ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় একটি জায়গা নিয়ে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও এক আইনজীবী জায়গাটি নিজেদের বলে দাবি করছে। অন্যদিকে, পৌরসভা চাইছে জায়গাটি বন্দোবস্ত নিতে। এ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জানা গেছে, আখাউড়া পৌর এলাকায় অবস্থিত দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে জায়গাটির অবস্থান। সেখানে অ্যাডভোকেট ইয়াছিন খান সুপার মার্কেট নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। বছর দু’য়েক আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই মার্কেটটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালে পৌর কর্তৃপক্ষ জায়গাটি বাণিজ্যিক লিজ নিতে রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে সেখানে পৌরসভার একটি গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এর পাশের একটি জায়গায় গত সপ্তাহে কিন্ডারগার্টেনের সাইনবোর্ড টানায় পৌরসভা। গতকাল মঙ্গলবার সেই সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি খালি জায়গার চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে দেন অ্যাডভোকেট ইয়াছিন খানের লোকজন। খবর পেয়ে পৌরসভার পক্ষের লোকজন সেই বেড়া সরিয়ে ফেলে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এলাকার লোকজন জানান, প্রায় তিন যুগ আগেই ওই জায়গায় প্রথমে বাড়ি নির্মাণ করেন পৌর এলাকার তারাগণের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট ইয়াছিন খান। তবে জায়গাটি নিজেদের বলে দাবি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্টরা সেখানে অভিযান চালাতে ব্যর্থ হন। কৌশলে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পরে গড়ে তোলা হয় অ্যাডভোকেট ইয়াছিন খান সুপার মার্কেট। আইনজীবী ইয়াছিন বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা এবং তার এক ছেলে সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় উচ্ছেদ করতে গিয়ে বারবারই বাধার মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদেরকে। এ অবস্থায় ওয়ান ইলেভেনের সময় মার্কেটের কিছু অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বছর-দুয়েক আগে পুরো মার্কেটটিই গুঁড়িয়ে দেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জায়গাটিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নামে একটি সাইনবোর্ড টানানো। সেখানে লেখা আছে, জমির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। এখানে সর্বসাধারণের অনুপ্রবেশ নিষেধ। আনুমানিক ৩০ শতাংশের মতো ওই জায়গার চারপাশ খোলা। ওই জায়গাতে বসেছিলেন আইনজীবী ইয়াছিন খানের স্ত্রী ও ছেলে। কথা হলে তারা জানান, তাদের দেওয়া টিনের বেড়া ভেঙে ফেলায় সেগুলো নিতে বসে আছেন। ভ্যানগাড়ি দিয়ে ভাঙা টিন তারা নিয়ে যাবেন।
ইয়াছিন খানের ছেলে মো. শাহরিয়ার বলেন, এ জায়গাতে আমার জন্ম। জায়গাটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। রেলওয়ে সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের মামলা আছে। তবে ৩৪ বছরে আমরা একটি মামলাতেও হারিনি। এ জায়গাতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছেন আদালত। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সাত বছর ধরে বন্দোবস্ত দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তারপরও এ জায়গা নিয়ে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে।
আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, রেলওয়ের এ জায়গাটি কোনো কাজে আসছে না। পৌরসভাকে বরাদ্দ দেওয়া হলে রেলওয়ের আয় বাড়বে। পৌরসভা এখানে একটি স্কুল করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। পৌরসভাকে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের পথে।
তিনি বলেন, অ্যাডভোকেট ইয়াছিন জামায়াত ও বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে প্রকাশ্যে জড়িত ছিলেন। ওনার ছেলে সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীতে আছেন। তিনি এসবের প্রভাব খাটিয়ে রেলওয়ের খালি জায়গায় জোর করে বেড়া দিয়ে দেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট