আজ থেকে ১২ বছর আগে আজকের এই দিনে বিক্রমপুর জাদুঘর উদ্বোধন করা হয় যা বিক্রমপুর বাসীর কাছে একটি আনন্দের দিন ছিল। বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার প্রয়াসে এই আঞ্চলিক জাদুঘরটির পথচলা শুরু।
১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল ড.নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা কয়েকজন প্রথমে ‘একুশ শতক’ পরে ‘অগ্রসর বিক্রমপুর’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে সক্ষম হই। সামাজিক নানা কর্মকান্ডের মধ্যে লেনিন ভাই চাইলেন তাদের লৌহজংয়ের কনকসারের পৈত্রিক বাড়িতেই একটি মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থ জাদুঘর গড়ে তোলা। এরি মধ্যে সংগঠনের সামাজিক কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিক্রমপুরের অনেক সুধীজন সংগঠনে যুক্ত হওয়ায় সংগঠনটি সমৃদ্ধ হয়। পাশাপাশি সরকারি নিবন্ধিত হয়ে সংগঠনের নাম হলো ‘ অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’। এলজিইডি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার ঢালী আব্দুল জলিল যুক্ত হওয়ার পর যখন জানতে পারলেন লেনিন ভাইয়ের মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থ জাদুঘর করার মনের ইচ্ছা তখন লেনিন ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক করে তথ্য পেলেন পরিত্যাক্ত অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সহ শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাসুর গ্রামে ভাগ্যকুলের সাবেক জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি আছে।
উল্লেখ্য ১৯৬৫ সালে জমিদার যদুনাথ রায় সমস্ত সম্পত্তি ফেলে ভারতে চলে যান। তখন যানা যায় বাড়ি সংলগ্ন ৬৪০ একরের বেশি জমি ছিল এর মধ্যে শুধু মাত্র বাড়িটি ততকালীন মহাকুমা প্রশাসক এর নিকট ছিল এবং সরকারি ভাবে একটি এতিমখানা প্রতিস্ঠা করেন তত্কালীন মহাকুমা প্রশাসক। এরপর বাড়িটা ২১০ একর যায়গায় দাঁড়ায়।
১৯৮৪ মুন্সিগঞ্জ জেলায় রূপান্তরিত হওয়ার পরে জেলা প্রশাসক দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ৯০ এর দশকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ব্যবহার অযোগ্য /পরিত্যাক্ত ঘোষণার পর ভবন থেকে এতিমখানা সরিয়ে বাড়িটির দক্ষিণ প্রান্তে এতিমখানা স্হান্তরিত করে সরকার। বিক্রমপুর জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সাড়ে ১৩ একর (বাড়ি এবং ২টি দিঘি মিলে) সরকারের (যথাযথ কর্তৃপক্ষের) কাছ থেকে নিয়ম মেনে সংগঠনের নামে লীজ নিয়ে অর্থাৎ অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয় বিক্রমপুর জাদুঘর, গেস্ট হাউস “পান্হশালা” ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু:
এই জরাজীর্ণ পরিত্যাক্ত বাড়িটি ডিজিটাল সার্ভেয়ার ছিলেন মোঃ কারুজ্জামানকে সাথে নিয়ে সার্ভে করেন প্রকৌশলী ঢালী আব্দুল জলিল। তাহারা দীর্ঘ দিন অনেক সময় ধরে পুরো বাড়িটির একটি সার্ভে করেন এবং কোথায় কোন স্থাপনা হবে তার একটি মাস্টার প্ল্যান । এই পূর্নাঙ্গ মাস্টার প্ল্যানটি করতে অন্তত ১০ থেকে ১২ দিন বালাসুর গিয়ে ফিল্ড ওয়ার্ক করে তারপরে ঢাকায় অফিসে একটি ‘পূনাঙ্গ মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করেন।
এরপর ভবনের নকশা সহ একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করেন ইঞ্জিনিয়ার ঢালী আব্দুল জলিল। প্রজেক্ট প্রোফাইলটি তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জেলা পরিষদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে জাদুঘরের ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
ভিত্তি প্রস্তর:
২০১০ সালের ২৯ মে জাদুঘর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঠিকাদারের নানা গাফিলতির কারণে এই চার তলা ভবনটি কাজ সম্পন্ন হইতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। ঠিকাদারের সাথে, জেলা পরিষদের সাথে এবং প্রকৌশলীদের সাথে নানা চিঠিপত্র চালাচালি এবং কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন প্রকৌশলী ঢালী আব্দুল জলিল। সবশেষে জেলা পরিষদ থেকে জাদুঘরের ভবনটি তৈরি করা হলো, কিন্তু এখানে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ভালো ছিল না, বিধায় অনেক দূর থেকে নিজস্ব খরচে খুঁটি বসিয়ে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেয়া হয় এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। জাদুঘরের অবকাঠামো হলো এরপরে আসে গ্যালারি তৈরি এবং জাদুঘরের জন্য এবং প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী সংগ্রহ করার কাজ।
গ্যালারী করার জন্য অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড.নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের আবেদনে অর্থায়নে এগিয়ে আসে দুটি ব্যাংক। ডিজাইন করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থপতি রবিউল হাসান এবং জাদুঘরের এক্সপার্ট স্হপতি মিমি। বিখ্যাত গ্রাফিক ডিজাইনার কবি তারিক সুজাত এবং স্হপতি মিমি দম্পতি বিক্রমপুর জাদুঘরের ২য় তলার কয়েকটি গ্যালারী ডোনেশন করেন। বাকি গ্যালারী তৈরি করেন অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোরহাব উদ্দিন (সৌরভ)। পরে তারা এই বাড়ির ব্যবহৃত ড্রেনেজ ব্যবস্থার লাইন উন্মোচন করেন এবং জরাজীর্ণ ভবনগুলোর সংস্কার করেন।
সংগ্রহের বিশাল কাজ প্রথম থেকেই অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড.নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের নির্দেশনায় ও পরামর্শে প্রথম কিউরেটর অধ্যাপক মোঃ শাজাহান মিয়া আমাদের সাজু’দা আপ্রাণ চেষ্টা করে ধীরে ধীরে নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে অনেক কষ্ট করে জাদুঘরটির মালামাল সংগ্রহ করেন। আমি যতটুকু সম্ভব অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান মিয়া (সাজু’দার) সাথে প্রথম থেকেই যুক্ত থেকে কাজ করেছি। তারপাশে ছিলেন তাঁর বন্ধু সহকর্মী হরগঙ্গা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের কোষাধ্যক্ষ প্রায়াত অধ্যাপক সুখেন চন্দ্র ব্যানার্জি, শ্রীনগর কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মুজিব রহমান, কেন্দ্রীয় পর্ষদের খান নজরুল ইসলাম হান্নান এবং আবু হানিফ সহ অনেকে। প্রত্মতাত্মিক বস্তু (প্রত্ম বস্তু) দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।
জাদুঘর উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে ঠিক সেই সময়ে পিছু টেনে ধরতে শুরু করলো এই জমিদার বাড়িটি যারা দীর্ঘদিন ভোগদখল করে খাচ্ছেন তাদেরই একটা গ্রুপ আমাদের জাদুঘরের পিছু লাগলো, এটাকে বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা শুরু করলো।
ঠিক তখন আমি একদিন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন এর সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের কাছে অনুমতি চাইলাম যে বালাসুরে আমার কিছু পরিচিত লোকজন আছে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস এলাকার মুরব্বিদের সাথে বসতে পারলে একটা সুসম্পর্ক গড়তে পারবো আমি তাদের সাথে বসতে চাই, প্রকৃত ঘটনা নিয়ে কথা বলতে চাই, তিনি অনুমোদন দিলেন কিন্তু সতর্কতার জন্য সাথে জুড়ে দিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের অন্যতম দুজন সদস্য খান নজরুল ইসলাম হান্নান এবং মোঃ আবু হানিফকে। অনুমোদন পেয়ে তৎক্ষণাৎ অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন শ্রীনগর কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক আমার বন্ধু মাহমুদ হাদী ভাই কে টেলিফোন করলাম এবং জাদুঘর এলাকার মুরুব্বিদের নিয়ে বৈঠক করার বিষয়টি জানালাম।
২২ মে ২০১২ তারিখে বিকেল বেলা চা-চক্রের আয়োজন করার জন্য অনুরোধ করলাম, কথা ছিল মাহমুদ হাদী ভাই ডেকোরেশন থেকে দুটি টেবিল ১০/১২ টি চেয়ারের ব্যবস্থা করবেন। আমরা তিনজন ঢাকা থেকে গেলাম হাদী ভাই সব আয়োজন ঠিক করে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন, আস্তে আস্তে লোক বাড়তে বাড়তে ১৩৫ জন হয়ে গেল আমরা সবাই ঘাসের উপরে বসলাম একটানা এক ঘন্টার উপর আমি কথা বললাম। আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে প্রায় ২ঘন্টা আলোচনা হল। এতদিন জমিদার যদুনাথ রায়ের এই পরিত্যক্ত বাড়িটির সুবিধাভোগীরা নানা প্রকার অপপ্রচার চালায়। এলাকাবাসীদের বলা হয়েছে নূহ-উল-আলম লেনিন সাহেব এই বাড়ি দখল করে নিজের বসত বাড়ি করবেন। আমরা বললাম নূহ-উল-আলম লেনিন ভাই তাদের পৈত্রিক বাড়ি বসবাসের ঠিকানার অর্ধেকটা ভাই-বোনেরা মিলে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনকে প্রধান কার্যালয় করার জন্য দলিল মূলে দান করে দিয়েছেন, সেই নূহ-উল-আলম লেনিন কিনা আরেক উপজেলা এসে হিন্দু বাড়ি দখল করবে এটা কি সম্ভব? প্রপাকান্ড ছড়ানো হয়েছিল এখানে নাইট ক্লাব হবে, নানা অপকর্ম হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সেদিন যা বলেছিলাম নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের সাথে আমরা যারা তাঁর সঙ্গে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নিয়ে কাজ করছি তারা সুদূর মুন্সিগঞ্জ, টঙ্গিবাড়ি, সিরাজদিখান এবং লৌহজং থেকে এখানে এসে হিন্দু বাড়ি দখল করতে আসবো না এবং আমাদের অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের শ্রীনগর কেন্দ্রেরও যারা আছেন কেউ একাজ করার মতো মানুষ নন।
সমস্ত মুরুব্বিদের ভুল ভাঙলো আমাদের কথায় পরিস্কার মনে আছে অত্র এলাকার তখনকার সময়ে প্রয়াত হাসু মেম্বার দাড়িয়ে বললেন আমার দিকে আঙ্গুল দিয়ে যে ‘যারা কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ (ঝোলা) নিয়ে ঘুরে তারা অন্তত আর কিছু না হোক এত দূরে এসে এই বাড়ি দখল করবে না এটা আমার পুরোপুরি বিশ্বাস।’ উনি পজেটিভ দিকে দারুন পদক্ষেপ নিলেন। সবমিলে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পরিকল্পনা উপস্হাপন করায় এলাকার উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এতদিনের ভুল অপপ্রচার বিষয়ে পরিস্কার উপলব্দি করলেন। সবশেষে এই যদুনাথ রায়ের বাড়িতে বিক্রমপুর জাদুঘর এর আঙ্গিনায় একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প করার ঘোষণা দেওয়ায় সকলেই খুশি হন। সেদিনের এই বালাসুরের সকলের সাথে মতবিনিময় ছিল সেতু বন্ধনের ‘একটি মাইলফলক পদক্ষেপ’।
মেডিকেল ও ডেন্টাল ক্যাম্প:
১৫ জুন ২০১২ তারিখে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি মেডিকেল ও ডেন্টাল ক্যাম্প করি সেই মেডিকেল ক্যাম্পে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি সহ সুধীজনদের উপস্থিতিতে সারাদিনব্যাপী একটি চমৎকার আয়োজন হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের সভাপতি ড.নূহ-উল-আলম লেনিন কেন্দ্রীয় পর্ষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং শ্রীনগর কেন্দ্রের সকল সদস্য উপস্হিত ছিলেন । দুপুরে মধ্যহ্ন ভোজের বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই মেডিকেল ক্যাম্পে আমরা তিন হাজারের বেশি রোগী দেখেছিলাম সঙ্গে ঔষধ পত্র বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছিল এতে করে এলাকার মানুষের সাথে ভুল বুঝাবুঝির একটি অবসান ঘটে।
কিন্তু একটি কুচক্রীমহল সংঘবদ্ধ হয়ে ড. নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে হিন্দু বাড়ি দখল ভূমিদস্যু বানিয়ে জাতীয় পত্রিকায় নিউজ করল, এলাকায় মানববন্ধন করলো।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন সংবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মুন্সিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয় এবং এলাকায় মানববন্ধন এবং আদালতে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।
২২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে এই মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ করে লৌহজং উপজোয় প্রয়াত ফকির মোঃ আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করে। বিক্রমপুর সংগ্রামী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন কনকসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের লৌহজং কেন্দ্রের সাধারন সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফকির আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মজিবুর রহমান আকন্দ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সদস্য মিজানুর রহমান মিজান,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বেপারী প্রমুখ।
আদালতে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মামলার ন্যায় বিচার পেয়েছি কিন্তু নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের মানসম্মান আমরা ফেরৎ দিতে পারি নাই এই ১২ বছরে। বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণ এখনো সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সাবেক জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়িতে। বরং কিছু দিন আগে স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের অপচেষ্টায় বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণের কিছু অংশ দখল হলে পত্র পত্রিকায় নিউজ হয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয় কিন্তু কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে থাকে সবসময়।
বিক্রমপুর জাদুঘর উদ্ধোধন : নানা বাধা জল্পনা কল্পনা শেষে ২০১৩ সালের ২৮ মে ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। সকল জাতীয় পত্রিকায় উদ্ধোধনের সংবাদটি প্রকাশিত হওয়া বিক্রমপুরের মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
বিক্রমপুর কিংবদন্তি ইতিহাসের মহান এবং গর্বিত ভূ-ভাগ। এই ভূ-ভাগ প্রাচীন চন্দ্র রাজাদের তাম্র শাসনের অঞ্জলী থেকে শুরু করে পাল, সেন, মোগল, বারভূঁইয়াদের কীর্তিত্বে উজ্জ্বল হয়ে একটি স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যের রাজধানী বিক্রমপুরের কীর্তিময় অংশ। বিক্রমপুর একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন জনপদ। মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর পরগনার তথা বিক্রমপুরের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চার জন্য এবং পরবর্তী সময়ে সাংস্কৃতিক প্রভাবের জন্য সুপরিচিত ছিল। ধারণা করা হয়, বৈদিক যুগ থেকে ভাওয়াল ও সোনারগাঁও রাজধানী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী। বিক্রমপুর ছিল রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজধানী। প্রাচীন পূর্ববঙ্গ বা সমতটের এই রাজধানী হিসেবে বিক্রমপুরের খ্যাতি কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ বছরের। সুদূর অতীতে বিক্রমপুর ছিল বঙ্গ ও সমতট অঞ্চলের রাজধানী। প্রাচীন তাম্রলিপিতে একে ‘শ্রীবিক্রমপুর-সমাবাসিত শ্রীমজ্জায় স্বন্ধাবারাৎ’ অর্থাৎ ভিক্টরি ক্যাম্প হিসেবে এবং কোন কোন লিপিতে ‘শ্রীবিক্রমমণিপুর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বিক্রমপুর শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় উপমহাদেশের একটি পীঠস্থান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। গাঙ্গেয় উপত্যকার পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র-ধলেশ্বরী- ইছামতি বিধৌত নিম্নাঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বিক্রমপুর নানা ধর্ম, নানা সভ্যতার পাদপীঠ হতে পেরেছে। বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দু, মুসলমান এবং খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ এখানে বসতি স্থাপন করেছে। গড়ে তুলেছে উন্নত সভ্যতা। প্রাচীন ও প্রাক-মধ্যযুগের চন্দ্র, বর্মণ এবং সেন রাজবংশ এবং মধ্যযুগে সুলতানি আমল, বারো ভূঞাদের সময়কালের এবং মোগল আমলের প্রত্মনিদর্শন ও তাম্রলিপি সাক্ষ্য দেয় যে, এখানে সমৃদ্ধ এক মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন তাম্রশাসন, দানপত্র ও শিলালিপি থেকে জানা যায়, রামপাল, সুখবাসপুর, জোড়ার দেউল, সোনারং, পানহাটা, রামশিং, সরস্বতী, বড় কেওয়ার, চাপাতলী, মহাকালী, আটপাড়া, দেওভোগ, বজ্রযোগিনী, সুয়াপাড়া, বারআউলিয়া, আলদী, কল্যাণসিংহ, ধামারণ, নৈরপুকুরপাড়, মানিকেশ্বর, কপালদুয়ার, পঞ্চসার, ইদ্রাকপুর, নাটেশ্বর ও তিলারদি গ্রাম নিয়ে শহর বিক্রমপুর ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ায় আমাদের কাছে দৃশ্যমান নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও সুলতানি আমলে বাবা আদম শহীদের মসজিদ, মোগল আমলের ইদ্রাকপুর দুর্গ, মীরকাদিমের পুল এবং ব্রিটিশ আমলের দৃষ্টিনন্দন সোনারং মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, শ্যামসিদ্ধির সুউচ্চ মঠ, টঙ্গিবাড়ী মঠ ও নগর কসবার প্রাসাদগুলো ছবি সহ নানা প্রত্ম বস্তু স্হান পেয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘরে।
রামপালের রঘুরামপুরে, টঙ্গিবাড়ির নাটেশ্বরে এবং বিভিন্ন পুকুরে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। সে সকল অনেক স্হান পেয়েছে এখানে,এ ছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী তাঁদের ছবি সম্বলিত জীবন আলেখ্য জাদুঘরের গ্যালিরিতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
বিক্রমপুরের এইসব অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ এই আঞ্চলিক জাদুঘরটি স্হাপন করতে নিরলসভাবে কাজ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
বাংলাদেশে প্রথম “নৌ- জাদুঘর বা Boat Museum” গড়ে তোলার লক্ষ্যে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের নানা ধরনের নৌযান গুলো সংগ্রহ করার প্রয়াসে দেশের বিভিন্ন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে চিঠি দেওয়া হলো। এলাকার মানুষের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে সারাও পাওয়া গেলো। সাম্পান থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েকটি নৌযান সংগ্রহ করা হলো এবং দিঘির জলে ভাসিয়ে রেখে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলো। দেশের প্রথম নৌ-জাদুঘর উদ্বোধন করা হয় ২০১৪ সালের ২০ জুন।
গেস্ট হাউস “পান্হশালা” উদ্ধোধন:
২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি তারিখে এখানে দর্শনার্থীদের অবকাশ যাপনের জন্য একটি তিনতলা বিশিষ্ট গেস্ট হাউস “পান্হশালা” উদ্ধোধন করা হয়।
“শহীদ মুনীর-আজাদ স্মৃতি পাঠাগার” উদ্ধোধন:
১১ জুন ২০২২ সালে শহীদ মুনীর-আজাদ স্মৃতি পাঠাগার উদ্ধোধন করেন বিশিষ্ট লেখক ও কবি মোঃ আনিসুল হক।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঐতিহাসিক বেতিয়ারায় সম্মুখে যুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর ৯ জন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র মেধাবী শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় শহীদ হন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তমধ্যে অত্র এলাকার কৃতি সন্তান ছাত্রনেতা নিজাম উদ্দিন আজাদ এবং সিরাজুম মুনির ছিলেন। তাঁহাদের দুজনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান নিবেদন করে ২০২২ সালে “শহীদ মুনীর-আজাদ স্মৃতি পাঠাগার” স্থাপন করা হয়েছে।
বাড়িটি প্রসঙ্গে কিছু কথা:
আজ থেকে ৪৬ বছর আগে ১৯৭৯ সালে আমাদের গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে এমনি এক বর্ষার সময় এবাড়িটি দেখতে বা বনভোজন করতে এসেছিলাম। সেদিন আমি, হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম ঝিলু, রফিকুল ইসলাম মিন্টু, মোঃ শাহীন টিটু, সহিদুল ইসলাম, সহ ৭/৮ জন ছৈজদ্দিন সরদারের কেরাই নৌকায়। পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে এই বনভোজন সকাল বেলা কনকসারের নতুন কান্দি থেকে নৌকা ছেড়ে শ্রীনগর বাজারের গা ঘেঁষে আড়িয়াল বিলের মধ্যে দিয়ে নৌকা পাড়ি দিল। একটু পরেই ছৈজদ্দিন মাঝির হুংকার সবাইকে নৌকার ভিতরে ঢুকতে হবে রাস্তা ভালো না, ডাকাতি হাতে পরতে পারি,বিল নয় যেন বিশাল নদী কোন কুলকিনারা নাই, মাইক সহ আমাদের সবাইকে নৌকার ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে সুঠাম দেহের অধিকারী সরদার ছৈজদ্দিন বাদাম টাঙ্গিয়ে সোজা পশ্চিম দিকে পাড়ি দিলেন ডাকাতির প্রচন্ড ভয় দেখিয়ে আমাদের অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে দিয়ে সাহসী মাঝি পাড়ি দিলেন দিগন্ত ছোঁয়া আড়িয়াল বিলের আমোন ধান খেতের দাড়া দিয়ে। নৌকা সো সো করে চলছে কিন্তু আমাদের ভিতরে ভিতরে ভয় কাজ করছে ঠিকই কখন যে ডাকাত দলের আক্রমনে পড়ে যাই। যা হোক শেষ পর্যন্ত বিলের ধারে উত্তর বাসা সুরে জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়িতে আমাদের নৌকা এসে থামলো। তখন এতিমখানা ছিল আমরা একপাশে রান্না বান্না করে বনভোজন হলো পুরো বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কৌতূহল ছিল এই বাড়িটিতে একটি লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি আছে যার বদৌলতে এদের জমিদারী, বিখ্যাত স্টিমার ব্যবসা থেকে শুরু করে সকল অর্থের মূল উৎস। সেই কক্ষটি দেখতে পেলাম কিন্তু দেবীকে দেখতে পেলাম না, জমিদার যদুনাথ রায়ের পরিবার সেটি কোলকাতায় নিয়ে গেছেন এখন সেই লক্ষ্মী দেবীর মূর্তিটি বংশের সকল পরিবারের কাছে ঘুরে ঘুরে থাকে। অতীত ইতিহাস আর কাল প্রবাহের সাক্ষী হিসেবে এখনো দেশের নানা জায়গায় আছে জমিদার বাড়ি ও তাদের নানা নিদর্শন৷ বিক্রমপুরের ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি তেমনি একটি। আড়িয়াল বিলের ধারে অতীত শান শওকতের নিদর্শন নিয়ে অনেক কাল যাবত দাঁড়িয়ে আছে ভাগ্যকুল জমিদারদের এই বাড়িটি। রাজা সীতানাথ রায়ের দুই পুত্র যদুনাথ রায় এবং প্রিয়নাথ রায়। জমিদার সীতানাথ রায়ের পুত্র যদুনাথ রায় এই ভবনটি নির্মাণ করেন। সীতানাথ রায়ের মূল জমিদারি যদিও পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে যায়, তখন পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আড়িয়ল বিলের কিনারে মনোরম ডুয়েল প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন। যদুনাথ রায়ের বর্তমানের রাঢ়িখাল ইউনিয়নের উত্তর বালাশুরে (সে সময় ভাগ্যকুল নামে পরিচিত ছিল) হুবহু একই ধরণের এই দুটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করেন। সেই সাম্রাজ্যের মধ্যে টিকে আছে শুধু এই আড়িয়াল বিলের ধারের প্রাসাদ তিনটি। বিশালাকৃতির দিঘি খনন করেন,দূর্গামন্দির ও নাটমন্দির (থিয়েটার; নাট্যশালা) স্থাপন করেন। স্থানীয় মানুষের কাছে এই বাড়িটি ‘বাবু বাড়ি’ নামেও পরিচিত। ভাগ্যকুলের এই জমিদার তারা তাদের কর্মযজ্ঞের ফলে ব্রিটিশদের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন। তখনকার সময় এই জমিদার বংশধররা সকলেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। ভাগ্যকুল জমিদারদের The East Bengal River Steamer নামে একটি স্টিমার কোম্পানি ছিলো যা ১৯০৭ সালে নৌ ব্যবসায় যুক্ত হয়।
এই বাড়ির বংশধরেরা বর্তমানে কোলকাতায় বসবাস করেন বিভিন্ন জায়গায়। এই বাড়ির যাঁরা তাদেরকে অনেক খুঁজে খুঁজে বের করি। ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল তারিখে আমি সপরিবারে যদুনাথ রায়ের কোলকাতার শোভা বাজারে বাড়িতে যাই যদুনাথ রায়ের নাতি মিঃ দেব ব্রত রায়ের সাথে দেখা করি তিনি দারুণ আতিথেয়তা করেন লম্বা সময় তার সাথে আলাপচারিতায় তাঁদের এই বাড়ির অনেক অজানা তথ্য জানতে পারি। বাবু দেব ব্রত রায়ের বাল্য স্মৃতিতে এই বাড়ির এবং গ্রামের অনেক কথা বললেন। তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে বলেন, ‘এযাবৎ কালে বিক্রমপুর থেকে যারাই এসেছেন তারা আমার দাদুর ফেলে আসা সম্পত্তির কোন না কোন বিষয় নিয়ে। আমি একজনকে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ নিষেধ করেছি। ঐ সম্পত্তির উপর বিন্দু মাত্র লোভ আমাদের কারো নেই। একমাত্র আপনিই এসেছেন আমাকে শুধুমাত্র নিমন্ত্রণ করতে, আমি খুবই খুশি হয়েছি আমি যাব কিন্তু থাকবো ঐ বাড়িতে গেস্ট হাউসে থাকার মতো হলে আমি চলে আসবো।’ বাড়িতে ডিসপ্লে করা আছে দুটো স্টিমারের রেপ্লিকা সেই সময়ে তাঁর দাদু স্টিমার দুটি কিনেছিলেন ফ্রান্স থেকে, নির্মাতা কোম্পানি এই রেপ্লিকা দুটো বানিয়েছে। স্মৃতি ধরে রেখেছেন বাড়িটিও সেই সময়কার তৈরি আজও এভাবেই আছে। সবশেষে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড.নূহ উল আলম লেনিন ভাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দেই, সেই থেকে আমাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ আছে এবং সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তাঁরা পরিবারের সবাই প্রশংসা করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাড়িটির একাংশ ব্যবহার করে বিক্রমপুর জাদুঘর সহ অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন এতগুলো ভালো কাজ করার জন্য। তিনি লেনিন ভাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং তাদের স্মৃতিচিহ্ন যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকাবে সেই আনন্দে। এখানে এসে অনন্ত তিন দিন এই বাড়িতে অবস্থান করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। দু’মাস আগে আমি কোলকাতায় যাওয়ার পর কথা হয়েছে বাংলাদেশের ভিসা লাগিয়ে রেখেছেন খুব শীঘ্রই তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসবেন বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য এই বংশধরের এখানে বা বাংলাদেশে কেউ নেই।
বিক্রমপুরে সর্ব প্রথম এই বাড়িতে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলেন, ছিল সোয়ারেজ ব্যবস্হা, বিশালাকৃতির তিনটি দিঘি ছিল, বাড়ি জুড়ে ছিল বহুরকমের ফুল ও ফলের গাছ। খাপড়াওয়ার্ড খ্যাত লেখক আব্দুস শহীদ তার ‘কারাস্মৃতি’ গ্রন্থে ফুল বাগানের বর্ণনা দিয়েছেন। এখনো বাহারী নাগলিঙ্গম, বিশালাকৃতির কাঠবাদাম, বোম্বে লিচু, সুমিষ্ট আম গাছ রয়েছে। অশোক গাছটিতে এখনো ফুল ফুটলে মনে হয় ভোরে সূর্য উকি দিয়েছে। পুকুর ছিল মাছে পরিপূর্ণ, আলাদাভাবে কূপে ছিল রঙিন মাছ।
ড. হুমায়ুন আজাদ এই বাড়িটিকে নিয়ে তার ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না গ্রন্থে লিখেছেন- “বিলের ধারে প্যারিস শহর”।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন আজকে সবমিলে পুরো বাড়িটিকে ঘিরে ‘উন্মুক্ত বিক্রমপুর জাদুঘর’ গড়ে তোলার মাস্টার প্ল্যান নিয়ে এগিয়ে চলছে।
প্রয়োজনীয়তা:
বিক্রমপুরর মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন সভ্যতা মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল এতদিন। তা এখন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের বৌদ্ধনগরী সহ বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শন সন্ধান পায়, বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার প্রমান করে মাটির নিচে প্রাচীন নগরসভ্যতার আবিষ্কার।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় ২০১২ সালে রামপালের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার পরে টঙ্গিবাড়ীর উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার করা হয়েছে। আশার এবং আনন্দের কথা হলো গত ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখে বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’ এ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি-সমঝোতা এবং ঘোষণাপত্র সই হয়। এরমধ্যে সিরিয়ালের ৯ নম্বরটি আমাদের “নাটেশ্বর আর্কিওলজিকাল সাইট পার্ক প্রকল্প” ছিল।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্যর নিদর্শন মানুষের সামনে তুলে ধরতে বিক্রমপুর জাদুঘরের একটি গ্যালারীতে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত কিছু মহামূল্যবান নির্দশন এবং ছবি এই গ্যালারিতে স্হান পেয়েছে। এসব নির্দশন বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে। সবমিলিয়ে এই উন্মুক্ত আঞ্চলিক জাদুঘরটি আদ্যিকালের বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা যা এককথায় একটি ছাদের নিচে পুরো বিক্রমপুর।
প্রভাব:
প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এটাই বিক্রমপুর জাদুঘরের সফলতা।
এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফর, সামাজিক সংগঠন, কর্পোরেট অফিসের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে। একটি আঞ্চলিক জাদুঘর দেখতে দুর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে। অনেক বিদেশী পর্যটক আসেন এখানে। এছাড়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বর্গ প্রায়ই এই আঞ্চলিক জাদুঘরটি পরিদর্শন করতে আসেন।
তন্মধ্যে দেশী বিদেশী অনেক দর্শনার্থী আছেন কিছু তুলে ধরছি _সম্মানিত মন্ত্রী মহোদয়, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত, এলজিইডি এর প্রধান প্রকৌশলী মোঃ খলিলুর রহমান সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, উপ-সচিব, বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বিশিষ্ট অভিনেত্রী সারা জাকের, কিউরেটর আমেনা বেগম, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট কবি ও লেখক বিভিন্ন সময়ে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশিষ্ট কবি, লেখক, বাচিক শিল্পী এবং পর্যটক এসেছেন বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করতে। অনেকে শুধুমাত্র বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করার জন্য ভারত থেকে এসেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি দুই সাংবাদিক দম্পতি পল কনেট ও তার স্ত্রী এলেন কনেট এসেছিলেন বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন কালে সাথে ছিলেন তাদের বন্ধু বিচারপতি সামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক। মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারীতে তাদের ছবি ( পেপার কাটিং) দেখে অভিভূত হন। এছাড়া এখানে এসেছেন জাপানিজ সাংবাদিক মিকহিও ম্যাৎসুই, বিশ্বব্যাংক এর দক্ষিণ এশিয়া অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞ নাটালিয়া স্থানকে, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিসেস সুজান ভাইস, এটি আমাদের জন্য পরম পাওয়া তিনি বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণ ঘুরে ঘুরে দেখেন ভবনগুলোর সংস্কার সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন এবং পরামর্শ দেন। বিক্রমপুর জাদুঘর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে কিনা জানিনা কিন্তু তাদের খাতায় আমাদের নাম লিপিবদ্ধ হলো নিঃসন্দেহে এটি একটি বিক্রমপুরের মানুষের জন্য বিশাল প্রাপ্তি, আনন্দের সংবাদ।
পদ্মা সেতুর কাছে আড়িয়াল বিলের গা ঘেঁষে সবুজের মাঝে বিক্রমপুর জাদুঘর ও গেষ্ট হাউস প্রাঙ্গণে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল সময় কাটানোর জন্য মনোরম পরিবেশে আছে ভাগ্যকুলের সাবেক জমিদারের এই বাড়িতে অর্থাৎ উন্মুক্ত বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণে। কিছুটা সময় নিজেদের মতো প্রকৃতির কাছাকাছি উপভোগ করার একটি চমৎকার যায়গা এই বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস, ব্যাংক, বীমা, আইনজীবী সমিতি, বিভিন্ন কোম্পানির বনভোজন,সেমিনার করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফর, বিভিন্ন সাংবাদিক সমিতির ফ্যামিলি-ডে অনুষ্ঠান করেছেন এই উন্মুক্ত বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণে। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে ( অক্টোবর থেকে মার্চ) দল বেঁধে পিকনিকে আসে মানুষ এখানে। আমরা তাদের সকলকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই।
প্রত্নসম্পদ:
বিক্রমপুর জাদুঘর তিনতলা ভবনে প্রবেশ করতেই দু’পাশে দুটি বড় মাটির পাতিল বা মটকা, একটি ঢেঁকী শালা দেখতে পাবেন।
মোট ৭টি গ্যালারিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দশন।
নিচতলার বাম পাশের গ্যালারি ‘যদুনাথ রায়ের’ নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন আছে।নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি ইত্যাদি এছাড়া বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন।
দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে যে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখা হতো সেই ভূর্জ গাছের বাকল।
তৃতীয় তলায় এখানে পরিদর্শন করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দেশ ও সাম্রাজ্যের কয়েন, নোট, পরিবারের ব্যবহারের তালিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র আদ্যিকালে পরিবারের কাজে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হুঁকা, হারিকেন, কুপি, কলের গান, টেলিফোন সেট, রেডিও,কলম,দোয়াত, টাইপরাইটার, ক্যামেরা, টেপ রেকর্ডার,ব্যাটারী চালিত টেলিভিশন, জাঁতা, খড়ম, পয়টা, পান বাটা, কাঁসার বাসনপত্র, মাটির জিনিসপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি, হাতে বুননের তাঁত শিল্পের যন্ত্রপাতি, মসলিন শাড়ি,তালপাতায় লেখা পুঁথি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারী,কাঠের সিন্দুক, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন। এবং স্বদেশী আন্দোলনের সাক্ষী সুতা কাঁটা চড়কা ইত্যাদি।
সংরক্ষণ:
ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন, ব্রিটিশ আমলের কৃষক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অর্থাৎ স্বদেশী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে বিক্রমপুরের আলোকিত মানুষদের অংশগ্রহণ/নেতৃত্ব ছিল, বিক্রমপুরের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তির ভূমিকা ছিল। মোট কথা উপমহাদেশের মুক্তি আন্দোলন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বাঙালি চেতনাকে উজ্জীবিত করেছিলেন সেই সকল কৃতি সন্তানদের জীবন আলোখ্য একই ছাদের নিচে প্রদর্শন করার জন্য গ্যালারি স্থাপন করা হয়েছে। শাশ্বত বঙ্গের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র আমাদের এই বিক্রমপুর, গৌরবময় ঐতিহ্যমন্ডিত অপরূপ প্রাকৃতির সৌন্দর্যের আকর এই অঞ্চল বহু মহৎ ব্যক্তি খ্যাতনামা পন্ডিত ও প্রতিভাবান শিল্পীর বাসভূমি হিসেবে মহিমান্বিত যুগে যুগে তারা এই এলাকাকে আলোকিত করেছে বিক্রমপুরের পরিচয় ব্যক্ত করেছেন দিক থেকে দিগন্তরে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজকের প্রজন্মের কাছে অনেকটা অজানা এই আলোকিত মানুষদের স্মৃতি ধরে রাখা, তাঁদের অবদান বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা বিক্রমপুর জাদুঘর প্রতিষ্ঠার অন্যতম এটি একটি কারনও বটে। প্রাচীন আমলে বিক্রমপুর, সুলতানি আমলে বিক্রমপুর, মোগল আমলে বিক্রমপুর এবং আধুনিক বিক্রমপুরের চিত্র দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এই বিক্রমপুর জাদুঘর। দলিল দস্তাবেজ হাজারো ছবি ব্যবহারিত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে এই বিক্রমপুর জাদুঘরে। গত ১১ বছর ধরে দেশ-বিদেশের নানা এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অব্যাহত আছে দুর্লভ, দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্ত জিনিসপত্র সংগ্রহ। বিক্রমপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
সমস্যা ও সম্ভাবনা:
বিক্রমপুর জাদুঘরের সমস্যা অনেক কিন্তু সম্ভাবনাও আছে বিশ্বাস করি। সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় কিছু চাহিদার মধ্যে_ বাউন্ডারি ওয়াল করা, ২টা ওয়াস ব্লক (টয়লেট বাথরুম) করা, গেস্ট হাউস এবং ইউরোপীয়ান ক্লাবটি সংস্কার,ওপেন স্টেজ, বসার জন্য কয়েকটি আরসিসি ছাতা, বেঞ্চ সহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ। এছাড়া বার্ষিক লীজ এর অর্থ মৌকুফ করা বা কমানোর ব্যবস্থা করা, জাদুঘর এবং গেস্ট হাউসের জন্য সিসি ক্যামেরা স্হাপন করা, পুরনো নৌকা এবং অন্যান্য কিছু প্রত্মবস্তু কার্বন টেস্ট করা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা সহ প্রায় ত্রিশটি আইটেমের একটি পরিকল্পনা বা প্লান করেছি আশা করি সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব। আমি বিনীতভাবে আপনাদের সকলের অংশগ্রহণ একান্ত ভাবে কামনা করছি।
উন্নয়ন:
জাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ করার জন্য প্রাচীন তৈজসপত্র, পাথর বা অন্যান্য ধাতু/চীনা মাটি ও মাটির নির্মিত থালা, বাসন, অতীত যুগের ব্যবহার্য সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারি, পুঁথি-পত্র, বই তালপাতায় বা হাতে বানানো কাগজে হাতে লেখা প্রাচীন গ্রন্থ, নৌকা, মৃৎশিল্প, পোড়ামাটির নিদর্শন, মূর্তি, কয়েন, অলংকার, হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম, প্রাকৃতিক সম্পদ, ধাতব শিল্পকর্ম, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, নকশিকাঁথা, কাঠের শিল্পকর্ম,পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত বস্তুগুলো নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে (প্রদর্শিত হচ্ছে) মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি। এই মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারির জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি,শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, বই-পত্র অন্যান্য সামগ্রী এবং নৌ জাদুঘরের জন্য নৌকা দান করলে জাদুঘরটি সমৃদ্ধ হবে। সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় বিক্রমপুর জাদুঘর দেশের মধ্যে একটি উচ্চমানের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে উঠুক এটা আমাদের একান্ত কামনা। আমরা চাই আপনিও আমাদের প্রচেষ্টার সহযাত্রী হোন – সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এ প্রত্ন ও প্রাচীন সামগ্রী দান করে আপনিও হতে পারেন জাদুঘর গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার। ‘আমরা প্রতিটি বস্তুর প্রাপ্তির পাকা রশিদ বা দানপত্রের কাগজ দিয়ে থাকি এবং প্রদর্শনীতে দাতার নাম, তাহার পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সংগ্রাহকের নাম ঠিকানাও থাকে। দর্শনার্থী দেখে যেন বুঝতে পারে,আপনার দান অক্ষয় থাকুক। তাই বলছি পুরাতন জিনিসপত্র অযত্নে অবহেলায় ফেলে না রেখে আমাদের খবর দিন আমরা গিয়ে নিয়ে আসবো বা সংগ্রহ করবো।’
বিবিধ:
কিউরেটর হিসেবে আমি অবৈতনিক হলেও বাকি ৬জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ, এছাড়া বছরে ২লক্ষ টাকার উপরে লীজের টাকা পরিশোধ করে জাদুঘরটি ১২ বছর যাবত প্রবেশ মূল্য ছাড়া বা বিনা টিকিটে পরিচালনা করে আসছে। তবে ব্যায় সংকুলান ও জাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ২০ টাকা মূল্যের এন্টি ফি বা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল যা পরে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সকল সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতায় তিল তিল করে এই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। এপর্যন্ত বিক্রমপুর জাদুঘর এসেছে নিজেদের অর্থে নিঃসন্দেহে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের কঠিন কাজ। শুরু থেকেই সংগঠনের একটি শক্তিশালী টিম কাজ করছে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নূহ উল আলম লেনিন ভাইয়ের নেতৃত্বে। আমি তাঁহার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আমাকে কিউরেটরের দায়িত্ব দেওয়ার পর তার নিদর্শনায় এগিয়ে যাচ্ছি সাধ্যমত চেষ্টা করছি। সাবেক কিউরেটর অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া আমাদের সাজু’দাকেও ধন্যবাদ জানাই। তিনি অসুস্থতার জন্য দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না কিন্তু যখনই দেখা হয় খোঁজ খবর নেন আর যেহেতু শুরু থেকে তার পাশে থেকে কাজ করেছি, পাশাপাশি আমি স্কুল জীবন থেকেই বিক্রমপুরের সংবাদ নিয়ে তথা ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে আসছি তাই তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না আনন্দের মধ্যে দিয়ে কাজের ধারা অব্যাহত আছে পুরো বিক্রমপুরকে একটি ছাদের নিচে আনতে।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং যে সকল ব্যাক্তি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিক্রমপুর জাদুঘরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। যুগ যুগ ধরে কৃতজ্ঞতার সাথে আপনাদের কথা স্মরণ করবে মানুষ। সংগঠনের সম্মানিত সদস্য/সহকর্মী, বিক্রমপুরের সুধীজন এবং পাঠক আপনাদের সকলের সহযোগিতা ও ভালোবাসায় বিক্রমপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সাথে নিয়ে এই উম্মুক্ত বিক্রমপুর জাদুঘর একদিন আন্তর্জাতিক জাদুঘরের মর্যাদা পাবে তেমনি স্বপ্ন দেখি।
লেখক: নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল, কিউরেটর, বিক্রমপুর জাদুঘর