1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ হয়রানিমূলক ধারা বাদ, বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের সুযোগ সীমিত আরব বসন্ত ও বাংলাদেশ বিশ্বের ক্ষুদ্রতম নদী রো আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী তিন বাহিনীর পোশাকের ডিজাইনারকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন শিল্পী আসিফ আকবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় গাছ থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার শুধু রাজস্ব আদায় করবে এনবিআর বাঁওড় ইজারা বাতিল করে জেলেদের স্বার্থে জলমহাল নীতিমালা প্রণয়নে দেশব্যাপী স্মারকলিপি পেশ অভিনয়ের বাইরে র‌্যাম্পেও ঝলমলে রুনা খান অতি বিপ্লবী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি কাম্য নয়: মির্জা ফখরুল

জলমহাল নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে বাঁওড় ইজারা বাতিলে সোচ্চার বলুহরসহ ভুক্তভোগী বাঁওড় জেলেরা

সুজন বিপ্লব
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বলুহরসহ ৬ টি বাঁওড়ে জলমহাল নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁওড়ের উপর নির্ভরশীল জেলে পরিবারগুলো। ঝিনাইদহের ৫ টি ও যশোর ১টি মোট ৬টি বাঁওড় থেকে উচ্ছেদের ফলে চরম দুর্ভোগে পতিত ৩০ হাজার জেলে পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। দেশের সব বাঁওড়ে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে দেশব্যাপী বাঁওড় ইজারা বাতিল করে জীবিকা ও পরিবেশ সুরক্ষায় ৪ দফা দাবিতে বিক্ষুব্ধ মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠী ওঠেছে।

বলুহরসহ ৬টি বাঁওড়ে সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি, ২০০৯ এর বি‌ভিন্ন ধারা লঙ্ঘ‌ন প্রস‌ঙ্গে ঝিনাইদহ ও যশোর জেলা প্রশাসক ও সভাপ‌তি, জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা ক‌মি‌টি, ঝিনাইদহ এবং যশোর ববারব স্মারকলিপি দেওয়া সত্ত্বেও সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ভূ‌মি মন্ত্রণালয়ে সায়রাত – ১ অ‌ধিশাখা এর ১৪/০৯/২২ খ্রিঃ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৫০.৬৮.০২০.০৯ অংশ ৫৩৯ সংখ্যার স্মারক প‌ত্রের প্রেক্ষি‌তে উন্নয়ন প্রক‌ল্পের আওতায় সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি, ২০০৯ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কর্তৃক বাঁওড় ইজারার বিজ্ঞ‌প্তি প্রকাশ করা হয় । পরবর্তী‌তে সরকা‌রি জলমহাল ইজারা প্রদান সংক্রান্ত ক‌মি‌টির ৭৩ (তেয়াত্তর) তম সভায় ঝিনাইদহ জেলার ম‌হেশপুর ও কোটচাঁদপুর থানার অর্ন্তগত বলুহর বাঁওড় (বদ্ধ) কোটচাঁদপুর মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লিমি‌টেড, জয়‌দিয়া বাঁওড় (বদ্ধ) রামচন্দ্রপুর মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লিমি‌টেড, কাঠগড়া বাঁওড় (বদ্ধ) কাঠগড়া মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লিমি‌টেড এর নিকট বাঁওড়গু‌লো উন্নয়ন প্রক‌ল্পে (১৪৩০-১৪৩৫) বঙ্গাব্দ মেয়া‌দে ইজারা প্রদা‌নের সিধান্ত গৃ‌হীত হয়।

ইজারা প্রদানকা‌লীন সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি, ২০০৯ এর নিম্ন‌লি‌খিত বি‌ভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করা  হয়।

১. সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি ২০০৯ এর ২ নং ধারা অনুযায়ী ইজারকৃত স‌মি‌তির সকল সদস্য প্রকৃত মৎস্যজীবী ন‌হে অর্থাৎ সমি‌তির প্রত্যেক সদস্য প্রাকৃ‌তিক উৎস হ‌তে মাছ শিকার এবং বিক্রয় ক‌রে জী‌বিকা নির্বাহ ক‌রে না এরূপ স‌মি‌তির নিকট জলমহাল ইজারা প্রদান করা হয়। সংযুক্তি : সরকারি জলমহল ব্যবস্থাপনা নী‌তি ২০০৯, ধারা ২ এর ক, খ অনু‌চ্ছেদ।

২. ইজারাগ্রহীতা স‌মি‌তির প্রত্যেক সদস্য কার্ডধারী প্রকৃত মৎস্যজীবী এই ম‌র্মে উপ‌জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা প‌ক্ষে উপ‌জেলা মৎস্য কর্মকর্তা/ সি‌নিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কর্তৃক কোন প্রত্যয়নপত্র নেই। ইজারাগ্রহীতা স‌মি‌তির সকল সদস্যদের জাতীয় মৎস্য কার্ড ও প‌রিচয়পত্র নেই এবং সদস্য সংখ্যা সু‌নি‌র্দিষ্ট নয় ও ইজারাগ্রহীতা স‌মি‌তির স‌দস্যরা বি‌ভিন্ন পেশার সা‌থে জ‌ড়িত। সংযুক্তি : সরকারি জলমহল ব্যবস্থাপনা নী‌তি ২০০৯, ধারা ৫ এর ১,২,৩ অনু‌চ্ছেদ।

ইজারা পরবর্তী‌ সম‌য়ে ইজারাগ্রহীতা সমি‌তি কর্তৃক সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি, ২০০৯ এর নিম্ন‌লি‌খিত বি‌ভিন্ন ধারা লঙ্ঘিত হ‌চ্ছে।

১. ইজারাগ্রহীতা স‌মি‌তির সদস্যরা ইজারকৃত বাঁওড় নি‌জেরা ভোগদখল না ক‌রে মৌ‌খিকভা‌বে বি‌ভিন্ন ব্যক্তিব‌র্গের নিকট সাব‌লিজ দি‌য়ে‌ছে এবং সাব‌লিজ নেওয়া ব্যক্তিদের বেতনভুক্ত কর্মচা‌রীর মাধ্যমে ইজারাকৃত বাঁওড়গু‌লো রক্ষাণা‌বেক্ষণ, তত্বাবধায়ন ও প‌রিচা‌লিত হ‌চ্ছে, যা সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি, ২০০৯ এর ৯ ধারা প‌রিপন্থী। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯ এর অনুচ্ছেদ ৯ এ বলা হয়েছে, ইজারাকৃত জলমহালগুলো কোনক্রমেই সাবলিজ দেয়া যাবে না, যদি সাবলিজ দেয়া হয় তাহলে উক্ত জলমহালের ইজারা জেলা প্রশাসন /উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাতিল করবেন এবং জামানতসহ জমাকৃত ইজরামূল্য সরকারে অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। সংযুক্তি : সরকারি জলমহল ব্যবস্থপনা নী‌তি ২০০৯, ধারা নং ৯।

২. প্রাকৃ‌তিক ভা‌বে মা‌ছের বংশ বৃ‌দ্ধির ল‌ক্ষ্যে পূ‌র্বের তৈ‌রিকৃত কু‌মোড় ধ্বংস করা হ‌য়ে‌ছে যা মা মা‌ছের প্রজনন ও বংশ বৃ‌দ্ধির ব্যঘাত ঘটা‌চ্ছে এবং বাঁওড়ের প্রাকৃ‌তিক প‌রি‌বেশ নষ্ট হ‌চ্ছে। মা মাছের ‌ডিম ও পোনা সংরক্ষ‌ণের জ‌ন্য বাঁওড়ের নি‌দিষ্ট কোন স্থানে অভয়াশ্রম সৃ‌ষ্টি করা হয়‌নি এবং অবা‌ধে বি‌ভিন্ন প্রজা‌তির দে‌শি মাছ ও পোনা নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রে‌খে‌ছে। বি‌ভিন্ন ধরণের নি‌ষিদ্ধ কা‌রেন্ট জাল ব্যবহৃত হ‌চ্ছে এবং মাছ চা‌ষে বিষাক্ত রাসায়‌নিক সার, ঔষধ, ও কিটনাশ‌ক ব্যবহার ও অ‌তি‌থি পাখি শিকার করা হ‌চ্ছে। সংযুক্তি : সরকারি জলমহাল ব্যবস্থপনা নী‌তি ২০০৯, ধারা নং ২৫, ২৭।

৩. স‌ঠিক ইজারামূ‌ল্য গোপন, ইজারামূ‌ল্যের টাকা ব‌কেয়া, লীজের টাকা প‌রি‌শোধে বিলম্ব করা এবং ইজারার অর্থ আং‌শিক ও কি‌স্তি‌তে প‌রি‌শোধ প্রভৃ‌তি। সংযুক্তি : সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি ২০০৯, ধারা নং ৫ এর ৪ (ঞ) ও ১১ নং অনু‌চ্ছেদ এবং ৭ এর ৭ নং অনু‌চ্ছেদ।

৪. উন্নয়ন প্রক‌ল্পে ইজারাকৃত জলমহালগু‌লো প্রকৃত ম‌ৎস্যজীবী‌দের দারিদ্র বি‌মোচন ও আর্থ সাম‌জিক উন্নয়ন ও মৎ‌স্য সম্পদ বৃ‌দ্ধি‌তে কাং‌ক্ষিত সুফল দি‌তে পারছে না। সংযু‌ক্তি : সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি ২০০৯,  ধারা নং ৩ এর ঘ।

জেলাপ্রশাসক ম‌হোদ‌য়ের নিকট সবিনয় লিখিত আবেদনে উক্ত অ‌ভি‌যোগের ভি‌ত্তি‌তে দ্রুত এক‌টি তদন্ত দল গঠন ক‌রে বাঁওড়গু‌লো পরিদর্শন ক‌রে সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি, ২০০৯ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহ‌ণের জন্য বি‌শেষ ইতোমধ্যে অনু‌রোধ জানানো হলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি বলে জানান, বলুহর মৎ‌স্যজীবী সমবায় সমিতি লি. সভাপতি গোপাল হালদার, জয়‌দিয়া মৎ‌স্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লি. সভাপতি শীতল হালদার, ছয় বাঁওড় সুফল‌ভোগী মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লি. সভাপতি নির্মল হালদার।

বিগত সময়ে জনস্বা‌র্থের কথা বি‌বেচনা ক‌রে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ৪টি বাঁওড় (ফতেপুর, কাঠগড়া, বলুহর, জয়দিয়া বাঁওড়) ও যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার বেড় গো‌বিন্দপুর বাঁওড়সহ মোট ৫টি বাঁওড়ের ইজারা চু‌ক্তি (১৪৩০-১৪৩৫ বঙ্গাব্দ) মেয়াদ হ্রাস / বা‌তিল ক‌রণ এবং ভূ‌মি মন্ত্রণালয় ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণাল‌য়ের মধ্যকার স্বাক্ষ‌রিত সমঝোতা স্মারক (MoU) এর মেয়াদ আগা‌মী ১লা কা‌র্তিক ১৪৩১ হতে ৩০ চৈত্র ১৪৬১ বঙ্গাব্দ (ত্রিশ বছর) পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

তৎকালীন মাননীয় মন্ত্রীকে সবিনয়ে  উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোকে জানানো হয় যে, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর ও কাঠগড়া বাঁওড়, কোটচাঁদপুর উপজেলায় বলুহর ও জয়দিয়া বাঁওড়, কালীগঞ্জ উপজেলায় মর্জাদ বাঁওড় এবং যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড় অবস্থিত, যা ০১-০১-২০১২ খ্রি. তারিখ মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয় এর মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে মৎস্য অধিদপ্তর হতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন পূর্বক রাজস্ব ব্যয়ে পরিচালিত হয়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উল্লিখিত ০৬ টি বাঁওড় মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট সুফল ভোগীদের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ‘Oxbow Lake Fisheries Project-1’ শিরোনামে ১৯৭৯ সাল হতে ৩০ বছর মেয়াদে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, অফিস, আবাসিক ভবন ও গার্ডশেড নির্মাণ এবং পুকুর পুনঃ খননসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সাল হতে ‘বিল ও বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ শিরোনামে পরিচালিত প্রকল্প এর আওতায় উক্ত ০৬ টি বাঁওড় ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক রাজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়। অতঃপর ১৯৯৮ সালে উল্লিখিত ‘বিল ও বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ সমাপনান্তে স্থায়ী কার্যক্রম হিসাবে পরিচালিত নিমিত্ত ‘বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প’ শিরোনামে রাজস্ব ব্যয়ে ৩য় গ্রেডের একজন প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত পরিচালক) কর্তৃক বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প, যশোর এর আওতায় পরিচালনা শুরু হয়। বর্তমানে বর্ণিত ০৬ টি বাঁওড়ের জন্য প্রকল্প পরিচালক এর দপ্তরসহ বাঁওড় ব্যবস্থাপক বৃন্দের দপ্তর, বিভিন্ন অবকাঠামো, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও অন্যন্য স্থাপনাসহ স্থায়ী জনবল রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক এর দপ্তরে প্রকল্প পরিচালকসহ ০৩ জন কর্মকর্তা ও ২০ জন কর্মচারী, প্রতিটি বাঁওড়ে ০১ জন বাঁওড় ব্যবস্থাপক ও ০১ জন সহকারি হ্যাচারি অফিসারসহ এ ০৬ টি বাঁওড়ে ১২ জন কর্মকর্তা এবং ৭৫ জন কর্মচারীসহ সর্বমোট ১১০ জনের অনুমোদিত স্থায়ী জনবল রয়েছে। রেণু উৎপাদন ও মাছের পোনা লালন-পালন পূর্বক উল্লিখিত ০৬ টি বাঁওড়ে সরবরাহের জন্য ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলায় নিজস্ব স্থায়ী জনবল ও ২৯ টি পুকুরসহ ৪১.৭ হে. আয়তন বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেতা বয়েছে। তাছাড়া, মৎস্য চাষি ও বাঁওড়ের সুফল ভোগীদের নাছটায় ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় হ্যাচারি কমপ্লেক্স, কোটচাদপুর এর অভ্যন্তরে একটি মৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলায় ফতেপুর ও কাঠগড়া বাঁওড়ে ৪৫০টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় বলুহর ও জয়দিয়া বাঁওড়ে ৬৭২ টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় মর্জাদ বাঁওড়ে ২৪৫টি এবং যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ে ২১০ টি মৎস্যজীবি পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। বাঁওড়ে মৎস্য উৎপাদন কার্যক্রম আমিষ ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, জেলেদের জীবন মান উন্নয়ন, জলজ জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দরিদ্রতা হ্রাস ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্ণিত বাঁওড় সমূহের সুফল ভোগী দরিদ্র মৎস্যজীবীগণ বাঁওড়ে উৎপাদিত চাষযোগ্য মাছের ৪০% লভ্যাংশ এবং আহরণকৃত দেশীয় প্রজাতির ছোটমাছ (রাণীমাছ) এর ১০০% ভোগ করে থাকেন। মাছ উৎপাদন এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর সংরক্ষণ ও নির্ভিঘ্ন প্রজননের স্বার্থে উল্লিখিত ০৬ টি বাঁওড়ের জলজ বাস্তুসংস্থান অক্ষুণ্ণ রেখে কোন প্রকার সার ও মাছের খাদ্য প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ উৎপাদন করা হয়। সুফল ভোগীদের সরাসরি অংশ গ্রহণে অভয়াশ্রম তৈরি, মেরামত ও বাঁওড় ব্যবস্থাপকদের কার্যালয় কর্তৃক তত্ত্বাবধায়নকৃত অভয়াশ্রম মাছের অবাধ প্রজনন ও আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে। তাছাড়া, মা মাছ ও ছোট আকারের কার্প জাতীয় মাছের পোনা নিধন না করে এগুলোর বৃদ্ধির সুযোগ প্রদানে মৎস্য জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে উল্লিখিত বাঁওড়  সমূহে দেশী পুটি, শিং, কৈ, পাবদা, ফলি, মেনি, খলিসা, খয়রা, টেংরা, বাটা, গুতুম, কাকিলা, দেশী সরপুটি, বাইন, শোল, টাকি, গজার ইত্যাদির জীববৈচিত্র্য অনেকটাই অক্ষুন্ন রয়েছে। বাঁওড় সমূহে এভাবে জীববৈচিত্র রক্ষা করতে পারলে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ টিকিয়ে রাখা সম্ভবপর হবে এবং আধুনিক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রজনন ও অন্যান্য গবেষণার মাধ্যমে এসব প্রজাতি ভবিষ্যতেও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

গত ১৪/ ০৯ / ২২ তা‌রি‌খে ভূ‌মি মন্ত্রণালয়ে সায়রাত – ১ অ‌ধিশাখা এর  ৩১.০০.০০০০.০৫০.৬৮.০২০.০৯ অংশ ৫৩৯ সংখ্যার স্মারক প‌ত্রের প্রেক্ষি‌তে উন্নয়ন প্রক‌ল্পের আওতায় সরকা‌রি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নী‌তি, ২০০৯ অনুযারী বাঁওড় ইজারার বিজ্ঞ‌প্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী‌তে সরকা‌রি জলমহাল ইজারা প্রদান সংক্রান্ত ক‌মি‌টির ৭৩ (তেয়াত্তর) তম সভায় ঝিনাইদহ জেলার ম‌হেশপুর ও কোটচাঁদপুর থানার অর্ন্তগত বলুহর বাঁওড় (বদ্ধ) কোটচাঁদপুর মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লি. জয়‌দিয়া বাঁওড় (বদ্ধ) রামচন্দ্রপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. কাঠগড়া বাঁওড় (বদ্ধ) কাঠগড়া মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লি. ফ‌তেপুর বাঁওড় (বদ্ধ) ফ‌তেপুর মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তি লি. এবং যশোর জেলার চৌগাছা উপ‌জেলার বেড়‌গো‌বিন্দপুর বাঁওড় (বদ্ধ) মনমথপুর বেড়‌গো‌বিন্দপুর মৎস্যজীবী সমবায় স‌মি‌তির লি. এর নিকট বাঁওড়সমূহ উন্নয়ন প্রক‌ল্প (১৪৩০-১৪৩৫) বঙ্গাব্দ মেয়া‌দে ইজারা প্রদা‌নের সিদ্ধান্ত গৃ‌হীত হয়।

বর্ণিত বাঁওড় সমূহ ইজারা প্রদান করার ফলে সুদীর্ঘ সময় ধ‌রে বাঁওড়ের উপর নির্ভরশীল প্রায় হাজার হাজার প্রকৃত মৎস্যজীবীদের স্থায়ী কর্মহীনতা সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে । মৎস্যজীবীরা বিকল্প কোন কাজ করতে অভ্যস্ত নয়। তারা বংশ পরম্পরায় মাছ আহর‌ণ কর্মকা‌ন্ডের স‌ঙ্গে জ‌ড়িত ও তা‌দের জীবন জী‌বিকার নির্বা‌হের একমাত্র অবলম্বন হ‌চ্ছে এসব বাঁওড়সমূহ। ফ‌লে এক‌টি সম্প্রদা‌য়ের  জীবন ও জীবিকা আজ হুম‌কির সম্মুখীন। এছাড়াও জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, প্রাকৃতিক উপা‌য়ে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং এতদুদ্দেশ্যে নির্মিত সরকারের অবকাঠামো ও কার্যালয় সমূহের ফলপ্রসু ব্যবহার না করাসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাঁওড়সমূহ ইজারা দেওয়ার প্রতিবা‌দে কর্মহীন, নিপী‌ড়িত, ভূ‌মিহীন অসহায় মৎস্যজীবী সম্প্রদা‌য়ের লোকজন বাঁওড় পা‌ড়ে, উপ‌জেলা নির্বাহী অ‌ফিসারের কার্যালয়ে, জেলা প্রশাস‌কের কার্যালয়ে, জাতীয় জাদুঘর এবং জাতীয় প্রেসক্লা‌বে বি‌ভিন্ন কর্মসূ‌চি (মানবন্ধন, প্রতিবাদ সমা‌বেশ, পথসভা, অনশন, বি‌ক্ষোভ মিছিল) শা‌ন্তিপূর্ণভা‌বে পা‌লন ক‌রে‌ছে। কর্মসূ‌চি থে‌কে উপ‌জেলা নির্বা‌হী অ‌ফিসার, জেলা প্রশাসক ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলি‌পি প্রদান করা হয় এবং তা‌দের স্বতঃস্ফূত আন্দোলন এখনও অ‌ব্যাহত র‌য়ে‌ছে। দে‌শের জাতীয় পর্যা‌য়ের বি‌ভিন্ন পত্র প‌ত্রিকা, নিউজ চ্যা‌নেল, প্রিন্ট মি‌ডিয়া, সোশ্যাল মি‌ডিয়া ও অনলাইন পোর্টাল মৎস্যজীবী‌দের আন্দোল‌নের বি‌ভিন্ন স্থির চিত্র ও ভি‌ডিও সম্প্রচার ক‌রে‌ছে। এছাড়া জাতীয় ও স্থানীয় পর্যা‌য়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বি‌ভিন্ন সামা‌জিক সংগঠন মৎ‌স্যজীবী‌দের আন্দোল‌নের প্রতি সমর্থন ও অ‌ভিমত ব্যক্ত  ক‌রেছেন।

উল্লিখিত ০৬ টি বাঁওড়ে মৎস্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মৎস্য অধিদপ্তর হতে প্রতি বছর উৎপাদন কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক মৎস্য উৎপাদন কার্যক্রম বাস্তবায়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিগত ০১-০১-২০১২ খ্রি. তারিখে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে ১ম বার ১ বৈশাখ ১৪১৮ হতে ৩০ শে চৈত্র ১৪২৩ বঙ্গাব্দ এবং ২য় বার ১ বৈশাখ ১৪২৩ হতে ৩০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি পূর্বক মৎস্য ও ‘প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়; যা ৩০ চৈত্র ১৪২৯ (১৩ এপ্রিল ২০২৩ খ্রি.) চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। উক্ত সমঝোতা স্মারক (MoU) দীর্ঘ মেয়াদে বৃদ্ধির জন্য মৎস্য অধিদপ্তর এর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিম্নবর্ণিত পত্র সমূহ প্রেরণ করা হয়।

(০১) মৎস্য অধিদপ্তরের পত্র নং- ৩৩.০২.০০০০.১২২.০২.০১০.১৭.৮৮, তারিখ: ১৬-১১-২০২২ খ্রি.

(০২) মৎস্য অধিদপ্তরের পত্র নং- ৩৩.০২.০০০০.১২২.০২.০১০.১৭.১০১, তারিখ: ০৪-১২-২০২২ খ্রি.

(০৩) মৎস্য ও প্রণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পত্র নং- ৩৩.০০.০০০০.১৩০.৪৫.০০৫.২০.২৬৬, তারিখ: ১৪-০৮-২০২২ খ্রি.

(০৪) মৎস্য ও প্রণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পত্র নং- ৩৩,০০,০০০০.১৩০.৪৫.০০৫.২০.৪৩০, তারিখ: ১১-১২-২০২২ খ্রি.

উল্লেখ্য যে, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলাধীন ECA (Ecologically Critical Area) ঘোষিত “মর্জাদ বাওড়” জলমহালটি প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য এবং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি- এর অর্থায়নে প্রস্তাবিত “Implementing Ecosystem-based Management in Ecologically Critical Areas in Bangladesh” শীর্ষক প্রকল্পের আওতাভুক্ত করেছে এবং জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি, ঝিনাইদহ এর ১৬ আগস্ট ২০২৩ খ্রি . তারিখের সভায় প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষায় ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলাধীন “মর্জাদ বাওড়” ১৪৩০-১৪৩২ সন পর্যন্ত ০৩ (তিন) বছর মেয়াদে ইজারা সংক্রান্তে জেলা প্রশাসক, ঝিনাইদহ ও ইজারা গ্রহীতা নলভাঙ্গা মর্জাদ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি., কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের এর মধ্যে সম্পাদিত ইজারা চুক্তিটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং ইজারা চুক্তিটি বাতিল করে কেবলমাত্র বাংলা ১৪৩০ সনের জন্য ০১ (এক) বছর মেয়াদী করা হয়েছে।

সম্মিলিত বলুহর, জয়দিয়া, কাঠগড়া, মর্জাদ, ফতেপুর, বেড়গোবিন্দপুর ছয় বাঁওড় সুফলভোগী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নির্মল হালদার বলেন, স্মারকলিপিতে উল্লেখিত বিবরণী অনুযায়ী  তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ম‌হোদ‌য়ের নিকট আবেদনে উপ‌রোক্ত ব‌র্ণিত ঝিনাইদহ জেলার ০৪ টি এবং যশোর জেলার ০১ টি সহ মোট ০৫ টি বাঁওড়ের চলমান ইজারার মেয়াদ হ্রাস/ বাতিল ক‌রে ভূ‌মি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণাল‌য়ের মধ্যকার স্বাক্ষ‌রিত সমঝোতা স্মারক (MoU) এর মেয়াদ আগামী ১লা কার্তিক ১৪৩১ হতে ৩০ চৈত্র ১৪৬১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত বৃদ্ধি পূর্বক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে ভুক্তভোগী বাঁওড় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আবারো আশায় বুক বেঁধেছেন বাঁওড় পাড়ের ভূমিহীন, কর্মহীন, বেকার ও নিঃস্ব জেলে সম্প্রদায়। বাঁওড় ইজারা বাতিল ও মৎস্যজীবীদের মালিকানার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ ৪ দফা দাবিতে বলুহর বাঁওড় পাঁড়ে গণবিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। ‘প্রকৃতির জলাধার

মানবোনা টেন্ডার

বাঁওড় মৎস্যজীবীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার’ স্লোগান ধারণ করে বলুহর, জয়দিয়া, কাঠগড়া, ফতেপুর, মর্জাদ ও বেড়গোবিন্দপুরসহ দেশের সকল বাঁওড় ইজারা বাতিল, ভুক্তভোগী মৎস্যজীবীদের প্রথাগত মালিকানার নিশ্চয়তা, ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষণ ও রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা চালুর দাবিতে ৩ নভেম্বর সকাল সকাল ১০ টায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সিংগীয়ায় বলুহর বাঁওড় পাড়ে আয়োজক সংগঠন-বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন, ঝিনাইদহ-যশোর এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণবিক্ষোভে ভুক্তভোগী মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠীর নারী,পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুরা সমবেত হয়।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসী প্রান্তিক মৎসজীবী সম্প্রদায়। প্রাচীন জনবসতি কাল থেকে বংশানুক্রমে ঝিনাইদহ-যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন বাঁওড় সংলগ্ন গ্রামগুলিতে আমাদের বসবাস ও বাঁওড়ে মাছধরা ও বিপণন আমাদের পেশা। নদীর যে বাঁকে অবরুদ্ধ স্রোত ও নিম্নভূমিতে জমে থাকা পানিতে প্রাকৃতিকভাবে বাঁওড়ের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পরিত্যক্ত বাহু বা অশ্বক্ষুরাকৃতির হৃদ হিসেবে বাংলাপিডিয়া সংজ্ঞায়ন করেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে বাঁওড়ের সন্ধান পাওয়া যায়। বাঁওড় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত সংগৃহিত ও সংরক্ষিত নেই। বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহের তথ্য বাতায়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ঝিনাইদহ জেলায় ২২টি বাওড়ের সন্ধান পাওয়া যায়, যার মোট আয়তন প্রায় চার হাজার একর। এছাড়া যশোর জেলায় ১০ টি বাঁওড় মিলে প্রায় এক হাজার একরের সন্ধান পাওয়া যায়। অতীতে এর পরিমাণ আরো বেশি থাকলেও প্রভাবশালীদের দখল, ভরাট ও দূষণে কিছু কিছু বাঁওড় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। বাঁওড় হল বিলের তুলনায় স্থিতিশীল এবং সারা বছর বাঁওড়ে পানি থাকে। প্রাকৃতিকভাবে বাঁওড়গুলো থেকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের যোগান পাওয়া যেত। এই বাঁওড়গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল জেলে পল্লী। ১৯৮০ সালে ঝিনাইদহ জেলার পাঁচটি ও যশোর জেলার একটি বাওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প নামে মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর হয়। বাঁওড়গুলো ছিল ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর ও জয়দিয়া, মহেশপুর উপজেলার কাঠগড়া ও ফতেপুর, কালীগঞ্জ উপজেলার মর্জাদ এবং যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর। এ প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বলুহর রেনু উৎপাদনকারী কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিক্রির পাশাপাশি হ্যাচারির রেনু সরকারি এসবের বাঁওড়েও ছাড়া হত। প্রকল্পের অধীনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাছ চাষে কাজ করত ১ হাজার জেলে পরিবারের ৫ হাজার সদস্য। প্রতিবছর এসব বাওড় থেকে প্রায় ৫শ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হত। উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি অনুযায়ী মৎস্য বিভাগের অর্থায়নে জেলেরা শ্রম দিত। বিনিময়ে উৎপাদিত মাছের ৪০ শতাংশের মালিকানা জেলেদের অধীকারে যেত, বকি ৬০ শতাংশ মৎস্য অধিদপ্তর পেত। এই প্রকল্পের তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল যে এটি মাছের বেড়ে ওঠার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করেই মাছ চাষ করত। যার ফলে কৃত্রিমভাবে ছাড়া রেনু ছাড়াও বিপুল পরিমাণ দেশি জাতের প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদিত হত এবং এই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের নিরঙ্কুশ মালিকানা থাকত অংশগ্রহণকারী জেলেদের। প্রকল্পের ত্রিশ বছর পূর্তির পর ২০২২ সাল থেকে বাওড়গুলো  ভূমি মন্ত্রণালয় বাঁওড়গুলোকে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে নিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ইজারার ব্যবস্থা করেছে। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের এসব বাওড় ইজারা নেয়ার সামর্থ্য নেই। এসুযোগে মৎসজীবীদের নামে ভুঁইফোড় সংগঠন তৈরি করে তার নামে প্রকৃতপক্ষে ইজারা নিয়ে আসছে স্থানীয় কায়েমী স্বার্থবাদী মহল। তাদের বাণিজ্যিক মৎস চাষের পরিকল্পনায় উচ্ছেদ হয়ে গেছেন প্রকৃত জেলেরা। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের উপযোগি করতে বাঁওড়ের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিক মাছ, কাকড়াসহ জলজ প্রাণিকুলকেও ক্যামিক্যাল প্রয়োগে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ফলাফলে বাস্তুতন্ত্র ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

আন্দোলনকারী বাঁওড় জেলেরা জানিয়েছেন,  বাঁওড় থেকে উচ্ছেদ হওয়া অসহায় জেলেরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা, আন্দোলন কর্মসূচি পালন, সুবিধাভোগীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে; কিন্তু অধিকার পাইনি। এরপর কেউ দেশ ছেড়েছেন, বাকিরা পেশা বদলের চেষ্টা করছেন। জমিজমাহীন জেলেরা চাষের কাজেও অদক্ষ এবং নিরুপায় হওয়ায় অন্যের ক্ষেতে কামলা দিতে গেলেও উপযুক্ত মজুরি পান না। এভাবে বঞ্চনার বোঝা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর বাঁওড়ঘেষা সিংগীয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন, ঝিনাইদহ-যশোর এর আহ্বায়ক নির্মল হালদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংগঠনের সদস্য সচিব নিত্য হালদার ও সংগঠনটির বলুহর, জয়দিয়া, কাঠগড়া, ফতেপুর, মর্জাদ ও বেড়গোবিন্দপুর থেকে আগত সদস্যগণ। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, মৎস্যজীবী বাঁওড় আন্দোলনের উপদেষ্টা বাঁওড় গবেষক সুজন বিপ্লব, সংগঠনের উপদেষ্টা আবু তোয়াব অপু,

আন্দোলনের সদস্য জয়দিয়া বাঁওড়ের শীলা হালদার, পুৃটি হালদার, আরতি হালদার, বলুহর বাঁওড়ের বসুধীর হালদার, বলুহর বাঁওড়ের সুনীল হালদার, শীতল হালদার, বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের ইন্দ্রজিৎ হালদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছয় বাঁওড়ের জেলে সম্প্রদায়ের নারী,পুরুষ, শিশু ও সদস্যবৃন্দ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মত আমরাও রাজনৈতিক অধিকারহীনতার মধ্যে আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে হতাশ ও হতদ্যোম হয়ে পড়ি। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট সরকার উচ্ছেদ ও বৈষম্যহীনতার স্লোগানের বিজয়ে গঠিত সরকার দায়িত্ব নেয়ায় আমরা আবার নতুন আশায় বুক বাঁধছি। নতুন করে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনের বার্তা নিয়ে সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছি আমাদের অঞ্চলের উক্ত বাঁওড়সমূহ ছাড়াও দেশব্যাপী বিশেষত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো বাঁওড় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর কবল থেকে রাষ্ট্রের সম্ভাবনাময় সম্পদ বাঁওড়গুলোকে উদ্ধার করে প্রকৃত মৎসজীবীদের ন্যাসয়সঙ্গত ও প্রথাগত মালিকানার ভিত্তিতে অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে বাঁওড়পাড়ের ত্রিশ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করায় কার্য়কর  ভূমিকা গ্রহণ করবেন।

আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে উদ্ভূত সংকট সমাধানে উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট দাবিনামার মধ্যে রয়েছে, ১। অবিলম্বে বাঁওড়সমূহে ইজারা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করে বাঁওড়ে জেলেদের ন্যায়সঙ্গত মালিকানার স্বীকৃতি দিতে হবে। ২। বাঁওড়ে মাছ চাষে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ও জেলেদের সাথে নায্য উৎপাদনের অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে করতে হবে ৩। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় প্রকৃত বাঁওড় মৎস্যজীবীদের জন্য রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। ৪। বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি না করে বাঁওড়ে মাছের প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, নতুন দিনের বৈষম্যহীন ও অংশগ্রহণমূলক বাংলাদেশ নির্মাণের যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে, সে অগ্রযাত্রায় অতি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বাঁওড়ের মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তায় ৪ দফা দাবিনামা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে তা বাস্তবায়নে আপনার কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মৎস্যজীবীরা বাঁওড় সুরক্ষায় বিভিন্ন দাবিস্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড-ফেস্টুন বহন করে। এসময় দাবি ওঠে- “প্রকৃতির জলাধার

মানবোনা টেন্ডার

বাঁওড় মৎস্যজীবীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার, বাঁওড় জেলেদের প্রথাগত মালিকানা নিশ্চিত কর, বাণিজ্যিক চাষ বন্ধ কর-দেশী মাছ রক্ষা কর, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশ-জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় বাঁওড় জেলেদের বিকল্প নেই, বাঁওড় জলাভূমি  মৎস্যজীবীদের জন্মগত অধিকার, বাঁওড় জেলেদের জন্মগত মালিকানা-অবৈধ উচ্ছেদ মানিনা, ইজারার কবলে বলুহরসহ দেশের বাঁওড় জনপদের হাজার-হাজার মানুষ জীবিকা হারিয়ে বেকার, হয় আমাদের বাঁওড় ফিরিয়ে দিন- না হয় বিষ আমাদের বিষ দিন, বাঁওড় ইজারার ফলে বাবা-মায়ের বেকারত্বে আমাদের পরিবারের সীমাহীন কষ্ট সরকার কী বুঝতে পারে?, বাঁওড়ে আজন্ম মালিকানার দাবিতে মাছের ন্যায্য হিস্যা চাই, বাঁওড় জেলেদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা চলবেনা, মাছ ধরার অধিকার থেকে বাঁওড় জেলেদের বঞ্চিত করা চলবেনা, দাবি আমাদের একটাই-আমাদের বাঁওড় আমাদের চাই, প্রাকৃতিক জলাধার-হবেনাতো টেন্ডার, বাঁওড় আমার মা-কোন ইজারা হবেনা, ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশ-

বাঁওড় আমাদের জীবনের অবলম্বন, বলুহরসহ ৬ বাঁওড়ে নিরন্ন জেলে ৩০ হাজার-সারাদেশে কত জেলে বেকার?, বাঁওড় জেলেদের আজন্ম  মালিকানা-রাষ্ট্র কেন বোঝেনো, বাঁওড় জাগাও- প্রাণ,প্রকৃতি,মানুষ বাঁচাও।”

এদিকে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রতিবেদককে বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলনের উপদেষ্টা ও গবেষক সুজন বিপ্লব বলেন, “বিগত শাসনামলে দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মত বাঁওড় জেলেরাও রাজনৈতিক অধিকারহীনতার মধ্যে আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে হতাশ ও হতদ্যোম হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন সময় জেলেদের উপর অবৈধ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে  জমি দখল, বাঁওড়ে অবৈধভাবে মালিকানা আরোপ করা হত। বিভিন্ন ইস্যুতে জেলেদের হুমকি ও বসতভিটা উচ্ছেদ, জীবিকায় বাঁধা প্রদানের স্থায়ী সমাধান করতে হবে। রাষ্ট্রীয় তদারকিতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলেদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। বাঁওড়কে দখলদারিত্ব  ও প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রভাবমুক্ত করতে হবে। বাঁওড়কেন্দ্রিক জেলেদের জীবিকা, আবাসস্থলসহ যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ায়র ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের সাথে আলোচনা ও সম্মতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ ‘অবিলম্বে বাঁওড় ইজারা বাতিল করে বাঁওড় জেলেদের মালিকানা পুনর্বহাল না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনে চলমান বাঁওড় রক্ষার ৪ দফার আন্দোলনকে বেগবান করে ফের ঢাকায় যাবো, সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মৎস্য উপদেষ্টা, ভূমি উপদেষ্টা, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে ধর্ণা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন, বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন, ঝিনাইদহ-যশোরের সদস্য সচিব নিত্য হালদার।’

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews