1. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  2. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  3. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

তারাই কি আমাদের বুদ্ধিজীবী?

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
এসময়ে যারা নিজেদের খুবই জনপ্রিয় ভাবছেন এবং দেশের সেরা চিন্তাবিদ মনে করছেন তাদের একটি তালিকা করতে পারি—
১। সলিমুল্লাহ খান
২। ফরহাদ মজহার
৩। পিনাকী ভট্টাচার্য
৪। আসিফ নজরুল
৫। মুফতি কাজী ইব্রাহীম
৬। তারেক মনোয়ার
৭। মিজানুর রহমান আযহারী
তারা দুটি কারণে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। প্রথমত— সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মানুভূতিকে ব্যবহার করে, দ্বিতীয়ত— সরকারকে সমালোচনা করে। তারা একদিকে প্রাচীন ইসলামী সংস্কৃতিকে সমর্থন করছেন আবার সরকারের কার্যক্রমকে সমালোচনা করছেন। এ দুটোই এ সময়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পছন্দ করছে। একজন বুদ্ধিজীবীর কাজ নয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতের সাথে নিজেদের গা ভাসিয়ে দিয়ে সেই মতকে জনপ্রিয় করে তোলা। তারা যদি নতুন চিন্তা ও চেতনা তৈরি করে সে পথে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারতেন তবেই না বলতে পারতাম যে, তারা প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। যেটা ইউরোপের বুদ্ধিজীবীগণ করেছেন এবং তাদের প্রচেষ্টায় ইউরোপ থেকে ধর্মান্ধতা দূর হয়ে তার স্থান দখল করেছে বিজ্ঞানমনস্কতা। তাতে বদলে গেছে ইউরোপ। সার্ত্রে একই সাথে খ্রিস্টান ধর্ম এবং সরকার প্রধান দ্য গলকে আক্রমণ করতেন। দুটোই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু তিনি সফল হন এবং মানুষের চেতনাগত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা আমাদের ঠেলে দিতে চাচ্ছেন ১৪শ বছর আগের জামানায় এবং উল্টোপথে চলতে উৎসাহিত করছেন জনগণকে।
আমাদের এসব বুদ্ধিজীবীদের দুটি শ্রেণি রয়েছে। একটি শ্রেণির সাথে সম্পর্ক রয়েছে পাশ্চাত্য শিক্ষার। আরেকটি শ্রেণি এসেছে স্রেফ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে– সলিমুল্লাহ খান, ফরহাদ মজহার, পিনাকী ভট্টাচার্য, আসিফ নজরুল বিভিন্ন সময়ে প্লাটফর্ম বদলেছেন। এক সময় তারা কিছুটা হলেও বাম ঘরানার প্রগতিপন্থী ছিলেন। সেখানে অনেক প্রতিযোগিতা এবং দেশের মানুষ সে পথকে সহজে গ্রহণ করবে না সেটাও তারা বুঝেছেন। তারা পল্টি মেরেছেন এবং নিজেদের এক সময়ের বিপরীত অবস্থানে উপস্থাপন করছেন সেই আশায় যাতে সহজে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা যায়। সেটা তারা পেরেছেন। ধরা যাক পিনাকী ভট্টাচার্যের কথা। তিনি একসময়ের দেশের হাতেগোনা কয়েকজন নাস্তিকের একজন। তিনি নিজে কখনোই ধর্ম বদলের কথা বা ধর্মে ফেরার কথা বলেননি। এমনকি নিজের নামও বদলাননি। বিয়ে করেছেন একজন মুসলিম নারীকে। ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা হারাম। তার জীবনের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্কও নেই। কিন্তু তিনি জনপ্রিয় ধারায় যেতে ইসলামকেই বেছে নিয়েছেন। আসিফ নজরুল একসময় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে ছিলেন এবং প্রগতির প্রথেই ছিলেন। তার ওই সময়ের লেখালেখিতেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফরহাদ মজহার এখন দরবেশ বাবা সেজেছেন। আমাদের সমাজে দরবেশরা অনেক প্রভাবশালী। তিনি মার্ক্সসিস্ট আবার ভাববাদী— মানে সোনার পাথরবাটি! একজন সত্যিকারের মার্ক্সবাদীকে অবশ্যম্ভাবী হতে হয় বস্তুবাদী। সলিমুল্লাহ খানকে নিয়ে তিন পর্বে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি। সেখানে তার বিভ্রান্তি, ভুল, অমানবিকতা নিয়ে বিস্তারিত বলেছি বলে আর লিখলাম না।
এর বাইরে ইসলামিস্ট ধারার বক্তারা দেশে বিস্তরই জনপ্রিয়। একসময় দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ছিলেন জনপ্রিয়তায় সেরা। এখন তাদের স্থান দখলে নিয়েছেন যারা তাদের প্রধান তিনজন হলেন– মুফতি কাজী ইব্রাহীম, তারেক মনোয়ার ও মিজানুর রহমান আযহারী। অন্যরা মামুনুল, তাহেরী, মাজহারী, হামজা বা জিহাদীর নামও বলতে পারেন। তবে আমার মনে হয় প্রথম তিনজনই বেশি এগিয়ে। তারা অনেক বিতর্কিতও বটে। তবে মামুনুল, তাহেরী, মাজহারী, হামজা বা জিহাদীরাও কম বিতর্কিত নন। যেমন মামুনুল দুই মুরিদের দুই বউ ভাগিয়ে বিয়ে না করেই ভোগ করেছেন। তাহেরী নাচাগানা করে মজলিশ মাতান, মাজহারী নিজের নামটিও নকল করেছেন আজহারীর কাছ থেকে, হামজা মুসলিমদের করোনা হলে কোরান মিথ্যা ঘোষণা দেন, জাহেদীও নাচাগানা করে আসর মাতান ইত্যাদি। কিন্তু কাজী ইব্রাহীমের মাটির নিচের সাত আসমান বা করোনার ফর্মূলা দেয়া, তারেক মনোয়ারের রকেটে চড়া বা ইংলিংশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা, আযহারীর হিমালয় দেখা বা নবীজিকে সিক্সপ্যাক বলা ইত্যাদি হাজারো অভিযোগ রয়েছে। তারা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মানুষকে ঠকিয়ে এবং মানুষের পকেট কেটে। তারাও মানুষকে পশ্চাৎপদ রাখতে বদ্ধ পরিকর। তারা মূলত নারী ও মানবতা বিরোধী। অন্য ধর্মকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ দাবী করতে চান যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। এতে সমাজ আরো পিছিয়ে যায় এবং মানুষ আধুনিক শিক্ষাবিমূখ হয়ে পড়ে।
এরপরও এখন দেশে উক্ত সাতজনই তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন একটি শ্রেণির মধ্যে এবং তারা সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ। এরা বহমান ধর্মত্বকে টিকিয়ে রেখে একটি আবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন। এমন ভাবনার সাথে কোন বুদ্ধিজীবীর ভাবনা কখনোই যায় না। বুদ্ধিজীবীর কাজই সমাকালীন সমাজভাবনার প্রতি অসন্তুষ্ট থেকে নাগরিকদের মধ্যে অগ্রসর ভাবনা গড়ে তোলা। সরকার ও রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে বা প্রগতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে সেই সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবশ্যই বুদ্ধিজীবীরা কথা বলবেন। এক্ষেত্রে তারা কেবল একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে যেতেই সরকারের সমালোচনা করছেন। তবুও এটা প্রয়োজন। কিন্তু তাদের মূল যে কাজ তা হল নাগরিকদের চেতনার গুণগত পরিবর্তন আনা সেটা তারা একদমই করছেন না। উল্টো তারা নিজেকে আরো পশ্চাৎপদ চেতনার দাবী করে জনগণকেও নিতে চাচ্ছেন পেছনের দিকে। এটা কোন বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব হতে পারে না। তাই বলতেই হবে, এরা কেউই আমাদের বুদ্ধিজীবী নন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews