যমুনা ভবনের যে ওয়ার্ডে (যমুনা ৬/১)আমি থাকতাম সে ওয়ার্ডের অধিকাংশই ছিল মাদক মামলার আসামী।
জলসিড়ি ওয়ার্ড থেকে যমুনা ওয়ার্ডে আবার ট্রান্সফার হবার পর গিয়ে দেখলাম ওয়ার্ডের ইনচার্জ পরিবর্তন হয়েছে। এবার ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে হাজতি জামাল ভুঁইয়াকে আর সিইও ম্যাট হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন বিডিআর কয়েদী বন্দীকে। পিলখানা হত্যা মামলার আসামী হিসেবে অনেক বিডিআর সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।এই সমস্ত আসামীরা জেলখানায় বিডিআর বন্দী হিসেবে পরিচিত। জেলখানার অধিকাংশ কার্যক্রম বিডিআর বন্দীদের হাতে নিয়ন্ত্রিত এবং তারা জেলখানায় সামরিক আইন অনুযায়ী দীর্ঘদিন বসবাস ও চলাফেরা করে আসছে। যাই হোক আমার ওয়ার্ডের ব্যাপারে বলা যাক। এই ওয়ার্ডে যেহেতু বেশিরভাগ মাদক মামলার আসামী সেহেতু এদের মাঝে শিক্ষার হারও কম।অধিকাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণীর উর্ধ্বে নয়।আবার কেউ কেউ একদম নিরক্ষর।ফলে এই সমস্ত আসামীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।তবুও আমি নিরুপায়।তার কারণ এখানে একটু ভালোভাবে চলতে গেলে চাই অর্থ।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় একজন কারারক্ষী বলছিলেন,”জেলখানায় থাইকা মজা আছে মামা যদি ট্যাকা থাকে”। আর যদি টাকা না থাকে তবে জেলটা হবে আপনার জন্য জাহান্নাম।যেহেতু আমার পরিবারের কেউ আমাকে ঠিকমতো দেখতে আসতো না এবং কোন খরচ দিয়ে যেতো না তাই আমার জন্যেও প্রায় জেলখানা জাহান্নাম সমতুল্য হয়ে পড়ে।আমি ওয়ার্ডে কোন রকম খরচ দিতাম না।তাই ইনচার্জ দুই একটা কথা বললেও সেটা মুখ বুজে চুপচাপ শুনে যেতে হতো।কিন্তু তারপরও তো একটা পথ বের করা লাগে। ইনচার্জ জামাল ভূঁইয়ার কারণে আমি আবার ওয়ার্ডের ইমামতির দায়িত্ব পেয়েছিলাম।ওয়ার্ড ইমামদের একটা সুবিধা হলো তাদের কোন ওয়ার্ড খরচ দিতে হয় না।আমিও এই সুবিধাটা পেলাম। কিন্তু জেলে সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো এখানকার সময়গুলো কিভাবে ব্যয় করা যায় সে চিন্তা নিয়ে।আমিও খুঁজতে লাগলাম কিভাবে জেলের সময়গুলোকে কাজে লাগানো যায়।জেলখানায় বেশ কিছু সামাজিক কার্যক্রম চালু আছে।এর মধ্যে অন্যতম হলো, ১/কারা শিক্ষা কার্যক্রম ২/কেন্দ্রীয় মক্তব ৩/মননচর্চা কেন্দ্র ও ৪/গ্রীন প্রজেক্ট।
এছাড়াও কারাগারে বই পড়ার জন্যেও আছে কারা লাইব্রেরী।আমি সময় কাটানোর জন্য কারা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে গেলাম।এই কার্যক্রমের মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে যে সমস্ত কারাবন্দী একদম নিরক্ষর তাদেরকে শিক্ষাদান করা। আমি আমার ভবন যমুনার ৬ তলায় প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ক্লাস নিতাম।এছাড়া বাকি সময় লাইব্রেরীতে বই পড়ে কাটাতাম। কারা লাইব্রেরী ছাড়াও মননচর্চা ও কারা শিক্ষা কার্যক্রমেরও ছিল ছোট দুটি লাইব্রেরী। এই সমস্ত লাইব্রেরীতে বই পড়েও অনেক দিন সময় কাটিয়েছি। (চলবে)