বাংগালী এক আজব জাতি । এদের অনুভুতি যে কখন জাগ্রত হয় আর কখন ন্যাতাইয়া পড়ে তা বুঝে ওঠা মুশকিল । এই যে রমজান আসলো , কালকে সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যাবার সাথে সাথেই ফলের দাম বেড়ে গেল কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকা । বেগুন , লেবু সব কিছুর দামই প্রায় দ্বিগুন । কিন্তু নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশের বাংগালিদের অনুভুতি আর খাড়ায় না । এদের অনুভুতি খাড়ায় ধর্মীয় উস্কানির নামে নিরীহ মানুষের বাড়ীতে আগুন দেয়ার সময় । মনে করেছিলাম তেলের দাম যেহেতু বাড়তি সেহেতু পেঁয়াজু বেগুনি ছোলা না খেয়ে ফল মুল দই চিড়া খাব কিন্তু রোজা আসলেই দাম বাড়াইতে হবে এই অনুভুতির কারনে এখন সে সব ও আর খেতে পারবনা মনে হয় । জুস খাওয়ার বিলাসিতা করতে পারব না ভাবলাম লেবুর শরবত খাব , ওমা লেবুর বাজারে রীতিমত আগুন বিশ টাকা ত্রিশ টাকা হালির লেবু আশি টাকা । চিনি গোলা পানি খাব , চিনির দাম নাগালের বাইরে । আরবের খেজুর তো আমার মতো মধ্যবিত্তের জন্য চাঁদ ছোঁয়ার মতো ।
এক জায়গায় দেখলাম আরবে রোজা উপলক্ষ্যে সব জিনিসের দাম কমেছে । কিন্তু অকারনে অনুভুতি জাগ্রত হওয়া বাংগালি মুসলমান জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে । হায়রে বাংগালি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভুতি !
এদেশের বাংগালি মুসলমানরা সব কিছুতেই আরবের সংস্কৃতি অনুসরন অনুকরন করতে চায় কিন্তু রোজা আসলে দাম কমাতে হবে কিংবা দাম বাড়ানো যাবে না তা অনুসরন করবে না । কারণ এরা সব আরবের আদলে চাইলেও দুনম্বরিটা বাংগালি স্টাইলেই করতে চায় । দুনম্বরি করলে এদের ধর্ম কিংবা ধর্মীয় অনুভুতি কোনটাই নষ্ট হয়না । এদের অনুভুতি গুলো সব সময় আ জায়গা কু জায়গায় খাড়ায় । রোজা আসলে খাবার দোকানে পর্দা টেনে দিতে হবে , মসজিদে মসজিদে মৌসুমি নামাজিদের চাপে ভিড় উপচে পড়বে কিন্তু অফিসে আদালতে ঘুষ খাওয়ার ধুম পড়ে যাবে । ঘুষের টাকায় বউকে দামী শাড়ী , ছেলে মেয়েদের আট দশ জোড়া জামা জুতো দিতে এদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগে না , আঘাত লাগে কোন অমুসলিম উন্মুক্ত স্থানে কিছু খেলে । দেখবেন তরতর করে এদের অনুভুতি তখন জাগ্রত হয়ে গেছে ।
পাশের বাসার মানুষটা খেতে পারছে কি পারছেনা তা ধর্মীয় অনুভুতি সম্পন্ন বাংগালি মুসলমানের অনুভুতির বিষয় নয় কিন্তু নিজে যত খেতে পারবে না তার চেয়েও বেশী খাবার ডাইনিংয়ে সাজিয়ে খাবার আয়োজন করবে । কত দামি খাবার দিয়ে সেহেরী কিংবা ইফতার করলো সেটা এখন অনুভুতি ওয়ালা মুসলমানের আলোচনার বিষয় । চকবাজারের ইফতারি নাকি শেরাটনের ইফতারি সেটা নিয়ে স্ট্যাটাস দিবে কিন্তু প্রতিবেশী খাবারে কষ্ট করলে ও তার খোঁজ কেউ নিবেনা । দুঃখী গরীব মেহনতি মানুষের কষ্টে এদের অনুভুতি কস্মিন কালেও জাগ্রত হবে না । রমজান যদিও কৃচ্ছতা সাধনের মাস কিন্তু বাংগালি মুসলমানের অভিধানে আগামী এক মাস কৃচ্ছতা বলে কোন শব্দই থাকবে না । ঈদে বাড়ী যাবার টিকেটের দাম তিনগুন চারগুন বেশী গুনবে তবু এদের অনুভুতি জাগবে না । ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অর্থনীতি সচল রাখা শ্রমিক তার মজুরী পাবেনা তবু অনুভুতি সম্পন্ন মুসলমান কোন কথা বলবে না । রোজা আসলে ইবলিশ শয়তান কে নাকি বেঁধে রাখা হয় কিন্তু এদেশে এই এক মাস সমস্ত শয়তানি বেড়ে যাবে । এদেশের শয়তান গুলোরে বেঁধে রাখা যায় না । এ এক আজব দেশ মাইরি! আজব এ দেশের ধর্মীয় অনুভুতির মুসলমান ।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে ৮০০ পণ্যে মূল্য ছাড়, আমিরাতে নিত্য পণ্যে ৭০% ছাড়। সৌদি আরবে ৫০-৭০% ছাড় কিন্তু বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। এখানে রমজান মাসে সব পণ্যের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে!