আশ্রয় ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে এবং গণসাক্ষরতা অভিযান ও জিপিই এর সহযোগিতায় খুলনায় হোটেল ওয়েস্টার্ন ইন এর সেমিনার হলে ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার সকাল এগারোটায় “শিক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: নাগরিক সমাজের করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভাটি সভাপতিত্ব করেন আশ্রয় ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক মমতাজ খাতুন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মিহিরলাল সরদার, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক এসএম বদিউজ্জামান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোখলেছুর রহমান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর খুলনার প্রোগ্রাম অফিসার সাজিয়া আফরিন সিদ্দিকী, গণসাক্ষরতা অভিযান ঢাকার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার সামছুন নাহার বেগম কলি, গণসাক্ষরতা অভিযান ঢাকার প্রোগ্রাম অফিসার সিজুল ইসলাম। উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুন নাহার হাসিনা, দৈনিক কালের কন্ঠের সাংবাদিক এস এম আলাউদ্দিন, দৈনিক দিনকাল এর খুলনা ব্যুরো প্রধান সোহরাব হোসেন, আমার দেশ এর প্রতিনিধি শামুল হক শাওন, কমিউনিটি এডুকেশন ওয়াচ গ্রুপের সদস্য মিজানুর রহমান, অভিভাবক সুব্রত বিশ্বাস শিক্ষক মুক্তারুন্নাহার, শিক্ষক নেতা জাহাঙ্গীর আলম, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক লায়লা পারভীন, শিক্ষার্থী হরপ্রসাদ মাহাতো সহ অন্যান্যরা। মতবিনিময় সভায় আলোচনা পত্র উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন এর অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মেনহাজুল আবেদীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয় ফাউন্ডেশনের শিক্ষা কার্যক্রমের প্রধান বনশ্রী ভান্ডারী।
আলোচনা পত্র উপস্থাপনে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খরা ও চরম আবহাওয়ার মতো জলবায়ু দুর্যোগের ফলে বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, পাঠদান বন্ধ থাকছে এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও শিক্ষালাভ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, মেয়ে শিশু, প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, মানসিক চাপ, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পরিবারিক আয় হ্রাস, মাইগ্রেশন, বিদ্যালয় ত্যাগ ও শিশুশ্রমের ঝুঁকি বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়ে বাল্যবিবাহ বা অভিবাসনের দিকে ঝুঁকছে, যা শিক্ষার ধারাবাহিকতায় বড় বাঁধা তৈরি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সৃষ্ট এই বিপর্যয় ভবিষ্যতে “অর্থনৈতিক টাইম-বম্ব” হিসেবে কাজ করবে, কারণ শিক্ষার ক্ষতি সরাসরি উৎপাদনশীলতা ও আয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে এবং দারিদ্র্য-দুর্দশার চক্র আরও দীর্ঘস্থায়ী করবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে জলবায়ু-সহনশীল করতে চারটি জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা খাতে দুর্যোগ-ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা শক্তিশালী করা, বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে জলবায়ু-সহনশীল নকশা অনুসরণ করা, স্কুল বন্ধের সময়ে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রিমোট লার্নিং, পুনঃভর্তি কার্যক্রম ও শিক্ষা প্রণোদনা চালু রাখা এবং ছাত্র-শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলা।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা সুপারিশ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় নাগরিক সমাজ এবং এনজিওগুলো নীতি-অ্যাডভোকেসি, রাজনৈতিক অঙ্গিকার হিসেবে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা, নিয়মিত তদারকি, জিও-এনজিও সমন্বয় বৃদ্ধি, কমিউনিটি সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা উপকরণ সহায়তা, টিউশন ফি কমানো, সর্বজনীন মিড-ডে মিল ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কারিগরি শিক্ষায় ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, পর্যটন শিল্পের প্রসারে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ ও ব্যবসায়ী উদ্দ্যোগে নগদ অর্থ সহায়তা, শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দূর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা, স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগানো, বায়ু দূষণ রোধে ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা এবং টেকসই অভিযোজন উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, লবণ সহনশীল ফসল চাষ, নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থান, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, শিশুদের শিক্ষা সহায়তা, শিশুশ্রম প্রতিরোধে বিশেষ প্রণোদনা, জলবায়ু তহবিল বাস্তবায়নে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, পরিবারগুলোর আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন (Need Assessment) করে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ গ্রহণ করাসহ জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
উক্ত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, কমিউনিটি এডুকেশন ওয়াচ গ্রুপের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, যুব সংগঠক, এসএমসি, পিটিএ সদস্য এবং এনজিওকর্মীসহ অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট