1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
জগন্নাথপুর: দুর্নীতি করায় বেতন বন্ধ থাকা অধ্যক্ষ মঈনুলের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ ইন্টারনেট দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের জরুরি নির্দেশনা মাউশির উত্তরণ পাবনা’র আয়োজনে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী পালন ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মামলায় জড়াল টেলর সুইফটের নাম শেরপুরে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ঈদুল আজহায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ২১ মে মহাখালীতে চালু হলো ‘হিট স্ট্রোক সেন্টার’, চিকিৎসা মিলবে বিনামূল্যে বেনজীরের স্ত্রীর দুবাইয়ের দুই ফ্ল্যাট জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ বাংলাদেশের বিচিত্র সব নদীর নাম

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ৩৯

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা.মোজাহিদুল হক

পর্ব- ৩৯

রিকশা ভাড়া মেটাতে গিয়ে চড়াং করে মাথা গরম হয়ে গেল । রিকশা ওয়ালাকে দিলাম একশো টাকার নোট ,ফেরত দেবে পঞ্চাশ অথচ একটা কুড়ি টাকার আর একটা দশ টাকার নোট ঠেকিয়ে কি নির্বিকার পান চিবুচ্ছে !কী অসভ্য ,কী অসভ্য ! কাঁহাতক এই অভদ্র লোক গুলোর সঙ্গে ঝগড়া করা যায় ? টাকার পরিমানটা বড় কথা নয় ,বেসিক অনেস্টি বলে কিছু থাকবে না ? এই চোট্রামির মানসিকতাই তো খারাপ । আজ অবশ্য ঝগড়া করার কোন স্পৃহাই নেই । অন্য সময় হলে ঝগড়া করতাম ।  মেজাজ খারাপ করে বাসায় গেলে অহনা খুব রাগ করে ।অহনাদের বাড়ী যাব আর এসময়টায় মেজাজের পারদ কিছুটা নিচেই রাখতে হবে । অহনাদের ওখানে দু’একজন আছে যাদের মূল গবেষনার বিষয়ই হচ্ছে আমি আর অহনা । আমি অবশ্য অত গা মাখাই না ,আসলে এ ধরনের লোকজন গায়ে মাখার মত নয় , এরা অনেকটা ক্যাপুচিনো টাইপ । জিভে তেতো লাগে ,কিন্তু স্টিমি উলোটিং । নার্ভ সতেজ রাখে । কিংবা ঠান্ডা সমোসার মত । খেলেই অম্বল । তাই ওসব লোকজন কে খেতেও নেই আবার গিলতেও নেই । সে যাই হোক অহনার বাড়ীর নিরানব্বই পার্সেন্ট ভালো মানুষদের সাথে ওই এক পার্সেন্ট নিয়ে কেন ভাবছি ?

কাজের দিনে অহনার সকালটা ছোটে পাগলা ঘোড়ার মতো । এক ঘন্টা যে কিভাবে কাটে ,অহনা ঠাহরই করতে পারেনা ।আটটার সময় অ্যালার্মের ঝনঝন ,অম্নি ধূপধাপ হুড়ুদ্দুম শুরু । ধূম করে উঠছে , ঢুকছে বাথরুমে  , ছুটছে কিচেনে । অহনা বেরিয়ে গেলে ফ্ল্যাটখানা নিমিষে নিঝুম । ঘড়ির কাঁটা যেন আর চলতেই চায় না । এই স্থবির সময়ের ,কিংবা বড় জোর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা সময়ের , আমি আর অহনা পাশাপাশি দেখি বলেই কি কেজো সকালটাকে বেশী বেগবান মনে হয় ? হয়তো বা । আচ্ছা অহনার থাকা না থাকায় যে আসমান-জমিন ফারাক ,তা কি অহনা টের পায় ? সে কি জানে আমার একেবারে শূন্য হৃদয়ের কলসি স্মৃতির বাতাসে শুধু ঢংঢং করে বাজত ।সেই কলসি এখন ছোট ছোট খুনসুটি ,মান -অভিমান , প্রেম -ভালোবাসায় টলটল । অফিস বেরনোর সময় অহনা ব্যালকনি লাগোয়া দরজাটা হালকা খুলে দিল ,ব্যস অমনি ঝুপ করে ঠান্ডা ঢুকে পড়লো ঘরে । বইছে হাড় কাঁপানো হাওয়া । সকাল সকাল ঠক ঠক কাঁপছে শহর । অহনা যাবার পর উঠে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম ।ছায়া ছায়া অন্ধকার কেটে একটু একটু করে আলো ফুটছে ।সামনের আকাশ এতক্ষণ বর্ণহীন ছিল ,এখন হালকা গোলাপী । গতিময় শহরটা জাগছে ,জেগে উঠছে ।

দুপুরটা নিস্তরঙ্গ কেটে গেল । খেয়ে শুয়ে ,গড়িয়ে গড়িয়ে । মাথার ওপর রোদ ঝলমলে আকাশ ,বাতাস বইছে শনশন … একবার মনে হলো ,আহ , বেঁচে থাকাটা কী সুখের ! আকাশ পাতাল ভাবনা ঘুরছে মনে । ভাবনা ,না সংশয় ? অহনা কি আমার সে প্রেম ,যে প্রেমের সন্ধানে কেটেছে আমার জীবন  , কিংবা বুকের শূন্যতা ভরানোর এক মুঠো কুড়িয়ে পাওয়া সুখ ? বাঁচার জন্য আঁকড়ে ধরা খড়কুটো । দমকা বাতাস উড়ে এল একটা ।ঠান্ডা বাতাস ,হাড় কেঁপে গেল । আসলে আমার জীবন এখন আবর্তিত হচ্ছে অহনার চাওয়া পাওয়ার বলয়ে । ক’দিন ধরে জোর ঠান্ডা পড়ছে ঢাকায় । আজ ভালো করে শ্যাম্পু না করলেই নয় । শীতকালে এম্নিতেই বড় খরখরে হয়ে যায় চুল ।কাল পত্রিকায় এসেছে ঢাকায় দিনে উনচল্লিশটা ডিভোর্স হয় । সংসার ভাঙে । হায়রে , লোকে শুধু ভাঙাটাই দেখে ।পিছনের প্ররোচনাটা বোঝে কে ? এক ছাদের নীচে এক বিছানার ভাগীদারই শুধু টের পায় অন্যজন কি চিজ ! বাইরের দুনিয়ায় প্রক্ষেপিত ভাবমূর্তি দেখে কেউ আন্দাজই করতে পারেনা একএকজন কি মাল । একটা আদ্যন্ত বেমানান জুটি হাটের মাঝে পাঁক ছোঁড়াছুঁড়ি না করে পৃথক হলে মন্দ কি ? তবে বেশীর ভাগই পাঁক ছোঁড়াছুঁড়ি হয় ,আদালতে গড়ায় ।কিন্তু সম্পর্ক তাতে টেকে কি ? বিকেল ফুরিয়ে যাচ্ছে । বড় বড় অট্রালিকার আড়ালে একটু একটু করে মুখ লুকাচ্ছে সূর্য । গাছ-গাছালী রং হারাচ্ছে । অহনার ফেরার সময় হয়েছে ।

শীত আসার পর ইদানিং নতুন নিয়ম হয়েছে অহনার ,অফিস থেকে ফিরে নিজ হাতে আমার জন্য কফি করবে আমি চেম্বারের জন্য বেরিয়ে যাবার পর ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে নিজেকে সোপর্দ করে রাখবে । আমি ফেরা অব্দি নট নড়ন চড়ন । দু’বছর ধরেই দেখছি একই নিয়মে আমি চেম্বার থেকে ফেরার পর ফোন করেন অহনার বাবা । কথা বলেন কন্যার সাথে । অদ্ভুদ এক বন্ধুর মতো সম্পর্ক বাবা মেয়ের । বয়স হয়েছে সাতান্ন মতো কিন্তু টগবগ করেন সারাক্ষণ । এত জোরে হাঁটেন ,অল্প বয়সিরাও পাল্লা দিতে হাঁফিয়ে যায় । মুখে চোখে বয়সের ছাপ ও নেই তেমন । স্বচ্ছন্দে বয়স চল্লিশ বিয়াল্লিশ বলে চালিয়ে দেয়া যায় । আমার সাথেও বন্ধু সূলভ । আমি আড় পেতে বুঝতে চেষ্টা করি বাবা মেয়ের কথোপকথন । সাধারন সব কথাবার্তা ,সাংসারিক টুকিটাকি ,অভিযোগ আর অহনার মায়ের কথা বার্তা । আর আমরা অহনাদের গ্রামের বাড়ী যাব শুনলেই অস্থির হয়ে যান অহনার আম্মা । কি খাবে মেয়ের জামাই ,সব জোগাড়ে তোড়জোড় লাগিয়ে দেন । মমতার খনি বলা যায় অহনার মা কে । ছোট্র একটা শরীরে এত মায়া ,মমতা কোথায় যে লুকিয়ে রাখেন ,সেটাই একটা বিস্ময় । শ্বশুর-শ্বাশুড়ী দু’জনকেই আমার মারাত্মক রকমের পছন্দ । আমি যেখানেই যাই চারপাশটা একটু অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি । ভালো মন্দ মিশিয়েই তো মানুষের ভাললাগা । ভাল না লাগাটা এক ধরনের অসুখ । আমাকে এখনো ওই অসুখে ধরেনি ।

আর এক জোড়া মানুষ আছে যারা আমি যাব শুনলেই অস্থির হয়ে যান । অহনার বোন লিজা আপা আর তার বর জীবন ভাই । জীবন ভাই লিজা আপার শরীরের পঁচাশি ভাগ মায়া মমতা আর পনের ভাগ ভালবাসা দিয়ে ভরা । দুজন মানুষ একই রকম । একই  রকম বলেই হয়তো কি অপরিসীম ভালোবাসায় মাতিয়ে রেখেছেন নিজেদের সংসার । শুনেছি এবার ইতি আপা ও থাকবে , হ্যা ইতি আপা অহনার আরেক বোন যে পাশে বসলেই আমি একটা মা মা গন্ধ পাই । ছোট বেলায় আম্মার গায়ে যে গন্ধটা পেতাম তেমন মা মা গন্ধ । লোক ব্যক্তি ব্যক্তিতে তফাত খোঁজে ।তফাত আছে কি নেই সেটা বড় ব্যাপার নয় , আসল ব্যাপার হলো ,যে দেখছে তার মনটা । যেমন জীবনে একটা সময় সামান্য পার্থক্য ও খুব প্রকট লাগে । আবার এমনও সময় আসে ,যখন ডিফারেন্স গুলো খোঁজার দৃষ্টিটাই চলে যায় । তখন ভাল মন্দ সুন্দর কুৎসিত সব কিছুই মনে হয় এক রকম । জীবনের রংগুলো ও তখন আলাদা করা যায়না । এভরিথিং বিকামস গ্রে । ধূসর ।

ল আব্বু আর আম্মু ও আসবে এবার ।সাথে সেতু গিন্নী এলে ভালোই হবে । ওর একটা প্রপার কাউন্সেলিং দরকার । কী কষ্টটাই না সয়েছে মেয়েটা ? যতটা না শরীরে তার চেয়ে ঢের ঢের বেশী মনে । মেয়েরা কত আশা নিয়ে ঘর বাঁধে , স্বপ্ন ভঙ্গের অভিঘাত অন্তরাত্মাকে যে কীভাবে চুর চুর করে দেয় এটা সেতুর চেয়ে বেশী কেউই অনুভব করতে পারবে না । একটা মেয়ের জীবনে বিয়ের চেয় বড় বেশী জরুরী হলো নিজের পায়ে দাঁড়ানো । দিনশেষে মেয়েদের নিজের ঘর কোথায় ? নিজের একটা আইডেন্টিটি তৈরী না করতে পারলে সারাজীবনই তো তাকে আত্মপরিচয়ের সন্ধানে ছোটাছুটি করতে হয় । অমুকের বউ তমুকের মায়ের পরিচয়ে বাঁচার চেয়ে ঢের ভালো নিজের পরিচয় । নিজের স্বতন্ত্র আত্মপরিচিতি ।

মেজো আম্মু ,মেজো আব্বু , শান্তা ভাবী ,রুবেল ভাই কতটা ভালোবাসার ঝাঁপি খুলে অপেক্ষা করছেন তা আমার চেয়ে বেশী আর কে জানে । আহ মেজো আম্মুর হাতের পায়েস আমার চেয়ে বেশী কে মিস করে ?

আর একজন আছে আমার ছোট গিন্নি কুসুম ।বেচারী বোধহয় ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ কেটে কেটে অস্থির । যে কয়দিন থাকব সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থাকবে আর চলে আসার সময় কেঁদে কেটে একসার করবে । কুসুমের এক একটা মুহুর্ত এখন এক একটা দিন ।প্রতিটি মিনিট বছরের চেয়ে দীর্ঘ । ওকে এবার সাথে করে নিয়ে আসব ভাবছি । জীবনকে উপভোগ করার আগেই মেয়ে গুলোর জীবন কেন যে দূর্বিসহ হয়ে যায় ? আর আমার শ্যালক গুলো সব এক একটা হারামীর হাত বাকসো । জীবন গোছানোর আগেই সব বিয়ে করে বসে আছে । সব ভাবের চরকিতে লাট খাচ্ছে ।ওরা ভাবছে জীবন ব্লাডমেরির গ্লাসের বুদবুদের মতন । আহাম্মক সব ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews