1. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  2. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  3. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

অরুন স্যার একজনই হয়

সোহেল আহমেদ খান
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪
অরুন বিকাশ গোস্বামী

১৯৯১ সাল ৯০ এ স্বৈরাচার বিরোধী গণ আন্দোলনের পরপরই আমার এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সরকারি নাজির আখতার কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই অরুন স্যারকে চিনতাম। ১৯৮৩ সালে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘরের কার্যক্রম শুরু থেকেই খেলাঘর আন্দোলনে জড়িয়ে পরি। ১৯৮৪-৮৫ এর দিকে সোনাতলা থিয়েটারে কার্যক্রম শুরু হয়। এই থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অরুন স্যার ছিলেন অন্যতম। সে সময় সোনাতলা থিয়েটারের নাটক ফাঁস, বাসন, ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল মঞ্চস্থ হয়েছে। এসব নাটকের অভিনয়ে অরুন স্যার ছিলেন। সে সময় অরুন স্যারের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছে নান্টামোদি দর্শকরা। সোনাতলা গার্লস স্কুলে মঞ্চস্থ ফাঁস নাটকের অভিনয়ে অরুন স্যারকে দেখি প্রথম। এরপর খেলাঘরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, থিয়েটারের অনুষ্ঠানে অরুন স্যারের সাথে দেখা হতে থাকে মাঝে মধ্যেই। ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে খেলাঘর এবং থিয়েটারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় আমি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। যে কারণে নাটক বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আর সময় দেয়া হয়ে ওঠেনি। ১৯৯১ সালে রাজনীতি থেকে আবার নাটকের দিকে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। সে সময় এমদাদুল হক বাদশা ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় আমিসহ মামুন, রিজু, বায়রন, মিঠু, অ্যাপোলো, আজাহার, স্বপন, বিপ্লবসহ আরো অনেকে নাট্য সংগঠন করার আগ্রহী হই। এ নিয়ে অরুন স্যার, বকুল স্যার, বিমল স্যার, শান্তু আঙ্কেলদের নিয়ে আলোচনা সভায় বসি আমরা। সভায় সোনাতলা থিয়েটারের কার্যক্রম পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা করা হলেও বেশ কিছু জটিলতার বিষয় সামনে এলে অরুন স্যার প্রস্তাব করেন নতুন একটি সংগঠন করার। সেমতে সোনাতলা নাট্যগোষ্ঠীর যাত্রা শুরু হল সোনাতলায়। আনন্দ সিনেমা হলে মানিক ভাইয়ের অফিসে রিহার্সেল শুরু হলো। নাটকের নাম ছিল দোহায় হাসবেন না।

প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত রিহার্সেল হতো। এই রিহার্সেলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অরুন স্যার। অরুন স্যার একদম সময়মত রিহার্সেলে আসতেন। কোনদিন না এলে আগেই জানিয়ে দিতেন তোমরা চালিয়ে নিও আমি আসতে পারবো না। নিয়মানুবর্তিতা-শৃঙ্খলা সবটাই শিখেছি অরুন স্যারের নিকট থেকে। এলোমেলো একটা বিষয়কে কত সহজে গোছানো যায় তাও শিখেছি অরুন স্যারের নিকট। সোনাতলা নাট্যগোষ্ঠী পরবর্তীতে গ্রাম থিয়েটারে অন্তর্ভূক্ত হলে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সংলাপ থিয়েটার। এই নামটিও অরুন স্যারের দেয়া নাম। সংলাপ থিয়েটারের সভাপতি ছিলেন অরুন স্যার।

নাটক করার কারণে অরুন স্যারের সাথে আমার সম্পর্কটা অন্য সবার চেয়ে বোধকরি ভালো ছিল। আমি আজিজুলল হক কলেজে ভর্তি হলে বগুড়া থিয়েটারের সাথে জড়িত হয়ে নাট্য চর্চা চালিয়ে যেতে থাকি। অন্য অনেকে তখন নাটক থেকে দুরে চলে যেতে শুরু করেছে। স্যার যখন সোনাতলা থেকে ফেনীতে বদলি হয়ে যান, তখন সংলাপ থিয়েটারের পদ থেকে সরে যেতে চাইলেও আমরা অরুন স্যারের স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে বকুল স্যারকে মনোনীত করি। আমার জানা মতে সংলাপ থিয়েটারের সেই কমিটি এখনো বহাল রয়েছে।

যা বলতে চাইছিলাম তাহলো আমার নিয়মিত নাট্য চর্চার খবর স্যার রাখতেন। আমি যখন টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শুরু করি। স্যার আমাকে ভিষণভাবে উৎসাহ দিয়েছেন।

অবসর জীবনে স্যার ইচ্ছে করলে সোনাতলা ছেড়ে বগুড়া অথবা ঢাকায় বাড়ি করে থাকতে পারতেন। কিন্তু এলাকার প্রতি তার অকৃত্রিম টানের কারনে সোনাতলাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। নিজের গ্রামের মানুষের প্রতি কিছুটা দায়িত্ব নিজেই নিয়ে নেন। গ্রামের মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য আড়িয়ার ঘাটে একটি ফার্মেসি দিয়ে তিনি প্রতিদিন বিকেল বেলা সেখানে বসতেন। অসুধ বিক্রি করে লাভ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। এলাকার মানুষের সাথে প্রতিদিন যোগাযোগ ছিল মূল উদ্দেশ্য।

সোনাতলার অনেক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্যার নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে সেসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন।। নীতি নৈতিকতার প্রশ্নে এমন এক প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ থেকে তিনি নিরবে পদত্যাগ করেছেন।

সর্বশেষ অরুন স্যার নিজ সহদোর অরুপ কুমার গোস্বামীকে সাথে নিয়ে নিজের এলাকায় একটি গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন। হরিখালী বিজয়-কিশোর বালিকা বিদ্যালয় নামে এই স্কুলে স্যার তাদের নিজেদের সম্পত্তি দান করে গেছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলো স্কুলের পরিপূর্ণ কার্যক্রম স্যার দেখে যেতে পারলেন না। আমি আশা করবো স্যারকে যারা মনে প্রাণে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসেন এই স্কুল প্রতিষ্ঠায় তারা এগিয়ে আসবেন। এই স্কুল প্রতিষ্ঠা পেলেই স্যার এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ।

খুবই সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত অরুন স্যার একজনই হয়। খুব সাদাসিধে জীবন যাপন করে মানুষের মনের মনিকুঠায় স্থান করে নেয়া একজন অরুন স্যার সোনাতলায় আর কবে আসবেন, সে অপেক্ষায় থাকতে হবে সোনাতলা বাসিকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews