সেন্টমার্টিন ভ্রমন
সালমা শবনম
দ্বিতীয় দিন-১
টেকনাফ যখন পৌঁছালাম তখন ঘড়িতে সাড়ে সাতটা। বহুআগে যখন টেকনাফে এসেছিলাম, তারসাথে এই টেকনাফকে মেলাতে পারছিলাম না কিছুতেই। পরে আরিফের কাছে শুনলাম, আমরা টেকনাফ শহরের ভেতরে ঢুকিনি। শহরে ঢুকবার অনেক আগেই জাহাজ জেটি। ফলে ঢাকা থেকে যে বাসগুলো যায় তারা জেটির কাছাকাছিই নামিয়ে দেয়।
ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে বাস থেকে নামতেই শুরু হলো নাস্তার হোটেলগুলো থেকে হাঁক-ডাক। যে যার মতো চেঁচিয়ে তাদের হোটেলের গুণকীর্তন করতে লাগল। আমরা আমাদের মতো একটা নাস্তার হোটেল দেখে ঢুকে পড়লাম। এখানে বলে রাখা ভালো এই জেটির কাছে হোটেলগুলো (আমাদের চোখে যতগুলো পড়েছে) সবই মাঝারিমানের। খুব উচ্চ আশা পোষণ করে গেলে হতাশ হয়ে যেতে হবে। হোটেলগুলোর বসবার এবং টয়লেটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। (এইসব জায়গায় এসে মনেহয় ট্যুরিজমের কত জায়গায় আমাদের কাজ করবার আছে! সদিচ্ছা থাকলেই কতকিছু পরিবর্তন হতে পারে! সরকার চাইলেই এই খাত থেকে আয় করতে পারে অনেক…. থাক এসব) সেই শোচনীয় জায়গা থেকেই কোনরকম ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সারতে বসলাম। মাত্র তাওয়া থেকে নামানো গরম পরোটা, ডিমের ওমলেট, তারপর এককাপ ধোঁয়া ওঠা চা। সকালটা দারুণ হয়ে গেলো।
নাস্তা শেষ হতেই আমি-বর্ষা ওদের তাড়া দিতে থাকলাম… জেটির দিকে রওনা করার জন্যে। কারণ আমরা অভিজ্ঞদের কাছে থেকে শুনেছিলাম যে আগেভাগে লাইনে দাঁড়াতে হয়। আরিফ-রনি যদিও একটু গাই-গুঁই করছিলো। কিন্তু আমাদের তাড়া খেয়ে ওদের অগত্যা রওনা করতেই হলো। আমরা জেটিতে গিয়ে বসতে না বসতেই, সামনে টেবিলে বসা এক লোক (যিনি টিকেট বিক্রি করছিলেন) বললেন যাদের টিকেট কাটা আছে তারা জাহাজে গিয়ে বসেন। আমাদের যেহেতু অনলাইনে আগেই টিকেট কাটা ছিলো, সেহেতু আমরা ওখানে আর সময় নষ্ট না করে জাহাজের দিকে এগোলাম।(এইখানে বলে রাখা ভালো নাস্তার হোটেলগুলো থেকে জেটি পর্যন্ত হাঁটাপথ। ফলে এবার আমরা ধীরে ধীরে ছোট লাগেজের মাহাত্ম বুঝতে শুরু করলাম)।
অল্পকিছু পথ এগিয়েই নাফ নদী। এবারের দৃশ্যপট হঠাৎ করেই দৃষ্টিনন্দন হতে শুরু করলো। বাঁশের মাচান বিছিয়ে পথ তৈরি করা হয়েছে জেটি পর্যন্ত। দুপাশে মাচান ঘিরে বাঁশের কঞ্চি কেটেই নিরাপদ করা হয়েছে হাঁটা পথটুকু। সামনে নাফ নদীর ঈষৎ নীল পানিতে দুটো জমজ জাহাজ (এগুলোকে বরং লঞ্চ বলা ভালো) গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়ানো… দূরে পাহাড়ের আবছায়া শরীর। সকালের চকচকে সূর্য…. সবমিলিয়ে সারারাতের প্রায় না ঘুমানো জার্নির ধকল ফুড়ুৎ হয়ে গেলো…. আমরা সকলেই চনমনে হয়ে উঠলাম। (চলবে)