কদিন পরপরই কিছু মানুষ নিজেকে যিশু বা ইমাম মাহাদী দাবি করে কিছু অনুসারী জুটিয়ে নেন৷ কিন্তু অধিকাংশ বিশ্বাসীরাই বিষয়টি মেনে না নেয়াতে তারা প্রতিষ্ঠা পান না৷ বিশেষ করে মক্কায় একজন বাংলাদেশিসহ বহু মানুষই নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবি করে ঝামেলা করেছেন৷ বিপরীতে জেরুজালেমে যিশুর পুনরুত্থানের দাবি অনেকেই করেন৷
ইমাম মাহদী হচ্ছেন কেয়ামতের পুর্বে আগমনকারী মুসলমানদেরকে নেতৃত্ব দানকরী শাসক, যিনি পৃথিবীতে সাত, নয় অথবা উনিশ বছর শাসন করবেন। তার কথা হাদিসের বহু জায়গায় বলা হয়েছে। তিনি মদিনায় জন্মগ্রহণ করবেন।“যে বছর রমজান মাসের প্রথমদিকে সূর্যগ্রহণ ঘটবেএবং রমজান মাসের ১৪ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে, এর পরেই ইমাম মাহাদী আসবেন। তখন এক বছরের খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে রাখাতে হবে(ইমাম কুরতুবী (রঃ) রচিত কিতাব ‘মুখতাছার তাজকিয়াহ্’ গ্রন্থের ৪৪০ পৃষ্ঠা)।
ডক্টর মুহম্মদ রুহুল আমিন দৈনিক ইনকিলাবে এক নিবন্ধ লিখে দাবি করেছেন, ‘বর্তমান পৃথিবী যুদ্ধ-বিগ্রহ, দূর্নীতি, হিংসা হানাহানিতে ভরে গেছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় আজ চরম পর্যায়ে চলে গেছে। সিরিয়ায় বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে, এই যুদ্ধ বন্ধ করার মত কোন শক্তি পৃথিবীতে নাই। এই যুদ্ধে পৃথিবীর ৮০টি রাষ্ট্র যুক্ত হবে এবং সর্বশেষ এটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে। হাদিস অনুযায়ী একমাত্র হজরত ইমাম মাহদী (আঃ)-ই পৃথিবীতে মহাশান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবেন। তাই ইমাম মাহদী আগমনের ঘটনাটি বর্তমান পৃথিবীর মানুষের জন্য একটি বিরাট ঘটনা। আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে আমরা বিস্তর গবেষণার মাধ্যমে ইমাম মাহদীর আগমনের বছরটি খুঁজে পেয়েছি। এজন্য আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। আখেরী জামানার এই সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনাটি, আল্লাহর হাবীব রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বংশধরের মধ্য হতে হজরত ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর শুভ আগমনের সেই বহুল প্রতিক্ষীত বছরটি আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ রহমতে আমরা আবিষ্কার করে সারা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য জানিয়ে দিলাম যাতে করে মানুষ সতর্ক ও প্রস্তুতি নিতে পারে, তা না হলে বর্তমান পৃথিবীর আনন্দ উল্লাসে গা ভাসিয়ে দিলে দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে জীবন শেষ হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। ২০২৬ সালে রমজান শুরু হবে ১৮ই ফেব্রুয়ারী এবং নাসার হিসাব অনুযায়ী ২০২৬ সালে ১৭ই ফেব্রুয়ারী সূর্যগ্রহণ হবে। ঐ বছর রমযানের ১৫ তারিখ পড়ে ৩রা মার্চ। আর নাসার হিসাব অনুযায়ী চন্দ্রগ্রহণ হবে ৩রা মার্চ। অর্থাৎ হাদিস ও নাসার তথ্য অনুযায়ী ২০২৬ সালে ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আবির্ভাবের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
মহানবীর বংশে ফাতেমা (রা.)’র সূত্রধরে আগমন করবেন ইমাম মাহাদী। আবু সাঈদ খুদরী (র) নবী (স)হতে বর্ণনা করেন, আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি আগমনের পর সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন (মুস্তাদরাকুল হাকিম হাদীস নং- ৭১১)। সৈন্যরা ঘোড়ায় চড়ে তরবারী দিয়ে যুদ্ধ করবেন এবং জয়তুন গাছে তরবারী ঝুলিয়ে রেখে বিশ্রাম করবেন।হাদিসে দাজ্জালের বাহনের হিসেবে গাধার কথা বলা হয়েছে। দাজ্জালের গাধা হবে খুব দ্রুতগামী, কান হবে অনেক লম্বা।
২০২০ সালের মে মাসে সৌদী আরবে হিযরতের চেষ্টাকালে ১৯ জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকার পুলিশ। তাবলিগের নামে সৌদী আরব গিয়ে ইমাম মাহাদীর সাথে সাক্ষাতের জন্য ৪০ দিন ধরে চেষ্টা করছিলেন তারা। সৌদী প্রবাসী মোস্তাক মোহাম্মদ আরমান খানের ফতোয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এর আগেও কয়েকজন তার সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। তাদের বিশ্বাস গজবের ফলে বিশ্বব্যাপী ধোঁয়া উঠবে এবং তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে স্থলপথে সৌদি আরব গিয়ে ইমাম মাহাদীর সাথে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হবেন।
এর আগেও আরো অনেকে নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবী করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন মির্যা গোলাম আহমেদ, যিনি একজন ভারতীয় ধর্মীয় নেতা, এবং আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামক এক ধর্মের প্রবর্তক। তাঁর দাবী মতে, তিনি ১৪ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ (আধ্যাত্মিক সংস্কারক), প্রতিশ্রুত মসিহ, মাহাদি এবং খলীফা। তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা দানকারী একজন উম্মতি নবী হিসেবেও নিজেকে দাবী করেন। তিনি ১৯০৮ সালে মৃত্যুবরণ করলেও তার অনুসারীরা এখনো তাকে ইমাম মাহাদী দাবি করেন।
কয়েক বছর আগে ঢাকার শাহজাহানপুর এলাকা থেকে ‘ইমাম মাহাদী’ দাবিদার এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম মো. মঈন উদ্দিন (৪৫)। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলায়। পাকিস্তানের পাঞ্চাব প্রদেশে আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে, নিজেকে ইমাম মাহাদী ও ইসলামের ১১তম ইমাম বলে দাবি করায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। ঢাকার গুপিবাগের লুৎফর রহমান ফারুক নিজেকে ইমাম মাহাদীর সেনাপতি দাবি করতেন। জঙ্গিরা ৫ মুরিদসহ তাকে হত্যা করে। ১৯৭৯ সালের ২০শে নভেম্বর ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফে ফজরের নামাজ মাত্র শেষ হতে চলেছে। হঠাৎ সাদা কাপড় পরা প্রায় শ’দুয়েক লোকজন অস্ত্র হাতে বেরিয়ে এলো নামাজীদের মধ্য থেকে। সেখানে একজন নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবি করে। বন্দুকধারীদের মোকাবেলায় প্রথম চেষ্টাটা ছিল খুবই কাঁচা। অল্প সংখ্যাক ন্যাশনাল গার্ড এবং সামরিক বাহিনীর সদস্য প্রথম সেখানে গিয়েছিল। তারা বেশ সাহসী প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু তাদের সাথে সাথেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়। সৌদি সরকার এরপর সেখানে হাজার হাজার সৈন্য এবং কমান্ডো পাঠায় মসজিদ পুনর্দখলের জন্য। পাঠানো হয় সাঁজোয়া যান। মক্কার আকাশে উড়তে থাকে যুদ্ধ বিমান। পরবর্তী কয়েকদিনে সেখানে তীব্র লড়াই শুরু হলো। সৌদি সরকারি বাহিনী একের পর এক হামলা চালাতে লাগলো। মসজিদের একটি অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলো। ফরাসী বিশেষ বাহিনী সৌদি আরবে পাঠানো হয়। তারা পরামর্শ এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছিল। এরা মসজিদের ভুগর্ভে যেখানে জঙ্গীরা লুকিয়ে আছে, সেখানে বিপুল পরিমাণ সিএস গ্যাস ছাড়ার পরামর্শ দিল। শেষ পর্যন্ত যে জঙ্গীরা বেঁচে ছিল, তারা আত্মসমর্পণ করলো। এই অবরোধ চলেছিল দুই সপ্তাহ ধরে। পরে জঙ্গীদের নেতা জোহেইমান সহ ৬৩ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। অন্যদের জেল হয়।
এ ধরনের দাবিদার মাঝেমধ্যেই আত্মপ্রকাশ করে। অধিকাংশই তাদের ইমাম মাহাদী হিসেবে মেনে নেন না। স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধের মুখে বা পুলিশ গ্রেফতার করতে তাদের দাবি শেষ হয়ে যায়। তবে বিশ্ময়কর যে প্রত্যেক দাবিদারই বেশ কিছু ভক্ত জুটিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। মক্কা শরিফ দখলদারই সবচেয়ে সশস্ত্র চেষ্টা করেছিলেন। তবে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই সবচেয়ে সফল হয়েছেন। এখনো তার বিপুল সংখ্যক অনুসারী বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে রয়েছেন তাদের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি। হাদিস অনুসারে নবী ঈসা তথা যিশু আসমান থেকে সরাসরি দামেস্কের পূর্ব দিকে মসজিদের সাদা মিনারের পাশে অবতরণ করবেন। তিনি এসে আল-মাহদীর নেতৃত্বে সালাত আদায় করবেন। তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন, জিযিয়া রহিত করবেন। ইমাম মাহদী ও মসীহ দুইজন আলাদা ব্যক্তি হবেন। এই বিষয়গুলো মির্যা গোলাম আহমদের দাবির বিপরীত হওয়ায় সুন্নীরা আহমদীয়াদের সমালোচনা করেন। তারা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি করেন।
এসব দাবি চলতেই থাকবে৷ একটা চাঞ্চল্য তৈরি করে এমন দাবি স্তিমিত হতেই থাকবে৷ ধর্মগ্রন্থে যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে তা কোন দিনই আসবে না৷ তাহলে ইমাম মাহাদী ও যিশু কিভাবে আসবেন?