তিনি বলেন, ‘শরীরে যেকোনো বয়সে ক্যান্সার হতে পারে। দেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের ৫ শতাংশ শিশু। ৩০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৯ বছর। তাদের মধ্যে আবার ৪০ শতাংশের দীর্ঘমেয়াদি রোগ কোমরবিডিটি সমস্যা রয়েছে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোমরবিডিটি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের রয়েছে। নারীদের মধ্যে বেশির ভাগের জরায়ু ক্যান্সার। এখন আবার ফুসফুসের ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। যদিও ফুসফুসের ক্যান্সার পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি।
বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্যান্সার দিন দিন বাড়ছে এবং বাড়তে থাকবে বলেই আমার আশঙ্কা। আমরা চাই আর না চাই, কিছু মানুষের ক্যান্সার হবেই।’ এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হলো, ক্যান্সার প্রতিরোধক ব্যবস্থা করা, দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে অনকোলজি বা ক্যান্সার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরি করা।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নাজির উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার অবস্থা শোচনীয়। রেডিয়েশন থেরাপির জন্য মেশিন দরকার ৩০০, সেখানে ছয়-সাতটি মেশিন চালু আছে।’
গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অনকোলজি সোসাটির সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে জাতীয়ভাবে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি চালু, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের মূল সহজলভ্য করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি অনকোলজি ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা করা। যার অধীনে বিভিন্ন ক্যান্সার বিভাগ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। রেডিয়েশন অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, গাইনি অনকোলজিসহ অন্যান্য অনকোলজি কোর্স চালু করা। এমবিবিএস কোর্সে ক্যান্সার বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা।
গাইনি অনকোলজিক্যাল সোসাইটি ইন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন বলেন, ‘জরায়ু ক্যান্সার শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ না হলেও ৯৮ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চাই।’
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (মেডিক্যাল অনকোলজি) ডা. মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বিদ্যুৎ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রচলিত আছে, ক্যান্সারের ৩ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসায় ভালো করা যায়, ১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং ১ শতাংশ প্রতিরোধ করা যায়। এই প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় সচেতনতা তৈরিতে আমাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিরোধের জন্য আমাদের জানতে হবে ক্যান্সার কেন হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এখানে গণমাধ্যমকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।’
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিডেটের নির্বাহী পরিচালক (বিক্রয়) আশরাফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ইনসুলিন এবং অন্যান্য জৈবিক পণ্য চালু করে ইনসেপ্টা বায়োটেক পণ্যের যুগ শুরু করে। সাশ্রয়ী মূল্যে অনেক জীবন রক্ষাকারী জৈবিক পণ্য উৎপাদন করে এবং এই পণ্যগুলো দেশের সাধারণ জনগণের কাছে আরো সহজলভ্য করেছে।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (পুূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প) ডা. এস এম মাসুদ আলম, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএ) অনারারি সেক্রেটারি ডা. আবুল বাশার মো. জামাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. নাজরীনা খাতুন, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান ডা. রকিব উদ্দিন আহমেদ, মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আরা বেগম, মেডিক্যাল অফিসার ডা. এ টি এম কামরুল হাসান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অনকোলজি সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রাসেল, বাংলাদেশ আমর্ড ফোর্সেস ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ডাইরেক্টরেট জেনারেল মেডিক্যাল সার্ভিসেস, কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান জেনারেল মেজর জেনারেল ডা. মো. আজিজুল ইসলাম, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ক্যান্সার সেন্টারের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (এলপিআর) মো. কুদর-ই- ইলাহী প্রমুখ।