গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী জিয়াউর রহমানের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়। সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে জিয়াউর রহমান ডিভিশন না দিয়ে ফেলে রাখে। ’
আজ রবিবার সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমানের ওপর আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে শোক প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা শেষে তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। পরে এক মিনিট নীরবতা ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের মতো খালেদা জিয়াও একইভাবে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছিল। রওশন এরশাদ, তিনি তো মাস্টার্স ডিগ্রি পাস। প্যানাল কোডে আছে, মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হলে ডিভিশন দিতে হয়। সাধারণ কয়েদিদের সাথে তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল। একদম সাধারণ কয়েদিদের সাথে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তো তাও খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলে বাড়ি থাকার নির্বাহী আদেশে তার শাস্তিপ্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, তিনি একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করেনি। বিমান বাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে তার নামে একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়েছিল। কোনো ডিভিশন না দিয়ে মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে তাকে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। এইভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে। জাতীয় পার্টি বোধ হয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে এখন। ’
প্রয়াত নেতাদের আদর্শ মাথায় রেখে দল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। সাজেদা চৌধুরীরর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতাকর্মীরা এই সংগঠনের হাল ধরেছে বলেই চরম দুঃসময়ে এই সংগঠন দিক হারায়নি, নীতি আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছে। ’
সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগে যে অবদান রেখে গেছেন তা ভোলার নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন তিনি। আশা করি, আমাদের যারা নেতারা আছেন তারা প্রয়াত নেতার আদর্শটা মাথায় রেখেই এগিয়ে যাবেন। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন যেমন তেমন মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। স্বাধীনতার সংগ্রামের পাশাপাশি আমাদের জাতীয় জীবনেও অবদান রয়েছে তার। ’
‘১৫ আগস্টের পর তো আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাজেদ চৌধুরীও এর শিকার। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে। তার অপারেশন হয়েছিল, গায়ে জ্বর ছিল। এই অবস্থায় জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। মতিয়া চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করে। তিনিও অসুস্থ ছিলেন। তাদেরকে ডিভিশনও দেয়নি। সাধারণ কয়েদির মতো জেলে ফেলে রাখে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে সাজেদা চৌধুরী সব সময় সামনে থাকতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা তাকে ফুফু বলে ডাকতাম। ’
তিনি আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আইন করেছিল পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারো নাম দেওয়া যাবে না। আমাদের দলের মধ্যেও কারো কারো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। তিনি কিন্তু এ ব্যাপারে অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান, তাই এই আইন করেছিল। ’
‘আমি দেশে আসার পর তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে, এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন। ’
প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তিচুক্তি করি। এক হাজার ৮০০ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। কোথাও এটা দেখা যায় না। আমার প্রত্যেকটি কাজে সাজেদা চৌধুরী সহযোগিতা করতেন। তিনি একজন স্বাধীনতাসংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাজেদা চৌধুরীকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে হারাল। একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে, যেতেই হবে। হয়তো আমিও একদিন চলে যাব। তবে যে যেটা করেছে সেটা স্মরণ করতেই হবে। ’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট