আমরা সবাই কমবেশি দ্বিচারিতায় ভুগি।আমরা একই মানুষ একদিকে যেমন ভালো কাজ করি,তেমনি নিজের অজান্তে বা অবহেলায় কিছু কিছু মন্দ কাজের সাথেও নিজেকে যুক্ত করি।আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের অবস্থাও
হয়েছে তাই।লিখছি মাইলস্টোন ট্রাজেডির কিছু অন্ধকার ও কিছু আলোকিত দিক সম্পর্কে।
অন্ধকার দিক বলতে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে তা হলো কিছু মানুষের অনাবশ্যক কৌতুহল বা সাংবাদিক হয়ে ওঠার চেষ্টা। কেউ কেউ উদ্ধারের কাজে এগিয়ে গেছে,
আর বেশিরভাগ মোবাইলে ভিডিও করতে গিয়ে যে জ্যাম
তৈরি করেছে, যার জন্য সময়মতো অনেককে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে না পারায় পথিমধ্যে মারা গেছে।
আর একটা খবর দেখা যাচ্ছে, রিকশা ও সি এন্ড জি ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এমনকি খাবার জল ও ডাব নাকি অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। এরকম অবস্থায় যেখানে বিনামূল্যে জল সরবরাহ করা উচিত, সেখানে সুযোগসন্ধানী এসব ব্যক্তির কর্মকাণ্ড শুধু জীবনহানি বাড়ায়নি, বাইরে আমাদের দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয়েছে ব্যাপকভাবে।
এরমাঝে কিছু ভালো হয়নি তা নয়।অনেকে নি:স্বার্থভাবে
উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছেন, রক্ত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামটি মাহরীন চৌধুরী। বাড়ি নিলফামারীর জলঢাকায়।যিনি ১৭ বছর যাবৎ মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তিনি যে শাখার দায়িত্বে ছিলেন সেই শাখা বিমান দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। তিনি নিজে আগুনে দগ্ধ হয়েও অনেক ছাত্র ছাত্রীদের উদ্ধার করেন। এতে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হলে প্রথমে তাঁকে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে এবং পরে জাতীয় বার্ণ ইন্সটিটিউট নেয়া হয়।সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি ইচ্ছে করলে নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারতেন। এতে হয়তো তাঁর নিজের জীবন রক্ষা পেতো।কিন্তু তিনি তা না করে একজন শিক্ষক বা মানুষের যা করা উচিত তা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। এটা এ সময়ের একটা বড়ো ঘটনা। যখন চারদিকে শুধু অন্যায়, অবিচার, আবিলতা দেখি,তখন মাহরীন চৌধুরীর মতো কিছু মানুষ তাঁদের কর্মকাণ্ড দিয়ে মানবাধিকার পতাকা উঁচিয়ে ধরে জাতির সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।তাঁকে স্যালুট জানাই।