১১ নভেম্বর বেদনাবিধুর বাবুরপুকুর দিবস। একই সঙ্গে কুমিল্লার বেতিহারা দিবস। দিবস দুটি উপলক্ষ্যে অদ্যই সোমবার সকাল ৯ টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বগুড়া জেলা কমিটি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদ যৌথভাবে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুর স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাবুরপুকুর স্মৃতিসৌধের পাদদেশে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদের সভাপতি ছাব্বির আহম্মেদ রাজের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আলোচনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, কৃষক সমিতি বগুড়া জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার পাল, সিপিবি বগুড়ার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সাজেদুর রহমান ঝিলাম, ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা লিয়াকত আলী কাক্কু, সদর উপজেলার সভাপতি শুভ শংকর গুহ রায়, রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন বগুড়া জেলার সদস্য সচীব শামীম মোল্লা, যুব ইউনিয়ন বগুড়া জেলার সদস্য মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক জয় ভৌমিক প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন “১৯৭১ সালের এই দিনে এই দেশীয় দোষরদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী বাবুরপুকুরে নৃশংসভাবে হত্যা করে শহরের ঠনঠনিয়া সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ১৪ জন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের। শহিদদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়ার সাবেক সভাপতি মান্নান পশারী, তার ছোট ভাই শহর ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হান্নান পশারী, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী সাইফুল ইসলাম, টিএনটির অপারেটর নূরজাহান প্রমুখ । দেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে সরকার কর্তৃক ১৪ জনকে শহিদ স্বীকৃতিপত্র ও শহিদ পরিবারদের সরিয়ে ২০০০ করে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু শহিদরা এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং তাদের পরিবার শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। তাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কেউ কোনো যোগাযোগ রাখেনি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এই ১৪ জন শহীদদের অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।”
বক্তারা আরো বলেন, ” স্বাধীনতার অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার। কিন্তু তা আজ ভুলন্ঠিত। গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা উপেক্ষিত। বিগত শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আকাঙ্ক্ষার উল্টো পথে দেশ পরিচালনা করেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ নির্ভরতা ও পুঁজিবাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে , শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে যাতে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন এবং ফ্যাসিবাদী সরকার পুণরায় প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য ছাত্র জনতাকে সদা সচেতন থাকতে হবে।কুমিল্লার বেতিয়ারায় ন্যাপ- কমিউনিস্ট পার্টি- ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী এবং পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে যে ৯ জন শহীদ হয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন তাদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। ২০২৪ এ জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন সমাজ তথা শ্রেণিহীন সমাজ নির্মাণে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে আমরা রুখবোই।”
এছাড়া বক্তারা ১৪ জন বীর শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দান, প্রশাসনিক ভাবে বাবুর পুকুর দিবস পালন, প্রশাসনকে বাবুর পুকুর স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণের দাবী জানান।
বেলা ১১ টায় খান্দার মোড়ে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় বক্তারা বাবুরপুকুর গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরেন এবং শহীদদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রাম জোরদার করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।