মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর কারিতাস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটে ‘শিশু শিক্ষা ও আধুনিক দাসত্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক এক অ্যাডভোকেসি সেমিনারে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে সৃষ্ট শিশুশ্রম রোধ, শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং শিশুদের ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর আধুনিক দাসত্ব থেকে উত্তরণে ১১ দফা সুপারিশ দিয়েছে কারিতাস বাংলাদেশ। সংস্থাটি মানবসম্পদে বিনিয়োগ বাড়ানো, সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করা এবং দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসনে শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কারিতাস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর গোলাম মাইনউদ্দীন সুপারিশমালা তুলে ধরে বলেন, মানবসম্পদে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় শিশুবান্ধব অগ্রাধিকার দিতে হবে ও জলবায়ু-প্রভাবিত পরিবারে সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে শর্তযুক্ত শিক্ষা সহায়তা প্রাতিষ্ঠানিক করা, জীবিকার বৈচিত্র্য ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, শিশুশ্রমবিরোধী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, স্থানীয় পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও রেফারেল ব্যবস্থা গড়ে তোলা, তথ্যসংগ্রহ ও মনিটরিংকে আরও কার্যকর করা, জনসচেতনতা বাড়ানো ও বহু-স্টেকহোল্ডার অংশীদারিত্ব, জলবায়ু সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সহজ শর্তের ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
অন্য বক্তারা বলেন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) ও নির্ধারিত অবদান (এনডিসি)-এ শিশুদের শিক্ষা, সুরক্ষা ও নিরাপদ স্কুলব্যবস্থা পরিষ্কারভাবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। জলবায়ু সহনশীল স্কুল, ডিজিটাল শিক্ষা ও দুর্যোগ-পরবর্তী শিক্ষা পুনর্বহাল ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণসাক্ষরতা অভিযান এর নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, গত বছর নোয়াখালীতে বন্যা হলো। তখন অনেক মেয়ে বলেছে, তারা পিল খেয়েছে। কারণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরিবেশ তারা পায়নি। অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে তাদের পিল খাইয়েছেন। নোয়াখালীতে গত বছরে ত্রাণের সঙ্গে হাজার হাজার পানির বোতল দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের প্রভাব কিশোর-কিশোরীদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। আর এতে শিশুদের স্কুলে যাওয়া কমে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন বলেন, লবণাক্ততা, পানি-সংকট ও জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা শ্রমে জড়িয়ে যাচ্ছে। স্কুল থেকে ঝরে যাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ দূষণ নিরক্ষর মানুষ করে না। লেখাপড়া করা মানুষ তা করে। ব্যাংক লুটও শিক্ষিত মানুষরা করে। নিরক্ষর মানুষ তো করে না। যারা কম লেখাপড়া করে তারা এগুলো করে না। অতএব আমাদের মধ্যে সচেতনতা আরও অনেক বেশি দরকার। আমাদের লেখাপড়া জানা মানুষের মধ্যেই জ্ঞানপাপীরা আছেন, যা আমরা খেয়াল করি না।
সরকারের কাছে সাহায্য না চেয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করা উচিৎ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা খালি সরকারের কাছে হাত না পেতে যারা এগুলোতে অনুদান দেন তাদের সঙ্গে লবিং করা উচিৎ। অ্যাডভোকেসি করা উচিৎ। আমাদের সরকার পরিবর্তন হয়। সরকার পরিবর্তনের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নীতি বদলায়। ইউএসএ সহায়তা তহবিল প্রত্যাহার করলো। যেটার জন্য অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের জানা মতে অনেকগুলো সংগঠনের প্রায় ২০ হাজারের ওপরে এনজিওকর্মী কাজ হারিয়েছেন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার, কারিতাস বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দাউদ জীবন দাস, সুবাশ এন্থোনি গোমেজ, মো. নাজমুল হক প্রমুখ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট