1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৫ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
বগুড়ায় জেন্ডার সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রাম আদালত বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ পেয়ে জীবন বদলে গেছে আমিনার ও মারুফা দম্পতির ঢাকায় আইএলও কনভেনশন অনুস্বাক্ষর বাস্তবায়ন সম্পর্কিত মতবিনিময় সভা বগুড়ায় গ্রাম আদালত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় বিষয়ক অর্ধ-বার্ষিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত রানীরপাড়া স্কুলে আলোর প্রদীপ সংগঠনের পুষ্টিকর খাবার ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ময়মনসিংহে ‘আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা নেত্রকোণায় নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা বিষয়ক মতবিনিময় সভা সোনাতলায় মাদকের ব্যপকতা প্রতিরোধে বিক্ষোভ সমাবেশ সোনাতলায় মাদক নির্মূলের দাবিতে নাগরিক কমিটির স্মারকলিপি প্রদান বৈশ্বিক অর্থায়ন সংকটের প্রেক্ষিতে এনজিওদের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভা

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ পেয়ে জীবন বদলে গেছে আমিনার ও মারুফা দম্পতির

রাশেদুল ইসলাম রাশেদ
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫
মারুফা বেগম

আমিনার (৪৪)  একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নে আদর্শপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। আমিনারে বয়স যখন ৭ বছর তখন তাঁর বাবা-মা দু’জনেই মারা যান। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সে তাঁর চাচার বাড়িতেই বড় হয়। একেই তো প্রতিবন্ধী তারওপর আবার এতিম, বাবা-মা কেউ নেই। ফলে আমিনারের ইচ্ছে থাকলেও স্কুলের চৌকাঠ স্পর্শ করার সৌভাগ্য তার হয়নি। এভাবে সে চাচার বাড়িতে কখনো গৃহস্থালির কাজ আবার কখনো মাঠের কাজ করে আশ্রয় ও অন্ন পেয়েছিলেন।

২০০৭ সালে আমিনারের বয়স যখন ২৬ বছর তখন তাকে একই ইউনিয়নের কিসামত গ্রামের মাত্র ১৩ বছরের মেয়ে মোছা. মারুফা আক্তারের (৩৩) সাথে বিয়ে দেয়া হয়। মারুফার বয়স যখন ১০ বছর তখন তাঁর মা মারা যায়। মা মারা যাওয়ার এক বছর পরেই তাঁর বাবা আবার নতুনক করে আরেকটি বিয়ে করেন। ফলে সৎ মায়ের সংসারে মারুফা আক্তারের টিকে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এমতবস্থায় মারুফার বাবা একজন পাত্র খুঁজছিলেন যাতে যেনতেনভাবে হলেও মারুফাকে পাত্রস্থ করা যায়। আমিনার- মারুফার বিয়ের পরেও তাঁরা আমিনারের চাচার বাড়িতে থাকতেন।  বিয়ের পর মারুফা তাঁর চাচার বাড়ির গৃহস্থালির সব কাজ করতেন  এবং আমিনার মাঠের কাজ করতেন। এভাবেই তাঁদের দিন চলতে থাকে। আমিনার-মারুফা দু’জনেই দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেন। বিনিময়ে তাঁরা শুধু অন্ন আর আশ্রয়টুকু পেয়েছেন।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন? তাঁদেরও তো একটা ভবিষৎ আছে। বিষয়টা আমিনার বুঝতে না পারলেও মারুফা সহজেই অনুধাবন করতে পেরেছেন। এরমধ্যেই আমিনারের বাবার যে বাড়ির ভিটেটুকু ছিল, সেটিও দখল হয়ে গেছে! মারুফা তাঁর পাড়াপ্রতিবেশীদের সাথে অনেক লড়াই সংগ্রাম করে বাড়ির ভিটেটুকু উদ্ধার করেন। সেখানেই একটা ছাউনি ঘর তৈরি করে দু’জনের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। দু’জনেই দিনমজুরের কাজ করেন। গ্রামাঞ্চলে সেই সময় (২০০৭-২০০৮)  দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা সর্বোচ্চ দিনমজুরের মুল্য ছিল। যেদিন কাজ জোটে সেদিন খাবারও জোটে, কাজ না থাকলে খাবারও জোটে না। এভাবেই কোন দিন খেয়ে আবার কোন দিন না খেয়ে আমিনার-মারুফা দম্পতির দিন চলে যায়।

আমিনার ও মারুফা দম্পতির ঘরে এখন দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। বড় ছেলের নাম মো. মারুফ (১৭), সে একটি হাফিজিয়িা মাদ্রায় পড়াশোনা করছে, এরপর

দ্বিতীয়টি মেয়ে সন্তান নাম মোছা. আশা মনি (১৫)।  সে এবার মীরগঞ্জ হাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। এরপর তৃতীয় সন্তানের নাম মোছা. আশরাফী আক্তার (৯) সে পশ্চিম শিমুল বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। এরপর চতুর্থ সন্তানের নাম মো. মেজবাউল ইসলাম (৪)।

বর্তমান অবস্থা  ও সফলতা

শার্প সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়িত পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্প অতি দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালে খানা জরিপের মাধ্যমে নিঃস্ব ও হত দরিদ্র ক্যাটাগরিতে মারুফা বেগমকে পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্পের সদস্যভুক্ত করা হয় এবং মারুফার স্বামী আমিনারকে মীরগঞ্জ ইউনিয়নের জবা প্রতিবন্ধী ফোরামের সদস্য হিসেবে যুক্ত করা হয়।

আমিনার বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বামীর প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য মারুফা বেগম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে অনেক ঘুরাঘুরি করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সবাই শুধু টাকা চায়! প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করেন। কিন্তু এতোগুলো টাকা ঘুষ দেয়া মারুফার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে আমিনার প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সে প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে বঞ্চিত থাকে। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার পর, আদর্শপাড়া পিভিসি ও প্রতিবন্ধী ফোরামে প্রতিবন্ধী ভাতার প্রসঙ্গ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য কোন টাকা-পয়সা লাগে না। এই কথাটি মারুফা প্রথম কারো কাছে শুনতে পায়! মারুফা বেগম আশ্চর্য হয়ে যান! এটা কী সম্ভব?

মারুফা পুনরায় তাঁর স্বামীর প্রতিবন্ধী ভাতায় অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রকল্পের কমিউনিটি মোবিলাইজেশন কম্পোনেন্ট এর সহযোগিতার মাধ্যমে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আমিনারের সুবর্ণ নাগরিক সনদ ও প্রতিবন্ধী ভাতায় অন্তর্ভুক্তি করা হয়। আমিনার এখন প্রকল্পের সহযোগিতায় নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়াও ছাগল পালনের প্রতি আমিনারের আগ্রহের কারণে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তাকে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের  আইজিএ প্রদান করা হয়। মারুফা বেগম প্রতিবেশীর কাছ থেকে দুটি ছাগল বর্গা (আদি) নিয়ে লালন পালন করছিলেন এরপর প্রকল্প থেকে তাঁকে আরো দুটি ছাগল এবং ছাগলের ঘর (মাচা) তৈরির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। মোট ৪ টি ছাগল নিয়েই আমিনারের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়।

এরপর ২০২৪ সালে পিপিইপিপি-ইইউ প্রকল্পের সহযোগিতায় নিঃস্ব ও অতি দরিদ্র প্রতিবন্ধী সদস্যদের ছাগল ও হাঁস-মুরগী পালনের ওপরে তিন দিনের একটি আবাসিক বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণে ট্রেনিং নিড অ্যাসেসমেন্টের (টিএনএ) মাধ্যমে প্রতিবন্ধী খানার সদস্য হিসেবে মারুফা বেগমকে প্রশিক্ষণে যুক্ত করা হয়।

প্রতিবন্ধী সদস্যদের এই বিশেষায়িত প্রশিক্ষণটি মারুফা বেগমের জীবন বদলে দিয়েছে। তিনদিনের এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মারুফা বেগম ছাগল ও হাঁস-মুরগী পালনের কলাকৌশল সম্পর্কে গভীর ধারণা পান। ছাগল ও হাঁস-মুরগীর জাত পরিচিতি, তাদের আবাসন ব্যবস্থা, রোগ-বালাই প্রতিরোধ ও প্রতিকার , ভ্যাক্সিনেশন, ঘাস চাষ ও সহজলভ্য করে ছাগল ও হাঁস মুরগীর খাবার তৈরি। এছাড়াও মার্কেট লিঙ্কেজ করে কিভাবে স্মল স্কেলের আইজিএকে লার্জ স্কেলে রূপান্তরিত করা যায়, কিভাবে সহজেই ছাগলের খামার সম্প্রসারণ করা যায় এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেন।

প্রতিবন্ধীদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ শেষে মারুফা বেগম ও আমিনার দম্পতি প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাকে বাস্তবিকভাবে কাজে লাগান। মারুফা বেগম তাঁর খামারে দেশী জাতের ব্লাক-বেঙ্গল ছাগল পালনের প্রতি গুরুত্ব দেন। এছাড়াও তাঁকে জলঢাকা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে তাঁকে লিঙ্কেজ করে দেয়া হয়। ফলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে মারুফা বেগমের একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়। যেকোন প্রয়োজনে বা উপজেলা প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন সেবা ও সুযোগে সহজে সম্পৃক্ত হতে পারছেন। তাঁদের অভিগম্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মারুফা বেগম ২০২৪ সালে ৮ টি ছাগল  ৭৩ হাজার টাকার  বিক্রি করেছেন এবং ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সে আরো ৬ টি ছাগল ৫৪ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। মারুফা বেগম গত দেড় বছরে ২০২৪-২৫ সালে মোট ১৪ টি ছাগল ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এই ছাগল বিক্রির ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মারুফা বেগম ২ টি গরু কিনেছেন। এছাড়াও তাঁর বাড়িতে এখন ১০ টি হাঁস ও ৬ টি ‍মুরগী রয়েছে। ছাগল ও হাঁস-মুরগী বিক্রি করে মারুফা বেগমের বাৎসরি আয় প্রায় ১২০০০০০-১৪০০০০০/- (এক লাখ বিশ হাজার টাকা থেকে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা) আমিনার এখন মৌসুমের সময় দিনমজুরের কাজ করে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেন এবং মারুফা বাড়িতেই ছা্গল ও হাঁস-মুরগী লালন পালন করছেন এবং সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন। এছাড়াও সংস্থা থেকে সে ৩০ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা দিয়ে একটি গরুর শেড তৈরি করেছেন।  মারুফা বেগমের স্বপ্ন ভবিষতে সে ছাগলের খামারটিকে আরো সম্প্রসারিত করবে এবং ছাগলের খামারের পাশাপাশি একটি গরুর খামার দিবেন। গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগী পালনের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে মারুফা ও আমিনার দম্পতি এগিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews