বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে এই গানটি গেয়েছিলেন মানবতার কণ্ঠস্বর ভূপেন হাজারিকা। বাংলা ও বাংলাদেশের প্রতি অসম্ভব ভালবাসা ছিল তার। আনন্দবাজার পত্রিকায় এক মন্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের পরই সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসাবে মনোনীত হয় ভূপেন হাজারিকার গান ‘মানুষ মানুষের জন্য’। বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের প্রতি তাঁর যে টান এ টান নাড়ীর না হলেও প্রাণের। বাংলাদেশে সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ভূপেন হাজারিকা তাঁর ‘আমি এক যাযাবর ’গ্রন্থে বলেছেন: ‘কিছুদিন আগে ঢাকার একটা কাগজে আমার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সাক্ষাৎকারের হেডিং ছিল, ‘বঙ্গ সংস্কৃতির স্ফূরণ’–আমি ঢাকায় দেখেছি। কোনো দ্বিমতই নেই–বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক বেশি পরীক্ষা-নীরিক্ষা ঢাকায় আমার চোখে পড়েছে। আমি তো ভেবেছিলাম, বিগত আন্দোলনের পর অসমে অসমীয়া সাহিত্যের স্ফূরণ হবে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। কোলকাতার চোখে পড়েছে গোষ্ঠীচক্র, অহঙ্কার আর শভিনিজম। একসময় বঙ্গ-সংস্কৃতির জন্য সারা পৃথিবী যেমন কোলকাতার দিকে তাকিয়ে থাকত, আজ ঠিক সেইভাবে তাকিয়ে থাকে ঢাকার দিকে। প্রমাণিত হয়ে গেছে, বঙ্গ সংস্কৃতির গভীরতা কোলকাতার চেয়ে ঢাকায় অনেক বেশি।’ আসামে জন্ম নিয়ে তাঁর এই বাংলাপ্রীতি আমাদের অনেককে অবাক করে, শেখায়ও তার চেয়ে বেশি কিছু। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত প্রসাদ পত্রিকার জুলাই ১৯৮৭ সংখ্যায় প্রকাশিত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৯)-এর একটি লেখা থেকে থেকে কিছুটা তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না। তিনি লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন বাংলায় বসবাস করার ফলে বাংলার প্রতি ওর মমত্ববোধ স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু অসমের প্রতি বিশেষতঃ সেখানকার মানুষদের প্রতি ওর আকর্ষণ কোনোদিন তো কমেনি, বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। তবে আমার মতে, ভূপেনের কোনো সীমারেখা নেই। সে আজ শুধু বাংলা বা শুধু অসমের, এমনকি সারা ভারতবর্ষেরও না, সারা পৃথিবীর।’
সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মানবতাবাদী। আর মানবতাবাদীদের কাছে তার গান আজ স্লোগান। তিনি ভূপেন হাজারিকা। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পীর মৃত্যুদিবস আজ।২০১১ সালের ৫ নভেম্বর কিংবদন্তিতুল্য এই শিল্পীকে আমরা হারিয়েছি। মহান শিল্পীকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
“জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ”-লিঙ্কে ক্লিক দিয়ে গানটি শুনুন-