পুরো রমজান মাস ও ঈদ জেলখানায় কাটিয়ে দিলাম। জামিনের কোন সাড়া – শব্দ নেই। জেলবন্দী এক নেতা বড় ভাই বললেন তিনি আমার মামলার বিষয়টি দেখবেন। আমি সেই বড় ভাইয়ের আশায় থাকতে থাকতে একদিন হঠাৎ বেল এলো আমার চকবাজার থানার মূল মামলা – ৩২(১০)২১ নং মামলাটির জামিন হয়েছে। কিন্তু যেহেতু রমনা ও পল্টন থানায় আরো দুটি মামলা আছে সেহেতু আমি কারাগারের বাহিরে যেতে পারবো না। তাই প্রধান ফটকে গিয়ে মূল মামলা খাতা থেকে কাটিয়ে আসলাম। সেদিন যেহেতু ফোন কল ছিল তাই ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম আমার মূল মামলার বেল এসেছে। ছোট ভাই গেটেই দাড়িয়ে ছিল। আমার যে আরো দুটি মামলা আছে সেটা জানে না।বললাম আরো দুই মামলার জামিন নিয়ে উকিলের সঙ্গে কথা বলতে। ছোট ভাই সেদিন চলে গেলো। প্রায় নয় মাস হয়ে গেলো আমি কারাবন্দী। মূল মামলার জামিন হওয়া সত্বেও আমি বের হতে পারছি না। আমার নামে মোট তিন তিনটি মামলা। আমি কোন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী নই। রাজনীতি সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধ্যান – ধারণাও নেই। অথচ আমার নামে তিনটি মামলা। ধারা অনুযায়ী সবগুলো রাজনৈতিক। এই দীর্ঘ নয় মাসে আমি কারাবন্দী সমস্ত রাজনৈতিক মামলার আসামীদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি।প্রত্যেকের মামলার সমস্ত খরচ রাজনৈতিক দলগুলো বহন করছে। কিন্তু আমার মামলার জামিন হয়েছে সম্পূর্ণ পারিবারিক খরচে। তবে আমাকে কি মনে করে পুলিশ সরকারবাদী তথাকথিত বিএনপি – জামাতের মামলা দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে কারাবন্দী করে রাখলো?এই প্রশ্ন এতোদিন শুধু আমার মাথায় ঘুরেছে। এখন যারা আমার লেখা পড়ছেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি করছি। আমার বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্বে তেমন কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু কারাগারে গিয়ে বুঝতে পারলাম যে এদেশের সরকারী আইন ব্যবস্থা খুবই সংকটময় এবং ভয়াবহ। ক্ষমতাবানরা যাকে খুশি তাকে ইচ্ছে করলে মামলা দিয়ে মাসের পর মাস আর বছরের পর ফেলে রাখতে পারেন। তাতে রাষ্ট্র বা সরকারের কিচ্ছু আসে যায় না। আমার মামলার বাদী হলো পুলিশ। এখানে বোঝা গেলো যে পুলিশের ইচ্ছে হয়েছে পুলিশ মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। কে দোষী বা কে নির্দোষ সেটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।( চলবে )