ঝিনাইদহ ০৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
রোববার (২৩ জুন) বিকালে কালীগঞ্জ শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ডে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ আয়োজিত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ঝিনাইদহ ০৪(কালীগঞ্জ) আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ডরিন।
মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, “আমি কাউকে ইঙ্গিত করে কখনও কথা বলিনি। কাউকে ফাঁসানোর জন্য কোথাও কিছু বলিনি। তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করে যার সংশ্লিষ্টতা পাচ্ছে, তাকে আটক করছে।” ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর আট দিনের রিমান্ড হওয়া সত্ত্বেও তিনদিনের মাথায় কারাগারে কেন চলে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। ডরিন বলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধ করে তার দায় কিন্তু দল নেবে না। দলের মধ্যে থেকে যদি কেউ অপরাধ করে দল তাকে বহিষ্কার করে দিতে বাধ্য। আমার বাবার যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তার বর্ণনা সন্তান হিসেবে দিতে কষ্ট হয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দ্রুত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ করার মতো অনেক লোক আছে।”
এমপি কন্যা আরও বলেন, “আমার বাবা হত্যার শিকার হয়েছে। কালকে তো আরও একজন মারা যেতে পারে। একে একে কি সবাই মারা যাবে? আমি চাই, সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে এর বিচার হবে এবং যারা জড়িত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর তাদের জায়গা দেবে না।” আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ও অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ প্রসঙ্গে ডরিন বলেন, “তারা নিজেরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডগুলো ঘটিয়ে বিষয়টিকে অন্যভাবে ডাইভার্ট করার জন্য অপপ্রচার দিয়েছে। ইন্ডিয়ায় নিয়ে গিয়ে মারার একটাই কারণ এই ধরনের অপপ্রচার দেওয়ার জন্য। আমি এতবড় হয়েছি, আমি নিজেই জানতাম না যে স্বর্ণ চোরাচালান হয় কী করে। এই ধরনের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার বাবার ইমেজ ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। কখনও আমি মেনে নিবো না।”
উপস্থিত জনতাকে বাবার লাশের ছবি দেখিয়ে ডরিন বলেন, “আপনারা সবাই আমার বাবার নৃশংস হত্যার ছবিটা দেখেছেন। এই ছবি দেখে যদি একটি মানুষ চুপ করে থাকে, তিনি কীভাবে রক্ত মাংসের গড়া হতে পারে। আমি যখন আমার নিখোঁজ বাবাকে খুঁজছিলাম, তখন তারা কেন আমাকে বলল না। যারা এই ছবি দেখেও চুপ করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তাদের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু।”
প্রায় ১০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে মঞ্চে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ডরিন বলেন, আমার বাবা আমাদের পরিবারকে বেশি সময় দিতেন না। তিনি সারাদিন এলাকার মানুষের কল্যানে ছুটে বেড়াতেন। মৃত মানুষের জানাজায় যেতেন। বাবা হত্যাকান্ডের পর আজকের এই প্রতিবাদ সভায় আপনাদের উপস্থিতি দেখেই বুঝতে পারছি তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। আপনাদের ভালবাসায় বাবা এই আসনে তিন তিন বার এমপি হয়েছেন। আজ রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাকে খুন হতে হয়েছে। আমি আমার বাবার খুনিদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, মেয়র আশরাফুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান রাসেল সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, এমপি আনার খুনের পর কালীগঞ্জে যারা রঙ্গিন পোষ্টার বানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে ঈদ উৎসব শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারাও আনার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে। এমন নৃশংশ হত্যার সঠিক তদন্ত করে জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা এমপি আনারকে খুন করে তার অনুসারী ভক্তদের দমানো যাবে না। তারা বলেন, জীবিত আনারের চেয়েও মৃত আনার অনেক শক্তিশালী।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট