১৯৯৮ এ নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন তার কল্যান অর্থনীতিতে বলেছেন কারও কল্যাণ বা স্বাধীনাতা ভোগ না কমিয়ে সমাজের কোন একজন ব্যক্তির কল্যাণ বা স্বাধীনতা ভোগ বৃদ্ধিকেই কল্যাণ অর্থনীতিতে উন্নয়ন।
আমাদের দেশের একধিক সরকারি সেবা সংস্থা রয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্ব ইজঞঅ, ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ফুটপাথ নির্মাণ, সুন্দর্য্য বর্ধণ, পয়নিষ্কাশন, ময়লা পরিস্কার করার সেবা দেয় সিটি কর্পোরেশনের, পানি সরবরাহের সেবা দেয় ডঅঝঅ। বিদ্যুৎ সরবরাহ সেবা দেয় উঊঝঈঙ সহ প্রভৃতি সেবা সংস্থা। পথচারী চলাচলের জন্য ফুটপাথ নির্মাণ করা, সুন্দর্য্য বর্ধণ নিশ্চয় উন্নয়ন মূলক কাজ। যা দেখভাল সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ করলেও আবার একই সংস্থা রাস্তা পাড়াপারের জন্য ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের সময় ফুটপাথকে পথচারির চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। উদাহণর হিসাবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, বেগম রোকেয়া হল এবং আইন-বিচার প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মাঝে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজ সহ অসংখ্য ফুটওভারব্রিজ পথচারি চলাচলে প্রতিবন্ধক। আবার, শহরের ময়লা-আবর্জনা রিসাইকেল করা নিশ্চয় আধুনিক কালে একটি নতুন উদ্ভাবন এবং উন্নয়নমূলক কাজ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, প্রগতিস্মরণী রোডের নতুন বাজারে রিসাইকেল স্টেশনটি স্থাপন করা হয়েছে পথচারী চলাচলের ফুটপাথের উপর, অনুরূপভাবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও কলাবানের মাঝের রিসাইকেল স্টেশন এবং বংশালের নয়াবাজার মোড়ের রিসাইকেল স্টেশন ও পথচারী চলাচলের ফুটপাথের উপর নির্মাণ করা হয়েছে, বলতে গেলে সকল রিসাইকেল স্টেশনই ফুটপাথের উপর নির্মাণ করা হয়েছে। উল্লেখিত রিসাইকেল স্টেশনগুলো পথচারীকে বাধ্য করে মূল-রাস্তাদিয়ে হেটে যেতে। এতে এক দিকে যেমন যানজন সৃষ্টি হয়, আবার দুর্ঘটনা ঘটে। আবার রাস্তার যানচলাল নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত আনসার, পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে পথচারী চলাচলের ফুটপাথের উপর পাকা ঘর নির্মাণ করে বসে বসে খোশ গল্প করে আয়েশী সময় পার করছে। উদাহরণ হিসাবে ধোলাইখালের দয়াগঞ্জ মোড়, নতুন বাজার, ভাটরা থানার সামনের রাস্তার ফুটপাথ সহ অসংখ্য জায়গায় কংক্রিটের স্ট্রাকচার নির্মাণ করে ফুটপাথে পথচারীচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা নির্মাণ একটি উন্নয়ন মূলক কাজ সন্দেহ নেই। সকল স্তারের মানুষের চলাচলের সুবিধা হয়। কিন্তু, দুইদিন যেতে না যেতেই ডঅঝঅ, কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগ, কিংবা ইঞজঈ রাস্তা খনন করে আর একটা উন্নয়ন করে। প্রতিনিয়ত, একটি উন্নয়নমূলক কাজের সুফল অন্য একটি উন্নয়ন মূলক কাজের দ্বারা প্রতিবন্ধক হচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় আমাদের দেশের সেবা সংস্থাগুলো জনাব সেন এর কল্যান অর্থনীতির ধারণাকে ব্যর্থ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে, যাতে কোন ভাবেই তার ধারণা সফলাতার মুখ না দেখতে পারে।
এক সময় তামাক আমাদের দেশের অর্থকরি ফসল ছিল। দেশে রংপুর তামাক উৎপাদনে পরিচিত ছিল। মানুষ ৩ টাকা প্যাকেট আজিজ বিড়ি কিনে খেত। অন্যান্য বিড়ি ও সিগারেটের মূল্য ছিল তামাক খোড়দের হাতের নাগালে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রেসক্রিপশন দিল তামাক খেলে অল্প কিছুদিনে মধ্যে সমস্ত বাংলাদেশী মরে ভূত হয়ে যাবে। অপরূপ বাংলা অরণ্য হয়ে যাবে। এই দুঃখে আমাদের দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে তামাক নিধন আন্দোলন শুরু হলো, এক সময় দেশের স্বাভাবিক তামাক চাষ বন্ধ হয়ে গেল। তামাক নিধন আন্দোলনের পূর্বে মানুষ দেশীয় টাটকা পাতার আজিজ বিড়ি ৩ টাকা প্যাকেট কিনে খেত, আন্দোলনের পর বিড়ির সুক বিদেশ তথা ইংল্যান্ড, আমেরিকা থেকে আমদানী করে মানুষ ২৫ টাকা প্যাকেট বিড়ি কিনে খায়। আন্দোলনের আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাপ-দাদার বাড়ী থেকে যে গোল্ডলিফ, ৫৫৫, নেভি সিগারেট আসত তার দাম ছিল ১৫-৩০ টাকা প্যাকেট। আন্দোলনের পর মানুষ তা কিনে খায় প্রতি একক (পিচ) ১৫-৩০ টাকা দরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসক্রিপশনে আমাদের দেশের তামাক উৎপাদন বন্ধ হলেও ইউরোপ, আমেরিকা আমাদের দেশে তামাক ও সিগারেট রপ্তানী করে চলেছে।
প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বায়নের যুগে পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন দেশীয় অর্থনীতিতে ও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিরা-উপশিরায় ওতপ্রতভাবে গেথে গেছে। পলিথিন গন্ধক জাতীয় প্লাষ্টিক যা পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিনেও মাটিতে পচেনা। পরিথিন মাটির উর্বরা শক্তি নষ্ট করে। তাছাড়া শহরে পলিথিন পয়নিষ্কাশনের নালায় জমে পয়নিষ্কাশনের গতি রোধ করে জলবদ্ধতার সৃষ্টি করে। তার পরও এর সহজ লভ্যতা ও সহজে ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা অশংকাজন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর উৎপাদন বাজারজাত করণের সাথে দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের আয়-উপার্জন জীবন ও জীবীকা জড়িত। মাননীয় উপদেষ্টা পরিবেশ ও বন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরকার দেশ থেকে পরিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ কর্ েআইন করেছে। নিশ্চয় পরিবেশ উন্নয়নের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে পদক্ষেপ যেন ২০০৭-২০০৮ সালে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নামে এ্যানার্জি বাল্ব বিক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। দেশে ধুমপান প্রতিরোধে ধুমপান নিরোধ আইন আছে, নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য আইন আছে, তার পর ও এ অপরাধগুলো জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পলিথিন নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে প্লাষ্টিক উৎপাদনের কাচামাল আমদানীকারক, উৎপাদক, বাজারজাতকারী, দোকানদার, দোকান মালিক সমিতি সর্বপরি ব্যবহারকারীর মাঝে সচেতনাতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রেডিও, টিভিতে প্রচার প্রচারণা সহ সভা সমাবেশ করা সহ আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রমে পলিথিন ব্যবহারের অপকারিতা ও পরিবেশ দূষণ বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা প্রয়োজন। পলিথিন বিষয় অধ্যয়নের সময় শিক্ষার্থীদের শ্রেণী ভেদে নিজ পরিবার সহ ৫-১০টি পরিবারকে পলিথিনের কুপ্রভাব অপকারিতা বিষয়ে সচেতন করার এ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া যেতে পারে। চলমান এরূপ প্রক্রিয়াই পারে দেশ থেকে পলিথিন ব্যবহার প্রতিরোধ করার সফল উপায়।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট