মার্কিন প্রতিনিধি সভায় ‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশে জেনোসাইডের স্বীকৃতি’ শীর্ষক প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)। সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই উদ্যোগ বিশ্বের যেকোনো আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পেশ করা এই প্রথম ঘটনা। আমরা রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্নার এই দ্বি-দলীয় প্রস্তাব উদ্যোগের প্রশংসা করি।
বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি প্রবাসীদের তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের ওপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বানও জানানো হয়।
যাতে করে অন্যান্য দেশগুলোও তা অনুসরণ করে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য এ উদ্যোগ শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) হলো বিশেষজ্ঞ, সক্রিয় কর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, যা আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য দায়মুক্তির সমাধান, অত্যাচারের শিকার ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইসিএসএফ বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। ওই প্রস্তাবে পাকিস্তানকে তার জেনোসাইডের জন্য বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার এবং বেঁচে থাকা অপরাধী ও দোসরদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার রাতে মার্কিন প্রতিনিধিসভায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট ও ভারতীয়-আমেরিকান ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্না। প্রস্তাবে জেনোসাইডের সংজ্ঞার আলোকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত নৃশংস ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
একই সঙ্গে তৎকালীন মার্কিন কূটনীতিকদের একাধিক তারবার্তা ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত পরিস্থিতিকে জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট এক টুইট বার্তায় ওই প্রস্তাবের বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই জেনোসাইডের শিকার লাখ লাখ মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলতে দেব না। জেনোসাইডের স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে শক্তিশালী করে, আমাদের সহকর্মী আমেরিকানদের শিক্ষিত করে এবং অপরাধীদের বার্তা দেয় যে এ ধরনের অপরাধ সহ্য করা বা ভুলে যাওয়া হবে না। ’
কংগ্রেসম্যান রো খান্না বলেন, ‘স্টিভ শ্যাবটের সঙ্গে মিলে ১৯৭১ সালের বাঙালি জেনোসাইড স্মরণে প্রথম প্রস্তাব আনতে পেরে আমি গর্বিত। ওই জেনোসাইডে লাখ লাখ বাঙালি ও হিন্দু নিহত বা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি আমাদের সময়ে সবচেয়ে আড়াল হয়ে যাওয়া জেনোসাইডগুলোর অন্যতম। ’
মার্কিন প্রতিনিধিসভায় উত্থাপিত প্রস্তাবের পটভূমিতে বলা হয়েছে, একাত্তরের জেনোসাইডের স্বীকৃতি না হওয়া এখনো ওই জেনোসাইডের শিকার ব্যক্তিদের জন্য বড় ক্ষত হয়ে আছে।
‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে জেনোসাইডের স্বীকৃতি’ শীর্ষক ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী জেনোসাইড চালিয়েছে। প্রস্তাবে ওই জেনোসাইডের নিন্দা জানানো হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর যে সহিংসতা চালিয়েছে, তাকে জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে। এ ছাড়া যেসব অপরাধী এখনো বেঁচে আছে, তাদের বিচার করার জন্যও প্রস্তাবটিতে আহ্বান জানানো হয়।
প্রস্তাবে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে ১৯৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সহিংসতার নিন্দা জানানো হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিদ্বেষ-বিতৃষ্ণার কথাও রয়েছে প্রস্তাবটিতে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের জয়লাভ এবং পরে ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে তাঁর আলোচনা ব্যর্থ হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রস্তাবে। সেখানে আরো বলা হয়েছে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার জেনারেলদের বলেছিলেন, ‘৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করো এবং বাকিরা আমাদের হাত চাটবে। ’ প্রস্তাবের পটভূমিতে আরো বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে এবং সামরিক বাহিনী ও উগ্র ইসলামিক দলের সহায়তায় অপারেশন সার্চলাইট নামে অভিযান শুরু করে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট