1. fauzursabit135@gmail.com : S Sabit : S Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

এই তীব্র দাবদাহে তিনি জন্মেছিলেন!

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
আমাদের সাথে হুমায়ুন আজাদের সম্পর্ক হয় ১৯৯৩ সালে তাঁর ও আমাদের শিক্ষক লেখক নূর-উল হুসেন স্যারকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে৷ হুসেন স্যারই বলেন, ‘পারলে আমার ছাত্র হুমায়ুন আজাদকে প্রধান অতিথি করো৷’ আমি ও সাইফুল গেলাম স্যারের ফোলার রোডের বাসভবনে৷ স্যার রাজি হলেন৷ শুক্রবারের অনুষ্ঠানে এক সুদীর্ঘ অসাধারণ বক্তব্য রাখলেন৷ আমরা বিমোহিত হলাম৷ এতে তাঁর জীবনও বদলে যায়৷ তিনি নিয়মিত গ্রামে আসতে থাকেন আর আমাদের দার্শনিক হয়ে উঠেন৷ আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতাম, মূলত শোনতাম৷ এরপরই তিনি কবিতা ও উপন্যাস লেখায় মনযোগী হন৷ আমাদের ছোট বড় সব অনুষ্ঠানেই আসতে থাকেন৷
২০০৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতেও আমাদের গ্রাম ভাগ্যকুলে আসেন৷ ওয়াপদা গেষ্ট হাউজে রাত্রি যাপন করেন৷ তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস ‘পাক সার জমিন সাদবাদ’ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়৷ আমরা চেয়েছিলাম কলেবর আরো বড় হবে৷ তাকে সাবধানে থাকতে বললে তিনি বলেন, ‘আমাকে ওরা কিছু করবে না৷ তোমরাই সাবধানে থেকো৷ বইটি নিষিদ্ধ হতে পারে৷ যারা পড়নি পড়ে নিও৷’ অথচ তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি আক্রান্ত হলেন৷ চিকিৎসার পরে তিনি ফিরে এলে প্রথমে ভাগ্যকুলে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়া হয়৷ সংবর্ধনা শেষে জানতে চাইলাম, স্যার ডাব খাবেন? স্যার রাজি হলে কিনে আনি৷ এ ছবিটি কেউ তুলে দিয়েছিলেন৷ ওইদিন বিকেলে রাঢ়ীখালে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়া হয়৷ এরপর তিনি চলে যান জার্মানীতে গবেষণা কাজে৷ সেখানে তাঁর শয়ন কক্ষে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷
তিনি মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুরের ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামে নানা বাড়িতে ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ জন্মগ্রহণ করেন। তখন প্রথম দুএক সন্তান নানা বাড়িতে জন্ম নেয়াটাই রীতি ছিল। তাঁর পৈতৃক বাড়ি পাশ্ববর্তী রাঢ়ীখাল গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আব্দুর রাশেদ, মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। হুমায়ুন আজাদ পিতা-মাতার দ্বিতীয় সন্তান ও প্রথম পুত্র। পিতার দ্বিতীয় পুত্র আবুল কালাম আজাদ মারা গিয়েছিল। তাঁর ভাইর আজাদ নামটি ধারণ করেই হুমায়ুন কবীর থেকে হুমায়ুন আজাদ হয়েছিলেন। কারণ ছিল— তখন হুমায়ুন কবীর নামে আরো দুজন লেখক ছিলেন। আত্মবিশ্বাসী হুমায়ুন আজাদ নাম বদলে নিয়েছিলেন।
স্যারের নারী বইটি নিষিদ্ধ হলে আমি যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রতিবাদ করে চিঠি লিখি৷ প্রকাশিত চিঠিটি দেখে তিনি আমাকে ধন্যবাদ জানান এবং টিএসসির প্রতিবাদ সভায় আমাদের আমন্ত্রণ জানান৷ আমি ও সাইফুল প্রতিবাদ সভায় ছিলাম৷ সেখানে দেশবরেণ্য লেখকগণ ছিলেন৷ আমাদের ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজে স্যার একটি পাঠাগার উদ্বোধন করেছিলেন৷ কদিন পরেই কতিপয় মাদকসেবি দুর্বৃত্ত একজন শিক্ষকের প্ররোচনায় উদ্বোধনী ফলকটি ভেঙ্গে ফেলে৷ স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেও ফলকটি আর স্থাপন করা যায়নি৷ হুমায়ুন আজাদ স্যার অনেকগুলো বই নিয়ে এসেছিলেন৷ আর ছিল আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহের অনেকগুলো বই৷ ফলকের মতোই পাঠাগারটির বইও বিলীন হয়ে যায়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্যার মত প্রকাশের বিষয় নিয়ে অসাধারণ বক্তব্য রাখেন৷ বেশ কয়েকজন মৌলবাদি লোক উপস্থিত ছিল৷ স্যার বলেছিলেন, ‘আমি কাউকে বেহেস্তে যেতে বাঁধা দিচ্ছি না৷ আমারতো অধিকার রয়েছে ওখানে না যেতে চাওয়ার৷’ বক্তব্য শেষে মৌলবাদিরা স্যারকে বলেন, ‘স্যার আপনার কোন বই পড়িনি কিন্তু আজ আপনার কথা শুনে আপনার সম্পর্কে আমাদের ভুল ভেঙ্গছে৷ আপনি জ্ঞানী মানুষ৷ আপনি যুক্তিসংগত কথাই বলেছেন৷’
স্যারকে শেষবার যখন রাঢ়ীখালে সংবর্ধনা দেয়া হয়৷ সেখানে আমি বক্তব্যও রাখি৷ স্যার তাঁর বক্তব্যে প্রথা ভাঙার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার সীমা ছিল রাঢ়ীখাল৷ সেই সীমা ভেঙ্গেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েছি৷ আমাদের তরুণরা সীমা অতিক্রম করেই জাপান, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে যায়৷ অনেকে বলেন সীমা লংঘন করো না৷ সীমা অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে৷’
তিনি বলতেন, ‘মধ্য বৈশাখে আড়িয়াল বিল থেকে যখন সোনার ধান আসতো উঠান জুড়ে তখন মায়ের কোলজুড়ে আমি আসি৷ জন্মের সময়েই হয়তো আমার ভিতরে ঢুকে পড়েছিল তীব্রতা৷’ আমি কিছুদিন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছি৷ সেখানকার অব্যবস্থাপনা নিয়ে স্যারের সাথে অনেক কথাই বলেছি৷ স্যার ২০০৩ সালের ইদ সংখ্যা ইত্তেফাকে লিখলেন ‘পাকসার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি৷ স্যারকে অনুরোধ করে বলেছিলাম, আরো বড় করতে৷ স্যার কিছুটা বড় করে পরের বইমেলায় প্রকাশ করেন৷ স্যার চৈত্রের তীব্র দাবদাহ দেখতে চাইতেন, পছন্দ করতেন পদ্মার চরে জ্যোৎস্না দেখতে, তীব্র মিষ্টতার বালুশা খেতেও পছন্দ করতেন৷ ছোটমাছ খেতে পছন্দ করতেন৷ বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয় হতো ৭৭— বেশি কিছু নয়৷ কিন্তু গত ২০ টি বছর আপনি নেই৷ আপনি থাকলে বাংলাদেশ অবশ্যই আরো এগিয়ে যেতো, সমৃদ্ধ হতো— আমাদের বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য৷ এখন যে বুদ্ধিজীবী সংকট তীব্রতর হয়ে উঠেছে সেটা অন্তত থাকতো না৷ আপনার অনুপস্থিতি খুব বেশি অনুভূত হয়৷
গভীর শ্রদ্ধার সাথেই আপনাকে আজ স্মরণ করছি৷

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews