পরদিন সকালে উঠে হেঁটে আসার পথে মানালির পথঘাট ভালো করে দেখে এলাম।ফেরার পথে চা দোকানীর সাথে অনেক আলাপ হলো। মানালির মানুষ জন সম্পর্কে, আবহাওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় কথা বলে জানতে পেলাম অনেক কিছু। এরপর রুমে এসে স্নান ও সকালের খাবার খেয়ে বেরিয়ে গেলাম। প্রথমেই গেলাম হিরিম্বা দেবীর মন্দিরে। মহাভারতের পঞ্চ পান্ডবের দ্বিতীয় পান্ডব ভীমের স্ত্রী হিরিম্বা দেবীর নামে এ মন্দির। জানা যায় তিনি এ মন্দিরে নিয়মিত পূজার্চনা করতেন। এই মন্দিরটি কাঠ ও পাথরের তৈরি এক অপূর্ব স্থাপনা। বড়ো বড়ো গাছপালায় ঘেরা অসাধারণ নৈসর্গিক পরিবেশে অবস্থিত মন্দিরে এসে মনটা একেবারে অন্যরকম হয়ে যায়।
পাশেই বনবিভাগের একটা উদ্যান আছে। সেখানে আছে বড় বড় পাইন ও নাম না জানা গাছপালা। এখানে ঢুকে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ছবি উঠানো হলো। এটা ভাগ্নি,ভাগ্নেবউয়ের আবদার,অবশ্য আমি এসব গায়ে চাপিনি।
সেখান থেকে গেলাম ক্লাব হাউস। সেখানেও মার্কেট আছে।তবে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেশি মনে হয়। ক্লাব হাউজের ভিতর দিয়ে নদীর পাড়ে যাওয়া যায়। সেখানে পাহাড় থেকে জল গড়িয়ে পাথরের উপর দিয়ে দ্রুত বয়ে যাচ্ছিল। তেমনি এক পাথরের উপর বসে সেই নদীর কলতান শুনতে খুব ভালো লাগলো।
এরপর পায়ে হেঁটে মল রোড হয়ে আর একটা বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেলাম। এটি আগেরটার চেয়েও সুন্দর। অনেক বিশাল বিশাল গাছপালার মধ্যে হারিয়ে গেলাম। ফিরে আসতে মন চাইছিল না।তবুও ফিরতে হবে পেটের টানে। মল রোডেই খেয়ে নিলাম। দক্ষিণ ভারতীয় খাবার ধোসা খেলাম।খুব যে সুস্বাদু ছিল তা বলতে পারছি না।
খাওয়ার পরে মল রোডে কিছুক্ষণ ঘুরলাম, কিছু কেনাকাটা করলাম। প্রতিটি পাহাড়ি শহরেই একটা করে মল রোড আছে। দার্জিলিং, সিমলা এবং মানালি সবখানে মল রোড আছে। এসব রাস্তায় কোন যানবাহন চলে না।পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়।রাস্তা অনেক প্রসস্ত। সবখানেই দোকানপাট আছে, আছে উৎসবের আবহ। দার্জিলিং এর মল রোড তো মন ভালো করার জায়গা। আর মানালির মল রোডের বাজার সদাই মনে হয় বেশ আকর্ষণীয়। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি এবং কিছু কেনাকাটা সেরে ঘরে ফিরে আসতে প্রায় সন্ধ্যা।
পরদিন ফেরা,প্রায় ছয়শো কিলোমিটার পাহাড়ি পথে যাত্রা।তাই ড্রাইভারকে প্রস্তাব দিলাম তাড়াতাড়ি বের হবার। হোটেলের বেয়ারাকে বলে রাখলাম। সেরাতে খাওয়া দাওয়া কিছুটা ভালো হলো। মাটন ছাড়াও শেষপাতে দিল গুলাবজামুন(গোলাপজাম)। আমি সাধারণত মিষ্টি খাই না।কিন্তু ভালো লাগায় দুটো মিষ্টিই খেয়ে নিই।অত:পর
পরদিন ভোরে যাত্রা হওয়ায় দ্রুতই ঘুমাতে যাই।
সময়মতো ঘুম ভেঙে তৈরি হই।গাড়িও প্রস্তুত, হোটেল বেয়ারা সেই ভোরেই আমাদের ব্রেকফাস্ট প্যাকেট করে দেয়। আমরা ভোর চারটায় রওয়ানা দিই।ফেরার পথে গাড়ি পাঞ্জাব প্রদেশ হয়ে আসে।পাঞ্জাবের একটা শহরের মাঝ দিয়ে গাড়ি যাবার সময় একটা ট্রলি আমাদের গাড়ির পিছনের বাম্পারে আঘাত করে। এতে আমরা তেমন আঘাত না পেলেও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সেই ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি নিয়েই দিল্লির উপকন্ঠে আসার পর অন্য একটা গাড়িতে আমাদের বদলী করে দিয়ে সনু আহত গাড়ি নিয়ে বিদায় নেয়।আমরা সন্ধ্যার দিকে সুস্থ শরীরে নয়দায় ফিরে আসি।