, সূচক বাজার চাহিদা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত, তাহলে সরকার যেই ঘোষণা দিল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আর সাথে সাথেই মূল্য সূচক ঊর্ধ্বমূখী। তা হলে কি আমরা ভাবো ‘ডাল ম্যা কুচ হ্যায়’।
বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রিয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগ। শোনা যাচ্ছে সরকার এ খাতের নিয়ন্ত্রনের জন্য নতুন একটি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে। অতিব ক্ষুদ্র অধমের নিবেদন থাকবে আলাদা কমিশন করে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় না করে বাংলাদেশ ব্যাংক সহ দেশে বিদ্যমান সকল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঘইজ, ঝঊঈ নিয়ে একটি স্থায়ী ফেড়ারেশন গঠন করা। প্রত্যেক সদস্য প্রতিষ্ঠান একজন করে প্রতিনিধি প্রেরণ করবে। প্রতিনিধিদের বেতন-ভাতা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান বহন করবে। প্রতিনিধিরা ব্যাংকিং, অর্থব্যবস্থা, শেয়ার বাজার, রাজস্ব ব্যবস্থা, বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞ হবেন। প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ভোট দানের অধিকার থাকবে এবং সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে ৭/৯ সদস্যের নির্বাহী বোর্ড গঠিত হবে। তারাই নিবার্হী দায়িত্ব পালন করবে।
ব্যাংক সহ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীতে একই পরিবারের ৫% এর ঊর্ধ্বে শেয়ার ধারণকারী ৪ জন পরিচালক নিযুক্তির বিধান বাতিল করা সহ সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ২০১০ সালে পরিচালকদের নূন্যতম ২% শেয়ার ধারণের বিধান চালু করা হয়। আজ প্রায় ১৪ বছর অতিক্রান্ত। বর্তমানে নূন্যতম ৪% শেয়ার ধারণের বিধান চালু হওয়া প্রয়োজন। একই সাথে ওহফবঢ়বহফবহঃ/স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের নামে সরকারের প্রভাবশালীদের আয়া, বুয়া, চামচা, প্রভাবশালী পরিচালকদের আতœীয়-স্বজন নিয়োগের ভন্ডামী পরিবর্তন করে, বরং সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্য থেকে যারা শেয়ার বাজার, অর্থব্যবস্থা, রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের মধ্য থেকে স্বাধীন/ পরিচালক নিয়োগের জন্য আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। একই সাথে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জুন, ডিসেম্বর এ ঋণগ্রহীতাদের লিমিট বৃদ্ধি করে জবপড়াবৎু/আদায় দেখানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
তাছাড়া কমিশন গঠনের সুফল পাওয়ার জন্য লেভেল প্লেন ফিল্ড তৈরীর লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক বেসরকারী মালিকানায় ছেড়ে দিতে হবে। না হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বর্তমানে যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিমকে সহায়তা করেনা, তেমনি নতুন কমিশনকে সহায়তা না করলে কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য হবে। তাছাড়া ব্যাংক সরকারী প্রতিষ্ঠান হলেও ব্যাংক, রেলওয়ে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, বাংলাদেশের ব্যাংক ও রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ নিজেদের সরকারী কর্মচারী হওয়ায় তাদের মনোভাব গ্রাহক আসুক আর না আসুক তাদের বেতন-ভাতা হবেই। সেবা না পাওয়ায় জনগণ এ প্রতিষ্ঠানগুলো এডিয়ে চলে। ফলে ব্যাংকগুলো আমানত স্বল্পতায় ভোগে বছরের পর বছর লোকসান করে চলছে। আর সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ অর্থ ব্যয় করের জনগণের উপর করের বোঝা বাড়াচ্ছে। জনগণের সুবিধা বৃদ্ধি না করে শুধু করের বোঝা বাড়ালে ইতোমধ্যে প্রতিধ্বনিত হওয়া আওয়াজ বড় হবে ‘আগেই ভালো ছিল’।
(লেখকঃ এ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট)
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট