সোনাতলার দুর্গম এলাকা তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়নের যমুনার চরাঞ্চল। যমুনা নদী পারাপারে জনগণের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে দৈর্ঘ্যে সাড়ে ৫ হাজার ফুট একটি রাস্তা নির্মিত হয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। কিছু কাজ বাকি রয়েছে। অর্থের যোগান পেলে বাকি কাজ শেষ হবে।
সোনাতলা সদর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়নে অবস্থিত যমুনা নদী। নদীটির পূর্ব পাশে আরো একটি যমুনা নদী রয়েছে। আর পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি মরা নদী। বছরের অধিকাংশ সময়ে যমুনা নদীতে পানি থাকে। ফলে চরাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকার মানুষের জন্য নদী পারাপারে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা নৌকা। নদী পারাপার হতে গিয়ে বহুবার নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নদীতে পানি থাকার জন্য শিক্ষার্থীরা যথা সময়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। কৃষকদের ফসল উৎপাদনে,ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় এক কথায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষদের অসুবিধা সৃষ্টি হয়। তাই নদী পারাপারে সমস্যা লাঘব করতে গত জানুয়ারি মাসে চুকাই নগর এলাকার এন্তেজার রহমান বেপারী, জামিরুল মেম্বার, ছানাউল ইসলাম, হাজী ছারোয়ার হোসেন ও মোকাররম হোসেন-সহ আরো কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি বাঁধ বা রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাদের এ উদ্যোগকে সমর্থন দেন এলাকাবাসী। যেই কথা সেই কাজ। জনকল্যাণমূলক কাজটি সফল করতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বীকৃতি প্রামানিকের দ্বারা ভূমি রক্ষা ও পর্যটন বাঁধ রাস্তা নির্মাণ বিষয়ক কাজের উদ্বোধন করে নেন। এর পর থেকে উল্লেখিত উদ্যোক্তারা দানশীল ব্যক্তি ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে থাকেন। মোটা অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ হওয়ার সাথে সাথে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে শুরু করেন বাঁধ বা রাস্তা নির্মাণ কাজ। মরা নদীর পশ্চিম পাড়ে তিনমাথা মোড়ে শুকরু মিয়ার বাড়ির নিকট থেকে পূর্বদিকে সুজালেরপাড়া গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার ফুট রাস্তা নির্মাণ করেন। কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। কিছু মাটি ফেলার কাজ বাকি রয়েছে। তারপরও কাজ বন্ধ নেই। কাজ চলছে ধীরগতিতে। অর্থের যোগান পেলে অবশিষ্ট মাটি কাটা কাজ,রাস্তা বা বাঁধের দু’পাশে জরুরী ভিত্তিতে বøক ও জিওব্যাগ স্থাপন কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে দু’পাশে ঘাস ও বিভিন্ন গাছপালা লাগিয়েছে উদ্যোক্তারা। এদিকে রাস্তা বা বাঁধ দিয়ে জনসাধারণ সহজেই দিনে ও রাতে হেঁটে,সাইকেলে, মোটরসাইকেলে অটোভ্যানে, ঘোড়ারগাড়িতে ইত্যাদি যানবাহনে যাতায়াত করতে পারছে। পথচারীদের সুবিধার্থে বিশাল এই বাঁধের মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে বেড়া বিহীন দুটি ঘর। যাতে পথচারীরা ফাঁকা ঘরে আশ্রয় নিতে পারে। বাঁধ বা রাস্তা নির্মাণ বিষয়ে ইতোমধ্যে সাড়া পড়েছে সর্বমহলে। তা দেখার জন্য অনেকে আসেন ওই এলাকায়। সম্প্রতি সোনাতলা নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ বাঁধটি পরিদর্শন করেন ও কাজ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন । বাঁধটি নির্মাণ করার উদ্দেশ্য হলো বন্যার পানি নবনির্মিত বাঁধে বাধাগ্রস্ত হয়ে পূর্ব পাশের নদী দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে। এতে বহু জমি,ঘরবাড়ি ও ফসল রক্ষা পাবে। এছাড়া কয়েকটি গ্রামের মানুষজন বাঁধটির ওপর দিয়ে এপাড়-ওপাড় যাতায়াত করতে পারবে। বাঁধটি টেকসই ও মজবুতের ব্যবস্থার জন্য উদ্যোক্তারা কিছুদিন আগে বগুড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে গিয়ে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়ে কাজ পরিদর্শন করেন ও কমিটির নেতৃবৃন্দকে বাঁধ নির্মাণ কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বগুড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হক জানান চুকাই নগর বাঁধ নির্মাণ কমিটির লোকজন আমাদের নিকট একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা স্পটে দিয়ে কাজ পরিদর্শন করেছি এবং এ বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। অর্থ বরাদ্দ এলে কাজ অতি দ্রæত বাস্তবায়ন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বীকৃতি প্রামানিক জানান,বাঁধটি নির্মাণ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ও জেলা প্রশাসককে অবগত করেছি। স্থানীয়রা জানান, জনগণের টাকায় বিশাল রাস্তা বা বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় যাতায়াতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আগামী বন্যার আগেই রাস্তা বা বাঁধটি টেকসই করতে পানি উন্নয়ন বিভাগকে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট