1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

বিজয় দিবসের ডিসপ্লেতে ক্বাবা!

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩
কক্সবাজারে শিশুদের বিজয় দিবসের ডিসপ্লেতে ক্বাবার দৃশ্য প্রদর্শন নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কোন কিছুর প্রতিলিপি করাকেই অনেকে মূর্তি বলছেন। তবে এটাকে ভাষ্কর্য বা শিল্পকর্ম অবশ্যই বলতে হবে। বস্তুগত উপাদান থেকে উৎপন্ন সুনির্দিষ্ট কোন রূপ যা কাউকে চিহ্নিত করে তাকেই আমরা মূর্তি বলি। কোন ব্যক্তি, অবতার, দেবতা, অবয়ব বা চেহারার প্রতিরূপকে আমরা মূর্তি বলি। সে হিসেবে এই মক্কার ডিসপ্লেও মূর্তি। তবে অনেকে মূর্তি বা প্রতিমা বলতে জীবীত কিছুকেই বুঝাতে চাইছেন। আবার কেউ বলতে পারেন সেখানে জীবিত মানুষকেও উপস্থাপন করা হয়েছে। সেটা নিয়ে বিতর্ক করা যায় যে, মূর্তি কি জীবীত কিছু দিয়ে করা যাবে? ভাস্কর্যে অনেক সময় জীবীত কিছু বা ফল-মূল সাময়িক ব্যবহারের নজির রয়েছে। মক্কায় যখন শয়তানকে পাথর মারার জন্য তিনটি ভাস্কর্য করা হয়েছিল তখনও বিতর্ক হয়েছিল যে, ওগুলো শয়তানের মূর্তি কি না? শেষে সৌদী সরকার তা বদলে ফেলে তিনটি দেয়ালকেই চিহ্নিত করে শয়তান হিসেবে। শয়তান যেহেতু জীবীত তাই তার নামে কিছু নির্মাণ করা হলে তাকে মূর্তি বা প্রতিমা বলাই লাগে। প্রতিমা আবার ধর্মীয় শিল্পকর্ম বা চিত্রকর্ম বা প্রতিচ্ছায়া বা ছবি। সেই অর্থে শয়তানের স্থাপত্যকে প্রতিমাই বলা যৌক্তিক।
বিজয় দিবসের ডিসপ্লেতে ক্বাবার ভাস্কর্য তৈরি করে তার চারদিকে প্রদক্ষিণের দৃশ্য প্রদর্শন ধর্মীয়ভাবে শুদ্ধ কি অশুদ্ধ সেটার চেয়েও বড় প্রশ্ন এর উদ্দেশ্য ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে। আমাদের সবকিছুই ধর্মীয়করণ করার প্রবণতা রয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিকতা ব্যহত হলে এমনটা বেশি হয়। তখন শাসকগণ ধর্মকে ব্যবহার করে এবং কিছু মানুষ শাসকদের খুশি করতেই এমনটা করে। একই সাথে তারা মৌলবাদকে প্রচারের সুযোগ হিসেবেও দেখে। এখানে এ দুটিই ঘটেছে। সাম্প্রতিক ধর্মীয় প্রচারের কিছু ভিন্ন বিষয় আমরা দেখছি। যেমন গাছে গাছে পেরেক মেরে ইসলামী শব্দ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বিপুলভাবেই। এটা তো একজন শিক্ষিত বা সচেতন মানুষ ভাল হিসেবে নিবে না। যারা লেখাপড়া জানে না তারাতো বুঝবেও না। কিছু মৌলবাদী চেতনার মানুষ খুশি হতে পারে। এমন প্রদর্শন বাতিকতারই নমুনা ওই ডিসপ্লেও। ধর্মান্ধ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই প্রদর্শনকে পছন্দ করে। তারা নিজেদের দেখাতে চায় যে, তারা খুবই ধর্মান্ধ। তারা মনে করে এমনটা দেখে মানুষ খুশি হবে এবং তাকে নেক্কার ভাববে। কিন্তু সচেতন মানুষতো ন্যাক্কারজনক মনে করবে সেটা তাদের ভাবনায় আসে না। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখি, কিছু মৌলবাদী মানুষ উগ্র ধর্মান্ধতাকে প্রশংসা করে। অনেকে এই প্রশংসার ফাঁদ থেকেও বের হতে পারে না।
গতকাল এক হুজুরের পাশে বসে পরিবহণে আসছিলাম। তিনি গণতন্ত্র ও নেতাদের বক্তব্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন। আমি বললাম, কোন মুসলিম দেশে কি গণতন্ত্র আছে? কোন মুসলিম দেশের নেতা কি জবাবদিহিতা করে? তাদের মুখ থেকে অহরহই হঠকারী ও মিথ্যাচার শুনি। বিপুলভাবেই তাদের আত্ম প্রদর্শন ও প্রচারণা দেখি৷ আরো বিভিন্ন কথাই বললাম মুসলিমদের পিছিয়ে থাকা নিয়ে। তিনিও একসময় স্বীকার করলেন এবং হতাশা প্রকাশ করে বললেন, ‘মুসলিমদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে আমার খুবই লজ্জা লাগে।’ আমিও বিস্মিত হলাম তার কথা শুনে। তবে বুঝলাম, কিছু মানুষ লজ্জা পায়। তারাও বের হতে চায় এমনসব কাণ্ড থেকে কিন্তু পারে না। জ্ঞানের প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েই তারা এসব সাম্প্রদায়িক আচরণ করে এবং প্রদর্শন বাতিকগ্রস্থ হয়৷
আমাদের স্বাধীনতার কয়েকটি ভিত্তি ধরে নিয়েছি যার দুটি হল— গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। গণতন্ত্র বহুদিন ধরেই কোমায় রয়েছে। যেকোন সময়েই এর মৃত্যু ঘটতে পারে। কায়েম হতে পারে স্থায়ী অগণতান্ত্রিক শাসনের। বিজয় দিবসের প্রোগ্রামে আমরা প্রত্যাশাই করি ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয় উপস্থাপন করা হবে। কিন্তু কেন সাম্প্রদায়িক বিষয় নিয়ে আসা হল? এটিকে কেন উৎসাহিত করা হল? এখানেতো এক ধর্মের লোক আসেনি। মানুষ এখানে আসে ধর্ম নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে। এটার অনুমোদন যারা দিয়েছেন তারাও মৌলবাদকে উৎসাহিত করতে চেয়েছেন৷
মানুষের বহুরকমের প্রদর্শন বাতিকগ্রস্থতা রয়েছে৷ ধর্মান্ধ খ্রিস্টানরা সার্টের ফাঁক দিয়ে ক্রশ দেখান৷ ব্রাহ্মণরা তাদের উঁচু জাত বুঝাতে পৈতা প্রদর্শন করেন৷ আমি শিশুদের ‘নম্বা করতে পারবা’ বুঝাতে নুনু প্রদর্শন করতে দেখেছি৷ ইরানের মাশা আমিনীর হত্যার প্রতিবাদে কিছু নারী নগ্ন বক্ষ প্রদর্শন করেন৷ ফরাসী চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানী চার্লস লাসেগ প্রদর্শন বাতিককে মনোবৈকল্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। যদি অনিচ্ছুক ব্যক্তিকে কেউ তার অন্ধ-বিশ্বাস বা যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করে, তবে তা প্রদর্শন বাতিক বৈকল্য হিসেবে সূচিত হয়। মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক বৈকল্য সূচি অনুযায়ী পুরুষে ২-৪ শতাংশ ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন বাতিক দেখা যায়। সুইডিশ জরিপ অনুযায়ী ২.১% নারী এবং ৪.১% পুরুষ আগন্তুকদের তাদের যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করতে ইচ্ছুক। মনোবৈকল্যগ্রস্থ কিছু পুরুষ নুনু প্রদর্শন করে৷ আমার এক বন্ধু হুটহাট করেই তার নুনু প্রদর্শন করতো৷ আমি আমার এক বন্ধুর সাথে যাওয়ার সময় এক পাগলী মেয়ে কাপড় তুলে তার যৌনাঙ্গ দেখায়৷ আমি দ্রুতই চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম৷ আমার বন্ধুটি হইহই করে উঠেছিল৷ ওই বন্ধুটি এখন মৌলবাদী৷ প্রাইমারীতে পড়ার সময় আরেক বন্ধুর সাথে গ্রামীণ পথ ধরে যাওয়ার সময় এক মহিলার নগ্ন বক্ষ দেখেই আমি চোখ সরিয়ে নেই৷ মহিলা আমার বন্ধুটিকে খুবই নাজেহাল করে৷ সে নাকি ওনার বক্ষের দিকে কুৎকুৎ করে তাকিয়ে ছিল৷ সেও মৌলবাদী হয়েছে৷
প্রদর্শন বাতিকগ্রস্থরা যাই প্রদর্শন করুক তাতে মূলত তাদের সমস্যা বা মনোবৈকল্য প্রকাশ করে৷ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এমনটা করা হয়৷ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অনেক অমুসলিমও ছিলেন যারা এটাকে ভাল মনে নেয়নি৷ মৌলবাদীরা মানবিক নয় বলেই এসব আমলে নেয় না৷

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews