হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা কারাগারের চেয়েও বেশী কষ্টকর।তার কারণ আসামী রোগীদেরকে পায়ে ডান্ডা বেরী আর হাতে হাতকড়া পড়িয়ে ফেলে রাখা হয় হাসপাতালের বিছানায়।নড়াচড়া করার মত কোন অবস্থা থাকে না। তাই সারাদিন কাটিয়েছি বিছানায় শুয়ে।অনেক কষ্ট করে একটা প্যাড আর কলম যোগাড় করি।বিছানায় শুয়ে শুয়ে বেশ কিছু কবিতাও লিখেছিলাম। বেডের পাশে পাহারায় থাকে দশজন কারারক্ষী ও দশজন পুলিশ। এর মধ্যে একজন পুলিশ পাহারাদার কবির সঙ্গেও পরিচয় হয় যিনি নিজেও কবি।ঢাকার বেশ কিছু কবির সঙ্গে তার ওঠাবসা।ভদ্রলোকের সাথে আড্ডা দিয়ে মোটামুটি ভালো সময় কেটে গেলো।ডাক্তাররা প্রায় প্রতিদিনই পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন আমার মানসিক রোগের বিষয়ে।প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা ঘোষণা দেন, তিনি দীর্ঘ দিন যাবত সিজোয়েফেক্টিভ ডিজোর্ডার নামক মানসিক রোগে ভুগিতেছিলেন।ডাক্তারের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও সার্টিফিকেট দেয়ার পর আমাকে আবার পাঠিয়ে দেয়া হয় কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।জেলখানার দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার আমাকে জেলের বিশেষ পাগলা গারদ জলসিড়িতে রাখার আদেশ দেন।ফলে আমার চিকিৎসা পরবর্তী লকাপ হয় জলসিড়ি। কর্তব্যরত একজন কয়েদী আমাকে বললেন,আপনি এখানে আপাতত কিছুদিন থাকেন। এই কয়েকদিন আপনার শারীরিক পরিস্থিতি দেখা হবে।যদি সুস্থতা দেখা যায় তবে আবার আগের ওয়ার্ডে ট্রান্সফার করে দেবে।প্রথমে রাখা হলো, জলসিড়ি ১ এ।এই ওয়ার্ডের পাগলরা অধিকাংশই অসুস্থ।কিছু পাগলের পাগলামির পরিমাণ এতোই বেশী যে এখানে টিকে থাকা খুবই মুশকিল।আমি ইনচার্জকে জানালাম আমাকে আমার ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিন।এখানে থাকলে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়বো।ইনচার্জ আমার রিকোয়েস্টে আমাকে জলসিড়ি ১ থেকে জলসিড়ি ২ এ পাঠিয়ে দিলেন।এখানকার পাগলরা কিছুটা সুস্থ।কিন্তু এই ওয়ার্ডেও চিকিৎসার নামে ধান্দাবাজি।আমি ওয়ার্ডে যাওয়ার সাথে সাথে একজন বন্দি আমার কাছে খরচ দাবি করলেন।আমি বললাম আমার পরিবারের লোকজন এখন পর্যন্ত কোন খরচ দেয়নি।যদি খরচ দেয় তবে আমি দিতে পারবো।
অন্যান্য ওয়ার্ডের চেয়ে জলসিড়ির খাবার ও থাকার মান ভালো।তাই এখানে বন্দীরা খরচ দিয়ে থাকার চেষ্টা করেন।কিন্তু সরকারি নিয়মে বন্দীদের কোন প্রকার খরচ দেয়ার নিয়ম নেই।জেলের ভেতরে নিরীহ বন্দীদের ওপর কিছু ধান্দাবাজ বন্দীদের এই জুলুম কার্যক্রম চলে আসছে বহুদিন ধরে। (চলবে)