1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০৩:০৫ অপরাহ্ন

হারাম কিভাবে হালাল হয়ে গেল?

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
যদি বৃটিশ আমলে মোল্লারা ফতোয়া দিতো, সুশিক্ষা গ্রহণ না-করা হারাম! পাকিস্তান আমলে ফতোয়া দিতো মেয়েদের লেখাপড়া না-শেখানো হারাম আর গত শতাব্দির শেষ দিকে ফতোয়া দিতো মেয়েদের স্বাবলম্বী না-হওয়া হারাম! তাহলে আজ মুসলিমরা হতো শ্রেষ্ঠ একটি জাতি৷ অন্য ধর্মের মানুষ- তাদেরই প্রাতঃস্মরণীয় হিসেবে বরণ করে যারা স্বজাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছ৷ বিপরীতে মুসলিমদের মধ্যে যারাই আলোকিত হওয়ার কথা বলেছে তারাই নাস্তিক-মুরতাদ আখ্যা পেয়ে হত্যার শিকার হয়েছে৷ রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নন্দিত বিপরীতে আহমদ শরীফ ও হুমায়ুন আজাদ নিন্দিত! মধ্যযুগের প্রত্যেক মুসলিম দার্শনিকই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন৷
এক সময়ে মাইক বাজানো হারাম ছিল৷ বিয়ে বাড়ির আনন্দের উপলক্ষ্য হতো মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করেই৷ আমরা ছোটরা রেকর্ডের উপর নিখুঁতভাবে পিন বসানো ও দম দেয়ার সুযোগ পেলে খুশি হতাম৷ এক বিয়ে বাড়িতে হঠাৎই দেখলাম কনের পিতা মাইক বন্ধ করে নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন৷ দাওয়াতি হুজুর ঘোষণা দিয়েছেন, শয়তানের গলা বন্ধ না করলে বিয়ে বাড়িতে আসবেন না৷ মাইক নামিয়ে ফেরত পাঠানোর পরেই তারা আসলেন৷ আরেকটি ঘটনা মনে পড়ে৷ পাশের উপজেলা থেকে বরযাত্রী এসে দেখলেন কনের বাড়িতে মাইক বাজছে৷ তারা তাৎক্ষণিক বিয়ে ভেঙ্গে দিলেন৷ কিন্তু তারা বউ না নিয়ে যাবেন না৷ তারা আরেক পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করিয়ে নিয়ে গেলেন৷ আর আজ! কথিত শয়তানের গলা ছাড়া আজান দেয়া ও ওয়াজ করা চলে না— যখন সভ্য সমাজ থেকে শব্দ-দূষণের জন্য মাইক উঠে গিয়েছে৷
একবার বিশ্বকাপ চলার সময় ওয়াজ করতে এলেন মাদারীপুরের পীর দেলোয়ার হোসেন আনসারি সাহেব৷ খেলা দেখা বন্ধ৷ ওয়াজ শেষ হলে টিভি ছাড়া হল৷ এর মধ্যেই নাউজুবিল্লাহ বলতে বলতে কয়েকজন এসে জানালেন- উঠানে প্রবেশের আগেই হারাম শয়তানের বাক্স-টিভির শব্দ পেয়ে হুজুর খেতে না এসেই মসজিদে চলে গেছেন৷ আমরা টিভি বন্ধ করে পাটি ও বিছানার চাদর দিয়ে ঢাকলাম৷ এর পরেও ওনি আসলেন না৷ পরে খাবার দিয়ে আসতে হল, ওনি মসজিদেই রাত থাকলেন৷ আজ টিভি ও ইউটিউব ছাড়া তাদের ওয়াজ চলেই না৷
আরো কত রকমের হারাম ছিল— মেয়েদের লেখাপড়া হারাম, একা বাইরে যাওয়া হারাম, খেলাধুলা হারাম৷ একবার আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অসীমের সাথে বাজারের মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ মুয়াজ্জিন সাহেব ডাক দিয়ে কাছে নিয়ে বললেন, তুই যে একটা মালাউনের সাথে ঘুরিস আখেরাতে কি জবাব দিবি? আমি বললাম, ও খুবই ভাল ছেলে, ভাল ছাত্র৷ ওর চেয়ে ভাল ছেলে এলাকায় কেউ নেই৷ তিনি বললেন, হোক তবুও মালাউনের সাথে চলা হারাম৷ আমি খুবই লজ্জা পেলাম৷ অসীম আমাকে বলল, তুই মন খারাপ করিস না, এসব শুনে আমরা অভ্যস্ত৷ কিছুদিন পরে ইদ একদিন পিছিয়ে গেলে বাজারের হিন্দু দরজি মানত করা টাকা আমার সামনেই মসজিদে দিয়ে আসলেন৷ কারো আপত্তি হল না৷ টাকা কথা বললে হারাম তখন হালাল হয়ে যায়৷
আমাদের এলাকায় মাদক ও জুয়ার কারণে বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে৷ গলাকাটা সুদের ব্যবসা করছে কজন! একজন মাদক ব্যবসায়ী নাকি তাবলীগের দল আসলেই খাবার দেয়৷ ঃমসজিদ ও ধর্ম-কর্মে দান করে৷ প্রশ্ন তুললেই বলে তারতো হালাল ওয়াও থাকতে পারে৷ তারা নাকি সেই হালালটুকু নেয়৷ হাজারো অনৈসলামিক কাজ দেখছি৷ কেউ কিছু বলে না৷ মাদক জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ ও RAB কিছু পদক্ষেপ নেয়৷ সামাজিক প্রতিরোধ নেই৷ কিছু লোক একে ওকে নাস্তিক ঘোষণা দিয়ে কতলের হুমকি দেয় আর ভাস্কর্য বিরোধী মনোভাব তৈরিতে কথা বলে৷ আমি দেখি এ লোকগুলো অধিকাংশই অল্পশিক্ষিত মানুষ৷ এরাই ইসলামকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্ম থেকে বাঁচে৷ কিন্তু ক্ষতিটাতো করছে মুসলমানদেরই৷ আজ আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মানবতাবিরোধী ফতোয়াবাজির কারণেই৷ মুসলিমদের এগিয়ে নিতে হলে মূর্খমোল্লাতন্ত্রের দেয়া এসব শৃঙ্খল ভাঙতেই হবে৷
ওয়াজে চিল্লাইয়া বলা হাজারো হারাম মুসলিমদের কল্যাণ বয়ে আনেনি—
১) খেলাধুলা করা হারাম,
২) বিয়ে ছাড়া নারী পুরুষের কথা বলা হারাম,
৩) নারীদের চাকরি করা হারাম,
৪) নারীদের একা বাইরে যাওয়া হারাম,
৫) গান-বাজনা হারাম,
৬) পুরুষ চিকিৎকের কাছে নারীর চিকিৎসা নেয়া হারাম,
৭) অন্ধবিশ্বাস না-করা হারাম,
৮) নারীর বেপর্দা হারাম,
৯) নারীদের উচ্চ শিক্ষা হারাম,
১০) সুদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা হারাম,
১১) ছবি তোলা, আঁকা ও ভাষ্কর্য হারাম …
পৃথিবীর মানুষ বসে থাকেনি পশ্চাৎপদতা নিয়ে৷ আমাদের পেছনে ফেলে তারা সভ্য মানুষ হয়ে উঠেছে৷ আমরা আধুনিক ও সভ্য আইন ও বিধিবিধানকে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি৷ আমরা মানবিক হওয়ার বদলে মগজে ধারণ করছি ঘৃণা৷ আমরা সামাজিক হওয়ার বদলে হচ্ছি সাম্প্রদায়িক৷ মানবিক হওয়াকে বলছি হারাম, সামাজিক হওয়াকে বলছি হারাম, মানুষ হওয়াকে বলছি হারাম!!! আবার সুবিধা হলেই হারামকে হালাল বানিয়ে নিচ্ছি৷

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews