স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে যে কয়জন জাতীয় নেতার আবির্ভাব হয়েছিল বগুড়ার আব্দুল মান্নান তাদের মধ্যে অন্যতম।
বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের হিন্দুকান্দীতে জন্মগ্রহণকারী আব্দুল মান্নান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃচির আন্দোলনে ও তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। কৃষক ও কৃষিবিদদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি সক্রীয় ভূমিকা পালন করেন। বহুতল কেআইবি কমপ্লেক্সের জমি ও নির্মাণ কাজে তিনি অনন্য অবদান রেখেছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং ৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক জিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন আবদুল মান্নান। জিয়া-এরশাদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি এ লড়াকু ছাত্রনেতা।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আব্দুল মান্নান সংসদ সদস্য হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিগত ৮০-এর দশকের তুখোড় এ ছাত্রনেতা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু)-এর ভিপি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন এর মহাসচিব এর দায়িত্বও পালন করেছেন।
২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি ৬৬ বছর বয়সে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে দেশ যেমন একজন বরেণ্য রাজনৈতিক নেতাকে হরিয়েছে সোনাতলা সারিয়াকান্দি এলাকাবাসী হারিয়েছে একজন যোগ্য অভিভাবককে।
আব্দুল মান্নান ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বগুড়া ১ সোনাতলা সারিয়াকান্দি আসনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মূলত ৯০ এর গণআন্দোলনে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকেই সোনাতলা-সারিয়াকান্দির রাজনীতিতে তার পদচারণা শুরু হয়। বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত সোনাতলা-সারিয়াকান্দি উপজেলায় আওয়ামী লীগকে সু প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি রাতদিন গ্রাম থেকে গ্রামে চষে বেড়িয়েছেন। এলাকার উন্নয়নে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। সোনাতলা সারিয়াকান্দি উপজেলার ছোটবড় সকল রাস্তার উন্নয়ন। ব্রিজ, কালভার্ট নির্মানে তিনি অনন্য নজীর স্থাপন করে গেছেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক বিল্ডিং নির্মান করে গেছেন এই ক্ষনজন্মা মানুষটি। শতভাগ বয়ষ্কভাতা, বিধবাভাতার আওতায় তার নির্বাচনী এলাকা। সোনাতলা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলাও ঘোষণা করেন তিনি। সোনাতলা সারিয়াকান্দি উপজেলার চারিদিকে তাকালে আব্দুল মান্নানের অবদান চোখে পড়বেই। বড় অসময়ে না ফেরার দেশে পারি জমিয়ে সোনাতলা সারিয়াকান্দিকে অভিভাবকহীন করে গেছেন তিনি। সোনাতলা সারিয়াকান্দি এলাকার মানুষ আজীবন মনে রাখবে এই কর্মবীরকে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট